বিলিভ ইট অর নট

কুখ্যাত ডাকাত জর্জের করুণ পরিণতি

এই বিগ নোস জর্জের প্রকৃত নাম জর্জ ফ্রান্সিস ওয়ার্ডেন। তিনি ছিলেন রাসলার, সোজা বাংলায় গরু-ঘোড়া চোর। ছবি: সংগৃহীত

১৯৫০ সালের মে। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক রলিনস ন্যাশনাল ব্যাংকে নির্মাণ কাজ করছিলেন। সে সময় তারা খুঁজে পান একটি হুইস্কির ব্যারেল। ভেতরে হাড়-গোড়ে ভর্তি। আছে মানুষের মাথার খুলি, তবে উপরের দিকটা নেই। সবজি জাতীয় কী কী যেন আছে বোতলে, আর আছে এক জোড়া জুতো। জুতোর চামড়াগুলো দেখে মনে হলো যেন মানুষের চামড়া এগুলো! তারপরই স্মৃতির অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়া সেই বিগ নোস বা লম্বা নাকওয়ালা জর্জের কথা আবার মনে পড়তে থাকলো মানুষের। 

এই বিগ নোস জর্জের প্রকৃত নাম জর্জ ফ্রান্সিস ওয়ার্ডেন। তিনি ছিলেন রাসলার, সোজা বাংলায় গরু-ঘোড়া চোর। সে সময়টা আমেরিকার পশ্চিম অঞ্চলের জন্য অস্থির এক সময়, পশ্চিম তখন বুনো পশ্চিম। গরু, ঘোড়া চুরি, ট্রেন ও ওয়াগনে ডাকাতি, যাত্রীদের টাকা ও স্বর্ণ ছিনিয়ে নেওয়াই ছিলো জর্জ ও তার গ্যাংয়ের পেশা। 

১৮৭৮ সালে এমনই এক দিনে তারা একটি ট্রেনে দুর্ধর্ষ ডাকাতি করে। ট্রেন কোম্পানির একজন সেকশন কর্মচারী তদন্তের জন্য তাদের চলার পথ ধরে অনুসরণ করেন। শেষমেশ তার কৌশলের কাছে পরাস্ত হয় সেই গ্যাং। ট্রেন থামে, লুটের মাল ফিরে আসে ট্রেনেই। কোনো হতাহত বা সংঘাত ছাড়াই জর্জকে কব্জা করে ফেলেন সেই কর্মচারী। 

বিচারে জর্জের ফাঁসি কার্যকরের আদেশ হয় ১৮৮১ সালের ২ এপ্রিল। তবে এত দ্রুত ফাঁসির দড়িতে ঝুলে প্রাণ বিসর্জনের কোনো ইচ্ছেই ছিলো না জর্জের। তাই তিনি সুযোগ খুঁজছিলেন পালানোর। মার্চের ২২ তারিখ পকেটে থাকা ছুরি ও পাথর ব্যবহার করে বাহুর শিকলগুলো কাটতে সক্ষম হন তিনি। তারপর তিনি লুকিয়ে পড়েন বাথরুমে। এরপর জেলার রবার্ট র‍্যানকিন এদিকে এলে ওপর থেকে মাথায় শেকলের আঘাতে আহত করেন জর্জ। তবে র‍্যানকিনও ছাড়ার পাত্র নন। চিৎকার করে স্ত্রী রোজাকে ডাকেন। তারপর বন্দুক তাক করে রোজা জর্জকে নিয়ে আসেন জেলে। 

এই খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। বিশ্রামে থাকা র‍্যানকিন খেয়াল করেন একদল লোক পিস্তল হাতে জেলে ঢুকে পড়ছে। র‍্যানকিনের কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে তারা সেল থেকে বের করে নিয়ে যায় জর্জ প্যারোটকে। 

তারপর যা ঘটে তা ছিলো জর্জের বিস্ময় সীমারও বাইরে৷ এই লোকেরা ছিলেন শহরেরই মানুষ। ২ শতাধিক উত্তেজিত মানুষের দল মূলত জর্জকে বের করে আনে লিঞ্চিং এর জন্য! লিঞ্চিং হলো বিচারবহির্ভূতভাবে উত্তেজিত জনতার উপস্থিতিতে কাউকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া। জর্জকে স্থানীয় টেলিগ্রাফ পোল থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে জনতা।

কয়েক ঘণ্টা পর মরদেহটি নামিয়ে কবর দিতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু লম্বা নাকের ফলে কফিনের ডালা বন্ধ করতে ঝামেলা হচ্ছিলো। এর ভেতরই ডা. থমাস ম্যাঘি ও ডা. জন অসবোর্ন লাশটি চুরি করে ফেলেন! 

ম্যাঘির উদ্দেশ্য ছিলো গবেষণা আর অসবোর্নের ছিলো প্রতিশোধের বাসনা। ম্যাঘি চেয়েছিলেন জর্জের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করতে, দেখতে চেয়েছিলেন কোন কোন উপাদান তাকে প্ররোচিত করেছে এমন অপরাধে জড়াতে৷ কিন্তু এর পাশাপাশি অসবোর্ন করেন সেই অদ্ভুত কাজ। স্থানীয় ট্যানারিতে পাঠান জর্জের বুক ও উরুর চামড়া। নির্দেশ দেন বুকের চামড়া দিয়ে মেডিসিন ব্যাগ ও উরুর চামড়া দিয়ে একজোড়া জুতো বানিয়ে দিতে! এর নেপথ্যে ছিলো অতীত হয়রানি। জর্জ ও তার গ্যাংয়ের ডাকাতিচেষ্টার কবলে পড়া এক ট্রেনে ছিলেন অসবোর্ন, এজন্য মিস করে ফেলেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্টি! 

গবেষণার সময় ডা. ম্যাঘি জর্জের খুলির উপরের অংশ সেখানকার প্রথম নারী মেডিকেল শিক্ষার্থী লিলিয়ান হেথকে দিয়ে দেন কলমদানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য! তবে এটা তিনি ব্যবহার করতেন ছাইদানি হিসেবে! 

১৯৫০ এ শ্রমিকেরা সেই হুইস্কির ব্যারেল খুঁজে পাওয়ার পর বার্ধক্যে উপনীত ডা. লিলিয়ান এসব জর্জের বলে নিশ্চিত করেন। ডিএনএ টেস্টও তাই বলে। অসবোর্ন এই জুতো এক -দুবার পরেছিলেন, পরে ব্যারেলে ভরে খুলির বাকি অংশ আর এই জুতো সংরক্ষণে রাখা হয়েছিলো কিছুকাল। জর্জের দেহাবশেষ ডা. ম্যাঘির বাড়ির উঠোনে কবর দেওয়া হয়। ব্যারেলটিও একসময় কোনোভাবে ফেলে দেওয়া হয়েছিলো। 

বর্তমানে এই খুলির অংশ, জুতো স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত আছে রলিনস এর কার্বন কান্ট্রি জাদুঘরে। এছাড়া মৃত্যুর পর বানানো তার কানবিহীন ডেথ মাস্ক, কারাগারে বাঁধার শিকল সেসবও আছে এই জাদুঘরে। 

 

তথ্যসূত্র: বিলিভ ইট অন নট
গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments

The Daily Star  | English

UK-based lawyer files complaint against Hasina, her cabinet with ICC

A UK-based lawyer has filed a complaint against former prime minister Sheikh Hasina, her cabinet and associated state actors with the Hague-based International Criminal Court, accusing them crimes against humanity

16m ago