লবণাক্ততা বাড়ছে পানিতে, বৃষ্টির অপেক্ষায় চট্টগ্রাম ওয়াসা

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে বাড়ছে লবণাক্ততা। চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎসস্থল হালদা নদীতে জোয়ারের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করায় বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

বন্দর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহকৃত পানিতে লবণাক্ততা বাড়ায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ওয়াসার পানি। সংকট সমাধানে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ অন্যান্য শোধনাগার থেকে পানি নিয়ে ব্লেন্ডিংয়ের পর পানি সরবরাহ করছে। শুষ্ক মৌসুম আরও দীর্ঘায়িত হলে এই সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এখন বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুনছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার পাশা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি ছাড়া কমিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তাই উজানের পানি কমে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের পানি হালদায় প্রবেশ করছে। এতে মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পে লবণাক্ত পানি পরিশোধন করতে হচ্ছে। পানি পরিশোধনের পরও কিছু লবণাক্ততা থেকে যাচ্ছে ওয়াসার পানিতে।

তিনি আরও বলেন, নদী থেকে পানি সংগ্রহের সময় লবণাক্ততা প্রতি লিটারে ৬০০ মিলিগ্ৰাম পর্যন্ত আমরা উত্তোলন করি। মূলত নদীতে ভাটা চলাকালে হালদা নদীর মোহরা পয়েন্টে পানি সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। পানি পরিশোধনের পরও প্রতি লিটারে ২৫০ মিলিগ্ৰাম লবণাক্ততা থেকে যাচ্ছে। ওয়াসার পানি থেকে লবণাক্ততা কমাতে নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে ওয়াসার ব্যবস্থাপনায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে দৈনিক পানির চাহিদা ৫৮ কোটি লিটার। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার চারটি পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ৪৬ থেকে ৪৭ কোটি লিটার পানি।

এখন হালদা নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পের উৎস থেকে পানি সংগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে মোহরা পানি শোধনাগার থেকে দৈনিক তিন কোটি লিটার পানি কম পাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি কম ছাড়ায় হালদা নদীতে মিঠা পানির পরিমাণ কমে গেছে। উজানের পানির চাপ কমে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের লবণাক্ত পানি হালদায় প্রবেশ করছে। হালদা নদীর যে পয়েন্ট থেকে আমরা মোহরা প্রকল্পের পানি সংগ্রহ করি, সেখানে বর্তমানে লবণাক্ততার পরিমাণ প্রতি লিটারে দুই হাজার ১০০ মিলিগ্রাম। স্বাভাবিক সময়ে এই লবণাক্ততার পরিমাণ থাকে ১০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম। নদীতে জোয়ারের সময় আমরা পানি সংগ্রহ করা বন্ধ রাখি। এ কারণে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্নিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মোহরা প্রকল্পের পানি পরিশোধন এবং অন্যান্য শোধনাগার থেকে পানি এনে তার সঙ্গে ব্লেন্ডিংয়ের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করছি।

শুষ্ক মৌসুম দীর্ঘায়িত হলে এই সংকট আরও প্রকট হবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

নগরীর পতেঙ্গা, কাট্টলী, সিটি গেট, হালিশহর, পাহাড়তলী ও জাকির হোসেন সড়কের দুই পাশে খুলশী এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, ওয়াসার পানি মুখে নেওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে পাশের বাড়ি থেকে টিউবওয়েলের পানি সংগ্রহ করে দৈনন্দিন কাজ করছি।

খুলশী এলাকার বাসিন্দা সাবিনা রহমান অভিযোগ করেন, ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে ওয়াসার পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ওয়াসার কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখনো সমাধান হয়নি।

লবণাক্ত পানি ব্যবহার প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম আরও বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে নগরে যে পানি সরবরাহ করা হয়, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন অনুযায়ী শতভাগ জীবাণুমুক্ত। আমরা লবণাক্ততা দূর করতে পারি না। আগামীতে যে প্রকল্পগুলো করা হবে, তাতে জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি পানির লবণাক্ততা দূর করার ব্যবস্থা রাখা হবে।

ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক রসায়নবিদ ও কর্ণফুলী নদীর পানি গবেষক ইদ্রিস আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রতি লিটারে ২৫০ মিলিগ্রাম লবণাক্ততা অবশ্যই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা নারী, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের জন্য লবণাক্ত পানি ক্ষতিকর।

এছাড়া যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল, তাদের জন্য লবণাক্ত পানি ক্ষতি করবে। লবণাক্ত পানি মানুষের খাদ্য হজমেও সমস্যা সৃষ্টি করে।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ অতীত থেকে শিক্ষা গ্ৰহণ করে না। শুষ্ক মৌসুমের জন্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি দরকার ছিল। প্রতি বছর এই মৌসুমে হালদা নদীতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে। তাই এর আগেই ওয়াসা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল।

কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি ছাড়া কমিয়ে দেওয়ার যে অভিযোগ চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ করছে, তা সঠিক নয় উল্লেখ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী (বিতরণ) মো. হুমায়ুন কবির মজুমদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত নভেম্বর থেকে হ্রদে পানির কমায় আমরা কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কমিয়েছি। এখন একটা ইউনিট চালু রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হ্রদের পানি কম ছাড়ার কারণে যদি হালদা নদীতে লবণাক্ততা বাড়ে, তাহলে তো গত নভেম্বর থেকেই এই সংকট দেখা দেওয়ার কথা। তখন তো হালদা নদীতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেনি।

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

9h ago