চট্টগ্রামে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের মিছিলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের বাধা

হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে চট্টগ্রামে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের বিক্ষোভ মিছিলে টাইগার পাস এলাকায় পুলিশের বাধা। ছবি: রাজীব রায়হান

হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্নির্ধারণ ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে বুধবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভবন ঘেরাও করতে যাওয়া চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের মিছিল মাঝপথে আটকে দিয়েছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ।

হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্নির্ধারণ ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ছিল তাদের। দুপুর ১২টার দিকে চসিক ভবনের আধা কিলোমিটার দূরে টাইগারপাস মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে মিছিলটি আটকে দেওয়া হয়।

এ সময় পুলিশের সঙ্গে পরিষদের নেতাদের বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নোবেল চাকমা ও খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা পরিষদ নেতাদের সেখানেই মিছিল শেষ করার অনুরোধ জানান।

সেখানে সড়কের আরেক পাশে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জাহেদুর রহমান কচি ও ওমর গণি এমইএস কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াসকে তাদের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। তারা সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে স্লোগান দেন।

পরে পুলিশ গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। টাইগারপাস এলাকা ছেড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চসিক ভবনের প্রধান ফটকে ঢুকে অবস্থান নেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা টাইগারপাস এলাকা ছাড়ার পর করদাতা সুরক্ষা পরিষদ সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।

পরিষদের সভাপতি নুরুল আবসার বলেন, 'আমাদের কর্মসূচি অহিংস এবং পূর্বঘোষিত ছিল, তবুও পুলিশ মাঝপথে ব্যারিকেড দিয়ে আমাদের বাধা দিয়েছে।

তিনি সমাবেশে বলেন, 'আমাদের আন্দোলনে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন স্থগিত রাখা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান মেয়র হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়নে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। এটা হলে চট্টগ্রামবাসীকে কয়েক গুণ বেশি কর দিতে হবে।'

পরে পুলিশ পরিষদের চার সদস্যের একটি দলকে মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার অনুমতি দিলেও পরিষদের সভাপতি নুরুল আবসারকে এই দলে যেতে দিচ্ছিলেন না। পরিষদের নেতারা তাদের সভাপতিকে ছাড়া চসিক ভবনে যেতে রাজি না হওয়ায় ওই সময় সেখানে হট্টগোল শুরু হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, মেয়রকে নিয়ে নুরুল আবসারের কিছু মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক মাস আগে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়।

পরে পরিষদের সহ-সভাপতি আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি দল চসিক ভবনের দিকে রওয়ানা দেয় এবং দুপুর পৌনে ১টার দিকে সেখানে পৌঁছায়। পুলিশের পাহারায় দলটি চসিকের প্রধান ফটকে প্রবেশ করলে সেখানে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। ওই সময় পরিষদের নেতাদের নিয়ে কটু মন্তব্য করতে শোনা যায় তাদের।

এই প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস বলেন, তারা মেয়রের পক্ষে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তিনি বলেন, আমরা মনে করি প্রকৃত করদাতাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই।

চসিক সূত্র জানায়, মেয়র তার কার্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।

এ ব্যাপারে পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, 'মেয়র যেহেতু নগরীর ৭০ লাখ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাই আমাদের কথা শোনার জন্য তার আমাদের সঙ্গে দেখা করা উচিত ছিল।' তিনি বলেন, 'আমাদের বলা হয়েছে মেয়র অফিসে নেই… আমরা বুঝতে পারছি না আমাদের মুখোমুখি হতে তার সমস্যা কোথায়। মেয়র কী করছেন তা দেখার জন্য আমরা কিছু দিন অপেক্ষা করব এবং এরপর আমাদের আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।'

পরিষদের নেতারা চসিক ভবন ত্যাগ করার পর সাংবাদিকরা মেয়রকে তার কার্যালয়ে আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে রেজাউল বলেন, সরকার কর পুনর্মূল্যায়নের নিয়ম করায় তার কিছু করার নেই।

তিনি বলেন, 'পরিষদ নেতারা যদি এই নিয়ম বাতিল চান, তাহলে তাদের সরকারের কাছে দাবি জানানো উচিত।'

পরিষদ নেতাদের সুবিধাবাদী ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে মেয়র বলেন, 'পুনর্মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা থাকলে করদাতার আপিলের সুযোগ রয়েছে। আপিলের জন্য আবেদন করা সব করদাতা এখন পর্যন্ত আপিল বোর্ডের নিষ্পত্তিতে খুশি।'

'যারা বিক্ষোভ করছে তাদের বিভিন্ন এজেন্ডা রয়েছে... তারা অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল এবং তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করা। প্রকৃত করদাতাদের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।'

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চসিক ভবনের ফটকে অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে মেয়র বলেন, আমি কাউকে এখানে আসতে বলিনি। আমি একটি রাজনৈতিক দল থেকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। আমি একজন রাজনৈতিক নেতা। এখন কেউ যদি এখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে, আমি কী করতে পারি।

Comments

The Daily Star  | English

Muslin’s revival weaves past into present

On a golden summer morning in Rupganj, Narayanganj, the sound of handlooms echoes from tin-roofed sheds nestled amid winding village paths and open fields.

16h ago