সুপেয় পানির সংকটে সেন্টমার্টিন

সেন্টমার্টিনে খাবার পানির সংকট
সেন্টমার্টিন দ্বীপের অনেক মানুষ মাঝের পাড়া গ্রামের টিউবওয়েলের ওপর নির্ভরশীল। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে খাবার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বীপে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষ এই সংকটে ভুগছেন।

দ্বীপবাসী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে ১০ হাজারের বেশি মানুষের বাস।

দ্বীপের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম তথা সাগরঘেঁষা জনবসতিগুলোয় খাবার পানির সংকট বেশি।

দ্বীপবাসীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, গত বছর ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং' আঘাত হানার পর সাগরের পানিতে লোকালয়গুলো প্লাবিত হয়। দ্বীপের চারপাশের নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে ডুবে গেলে টিউবওয়েল ও পুকুরগুলো লবণাক্ত পানিতে ভরে যায়। তখন থেকে ধীরে ধীরে টিউবওয়েলগুলোর পানিও লবণাক্ত হয়ে পড়ে।

তারা আরও জানান, এক পর্যায়ে দ্বীপের চারপাশে সাগরের তুলনামূলক নিকটতম স্থানের বাসিন্দারা মাঝের পাড়া গ্রামের টিউবওয়েলগুলোর ওপর নির্ভর হয়ে পড়েন।

অন্যান্য গ্রামে বাসিন্দারাও খাবার পানি নিতে সেখানে যেতে শুরু করেন।

সেন্টমার্টিনে খাবার পানির সংকট
খাবার পানির সংকটে সেন্টমার্টিনবাসী। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা মরিয়ম বিবি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বাড়িতে টিউবওয়েল ছিল। সিত্রাংয়ের পর ওই টিউবওয়েলের পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মাঝের পাড়া থেকে পানি আনতে হয়। অনেক ভোগান্তি হচ্ছে।'

ডেইলপাড়া গ্রামের কুলসুম আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের ২ ঘর মিলে একটা টিউবওয়েল ছিল। জোয়ারের পানি ঢোকায় টিউবওয়েলের পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। অনেক দূরে গিয়ে কষ্ট করে পানি আনতে হয়।'

একই কথা বলেছেন পশ্চিম পাড়ার হাজেরা বেগম ও লায়লা বেগমসহ আরও অনেকে।

তারা জানান, গরমকালে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যাবে। সংকট সমাধানে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিত্রাংয়ের পর থেকে দ্বীপে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দ্বীপের চারপাশের এলাকাগুলোয় এই সংকট বেশি।'

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দ্বীপের বিশাল এলাকাজুড়ে খাবার পানির তীব্র সংকট। পানির অভাবে কয়েক হাজার মানুষ কষ্টে আছে। সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।'

উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়নবিষয়ক সমন্বয় সভাতেও এই সংকটের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে বলে তিনি জানান।

কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল মনজুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেন্টমার্টিনে খাবার পানির সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় প্রকল্প নিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।'

'গত বর্ষায় বৃষ্টি তুলনামূলক কম হওয়ায় এবং দ্বীপে সুপেয় পানি ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়াতে এই সংকট দেখা দিয়েছে।'

তার মতে, দ্বীপে বড় বড় জলাধার তৈরি করে সেখানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা গেলে খাবার পানির সংকট দূর হবে।

'দ্বীপবাসীদের কাছে খাবার পানি সরবরাহ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ একটি সমন্বিত প্রকল্প নিতে প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে,' যোগ করেন আবুল মনজুর।

Comments

The Daily Star  | English

US cuts tariffs on Bangladesh to 20% after talks

The deal for Dhaka was secured just hours before a midnight deadline set by President Donald Trump

1h ago