আমরা যেন একাত্তরকে ভুলে না যাই: মির্জা ফখরুল
সংস্কার নিয়ে যত বেশি সময় যাবে, সমস্যাগুলো তত বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার সকালে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত জাতীয় সংলাপের প্রথম অধিবেশনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংস্কার নিয়ে যত বেশি সময় যাবে আমার কাছে মনে হয়, আমাদের কাছে মনে হয় যে, সমস্যাগুলো তত বাড়বে। আসল জায়গা তো... প্রবলেম তো অন্য জায়গায়। আপনি এটা ইমপ্লিমেন্ট করবেন কাদের দিয়ে? আপনার এই যে, প্রশাসন... গভর্নমেন্ট ম্যাশিনারি, সেই গভর্নমেন্ট ম্যাশিনারি তো পুরোপুরিভাবে এখনো ফ্যাসিবাদের মধ্যে আছে। এতটুকু পরিবর্তন হয়নি।
আমলাতন্ত্রের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'একটা ফাইল নড়ে না। ছাত্রদের মধ্যে যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা... কোথায় আটকে আছে খুঁজে বের করে দেখবেন এই ফাইলটি আটকে আছে... প্রবলেম তো ওখানে হয়ে গেছে। এই বিষয়গুলো আমাদেরকে দেখতে হবে। ড. দেবপ্রিয় এখানে আছেন, ড. মুশতাক হোসেন খানও বলেছেন যে, কাঠামোটা যদি না থাকে, সেই কাঠামো না থাকলে আমরা আমরা উপর থেকে শুধু চাপিয়ে দিলে দ্রুত কোনো কিছু করতে পারবো না।'
'তাই আমাদের স্ট্রাকচার ঠিক করতে হবে, প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করতে হবে... সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি আমরা গণতন্ত্র উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারি, তাহলেই আমরা গণতন্ত্রকে সফল করতে পারব', বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, মন-মানসিকতাটা খুব বড় জিনিস... মাইন্ডসেট... আমার তো মাইন্ডসেট হয়ে গেছে যে কথাটা কিছুক্ষণ আগে ড. মুশতাক বলেছেন, আমার খুব ভালো লেগেছে। একটা বন্দোবস্ত তো ছিল, টাকা দেবো কাজ করিয়ে নেব ভালো... সমস্যা নেই। এখন তো আপনি অন্য সিস্টেমে যাচ্ছেন... সেই মাইন্ডসেটটা তো তৈরি করতে হবে এবং তৈরি করার জন্যই চর্চা দরকার, আমাকে গণতন্ত্রকে চর্চা করতে হবে... ভুল হবে, ত্রুটি হবে... এর মধ্য দিয়ে আপনাকে ব্যুরোক্রেসি সিস্টেমকে সামনের নিয়ে যেতে হবে।
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে 'সংলাপ অধিবেশন ১: ঐক্য কোন পথে' শীর্ষক এই জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আমরা যেন একাত্তরকে ভুলে না যাই, ১৯৭১ সাল এটাকে যেন আমরা কখনো ভুলে না যাই। আমরা যেন এই যে ধারাবাহিক গণতন্ত্রের জন্য যে সংগ্রাম, লড়াই, একাত্তরের পর থেকে সেই সংগ্রাম প্রত্যেকের মনে রাখা দরকার।'
'সেই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে, ছাত্রদের ত্যাগের মধ্য দিয়ে, তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা এই জায়গায় উপস্থিত হয়েছি। সুতরাং আমরা আপনাদেরকে এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে সব সময়ই গণতন্ত্রের সংস্কারের পক্ষে অর্থাৎ গণতন্ত্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের পক্ষে... তার জন্য আমরা কাজ করেছি, করব ভবিষ্যতে। একইসঙ্গে আমরা মনে করি যে, জনগণকে বাদ দিয়ে উপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে কোনো কিছু করা যাবে। আমরা চাই, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সেই কাজগুলো করব।'
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, 'সাড়ে ১৫ বছরে লেয়ারের পর লেয়ার যে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে... একদিনে, দুইদিনে বা চার মাসে সেটা নিরসন সম্ভব নয়। এটার জন্য সমর্থন লাগবে, জনগণের প্রেসার লাগবে।'
'আপনারা দেখেছেন বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে... আমার বিস্তারিত বলার দরকার নাই। বারে বারে জাতীয় পতাকাকে খামচে ধরার চেষ্টা করছে সেই পুরোনো শকুন। প্রতিহতের জায়গা আমাদের বজায় রাখতে হবে। খালি ঐক্যের কথা বললাম, প্রতিহতের জন্য তৈরি থাকলাম না, নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবেন না। যখন নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবেন আপনাদের হাতের বাইরে চলে যাবে। সেই কারণেই আমাদের সবার মাথায় চিন্তা থাকতে হবে আমরা একটা অসমাপ্ত জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে সমাপ্ত করার জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি, আমরা একটা ফ্যাসিবাদের বাংলাদেশ ব্র্যান্ডকে পরাজিত করে আজকের বাংলাদেশে দাঁড়িয়েছি। আমরা যে বাংলাদেশ চাই, সেই বাংলাদেশে যেন কখনই আর ফ্যাসিবাদ ফেরত না আসে।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদের ব্র্যান্ডের নাম ছিলো মুজিববাদ। সেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করতে যেয়ে বাংলাদেশের যেই তরুণ-যুবকরা জীবন দিয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তারা আজকে কেমন বাংলাদেশ চান, তারা আজকে বাংলাদেশটাকে কীভাবে গড়ে তুলতে চান, বাংলাদেশের রাজনীতিটা কেমন হবে, সংবিধানটা কেমন হবে, নির্বাচনটা কেমন হবে শুধু সেটাতে আমরা থাকবে।'
'তার সঙ্গে এটাও বলব, উচ্চ কক্ষ-নিম্ন কক্ষ বা রিপ্রেজেনটেশন কেমন হবে শুধু সেটা না, স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার ভিত্তি কেমন হবে... সমস্ত ক্ষমতা কি সংবিধানে সংসদ সদস্যদের প্রতি দেওয়া থাকবে, নাকি স্থানীয় পর্যায় স্থানীয় সরকারের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যেখানে সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের খেটে-খাওয়া মানুষের অবস্থান থাকবে... এই প্রক্রিয়াটাই বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের মধ্য দিয়ে আসবে।'
Comments