নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে, সার্চ কমিটির নাম প্রকাশ আজ-কালের মধ্যে: আসিফ নজরুল
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সরকারের নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি হয়ে গেছে এবং আজ-কালের মধ্যে তাদের নাম সবাই জানতে পারবে।
আজ মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
ভলকার তুর্কের সঙ্গে সাক্ষাৎ বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, 'মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা বলেছেন তিনি। আমরা এ বিষয়ে আমাদের প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, আমাদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ থাকবে, সম্ভব হলে তিনি আবার আসবেন। এখানে মানবাধিকার অফিস খোলার ব্যাপারে তারা আরও আলোচনা করবেন।'
বিচার প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য জাতিসংঘের কাছে কী ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের আইনগত সংস্কারের সঙ্গে ওনারা ইনভলবড আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে আমাদের যদি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয় বা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজন হয়, সেটা ওনারা দেবেন বলেছেন। তাদের আমরা বলেছি, আপনারা যদি প্রথম থেকেই মনিটর করতে চান, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ, আমরা এখানে সুবিচারই করব, কোনো প্রতিশোধ নেবো না। আগের আদালতে যেমন হয়েছে, আমরা সে রকম অবিচার করব না। কাজেই আমাদের কোনো কিছু লুকোনোর নেই।'
জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ড রহিত করার কথা বলেছে। এ বিষয়ে সরকারের ভাষ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ওনারা সারা পৃথিবীতেই মৃত্যুদণ্ড রহিত করার কথা বলেন। এটা তাদের একটি প্রটোকল। কিন্তু, পৃথিবীর খুব কম দেশই মৃত্যুদণ্ড রদ করেছে। আমাদের যে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম, জুডিশিয়াল কালচার, সেগুলো আমাদের কাছে প্রাধান্য পাবে। আর মৃত্যুদণ্ড রহিত করার যে প্রটোকল সেখানে বাংলাদেশের কোনো সরকারই পক্ষ রাষ্ট্র হয়নি।'
নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, 'নির্বাচন নিয়ে ওনার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তবে, আপনাদেরকে আমি একটি বিষয় বলতে পারি, আমাদের সরকারের নির্বাচনমুখি যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন হয়ে গেছে। আমি যতদূর জানি, প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন সই করে দিলেই আজ-কালের মধ্যে আপনারা এটি জানতে পারবেন। সার্চ কমিটি হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। এরপর ভোটার তালিকা করা হবে।'
তিনি বলেন, 'আগেও বলেছি, ভোটার তালিকা নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন ছিল। সর্বশেষ নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নির্বাচনটাই ভুয়া, তাই ভোটার তালিকা নিয়ে মানুষের মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু এবার আমরা ভুয়া নির্বাচন করব না। অসাধারণ একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করব। ফলে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। এর জন্য কতটা সময় লাগবে, সংস্কারের সঙ্গে নির্বাচনকে কীভাবে সম্পর্কিত করা হবে, এমন অনেক কিছুর ওপর নির্বাচনটি নির্ভর করে। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে এই সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে সব ঠিক করবেন।'
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল অংশ নিতে পারবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আপনি যদি মনে করেন, যারা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, ৪০-৫০ হাজার মানুষের অঙ্গহানি ঘটিয়েছে; এখনো এর পক্ষেই কথা বলছে; এখনো তাদের নেত্রী বিদেশে বসে হুমকি দিচ্ছে—অবশ্য অডিও ক্লিপটি যদি সঠিক হয়—২৮৭ জনকে দেখে নেবে; আমার মনে হয় না বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নেবে যে বিচার ও অনুশোচনা হওয়ার আগে তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি চালাবে। তারা রাজনীতি করতে আসবে কি আবারও হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার জন্য? তাদের কথা শুনে তো তেমনই মনে হয়। ফলে, এগুলো একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসবে।'
'এত বড় আন্দোলনকে তারা এখনো বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, এই আন্দোলনের নেতাদের কিশোর গ্যাং বলার চেষ্টা করে এবং সুযোগ পেলে আরও মানুষকে হত্যা করার, দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এই দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত কি না, সেই প্রশ্নটা বাংলাদেশের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছে রেখে গেলাম। আমাদের সরকার ইতোমধ্যে বলেছে, বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেটা দেখা যাবে,' যোগ করেন তিনি।
Comments