প্রশাসনের ভূতগুলোকে দূর করতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে ফখরুল
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'যে ভূতগুলোকে নিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) জনগণের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে, দুর্নীতি-লুটপাট করেছে। সেই ভূতেরা কিন্তু এখনো প্রশাসনের মধ্যে আছে। এই ভূতগুলোকে দূর করতে হবে, না হলে আপনারা কোনো কিছুই করতে সক্ষম হবেন না।'
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার রাজধানীর রমনায় ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশে (আইইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোট এই সমাবেশের আয়োজন করে।
ফখরুল বলেন, 'ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে, আমাদের অনেক সন্তানের রক্তের বিনিময়ে, ভাইদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদকে সরাতে পেরেছি। এটা সাময়িক একটি বিজয় অর্জন করেছি। এই বিজয়কে যদি আমরা ধরে রাখতে না পারি, যে কারণে আমাদের ছেলেরা-ভাইরা প্রাণ দিয়ে, সেই কারণকে বাস্তবায়ন করতে না পারি, তাহলে সবই ব্যর্থ হয়ে যাবে।'
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'যে দলটি কিছু দিন আগে দাবি করেছে যে তারা গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় পুরোধা, তাদের কারণে দেশে স্বাধীনতা এসেছিল ১৯৭১ সালে, তাদের কারণে দেশে গণতন্ত্র এসেছে—তারা গণতন্ত্রের বাহক। সেই দলটির কারণে দুইবার এই গণতন্ত্র নিহত হয়েছে। একবার হয়েছে ১৯৭৫ সালে, স্বাধীনতার পরে। আরেকবার হয়েছে ২০১২ সালের পরে, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ধ্বংস করা হলো।'
তিনি আরও বলেন, 'তারপর থেকে পরিকল্পিতভাবে এই দেশে গণতন্ত্র যেন বিকশিত হতে না পারে, গণতন্ত্রের চর্চা যেন না হতে পারে, জনগণের শাসন যেন না থাকে, মানুষ যেন তার অধিকার প্রয়োগ করতে না পারে, মৌলিক অধিকারগুলো যেন ভোগ করতে না পারে, সেই বিষয়গুলো তারা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে।'
ফখরুল বলেন, 'বৈষম্যের পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'নিজেরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে দেশের বাইরে পাচার করেছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না। আমাদের শিক্ষকরা পরিবারে ভালো কাপড় কিনে দিতে পারে না। এই অবস্থা তারা তৈরি করেছে।'
'এই দেশের ছাত্র-জনতা ১৫-১৬ বছর ধরে লড়াই করে একটি ক্ষেত্র তৈরি করে এদের সরে যেতে বাধ্য করেছে,' যোগ করেন তিনি।
নির্বাচনী ব্যবস্থা তৈরি করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরা প্রাণ দিয়েছি কারণ আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।'
তিনি বলেন, 'আমরা কোনো বিরাজনীতিকরণের রাজনীতি বিশ্বাস করি না। আবার মাইনাস টু—ওয়ান ইলেভেন আমরা দেখতে চাই না। আমরা আবার মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদ দেখতে চাই না। আমরা আবার সন্ত্রাস দেখতে চাই না। আমরা সত্যিকার অর্থে দেশকে সুস্থ, উদারপন্থী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিতে চাই। আমরা যাদের যোগ্য মনে করেছি, তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছেন।'
তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, যে দেশে শিক্ষাকে সঠিকভাবে কাঠামোর মধ্যে না আনা যাবে, সেই জাতির সহজে উন্নয়ন হবে না। দুর্ভাগ্য আমাদের, ৫৩ বছর পার হয়েছে, সবচেয়ে দুর্বল জায়গা যদি কোনোটা থাকে, সেটা হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। বলতে এতটুকু দ্বিধা নেই, শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা, দুর্নীতি, চক্রান্তের বেড়াজালে শিক্ষা ব্যবস্থাকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।'
'আমি খুব আশাবাদী মানুষ, ইতিবাচক মানুষ। অনেকেই বলে যে কী হলো? আমি বলি, এই পর্যন্ত তো হলো! শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, হলো না? পার্লামেন্ট ভেঙে গেল, হলো না? ম্যাডাম বের হলো, এটা হলো না? বাকি কাজটা এখন আমাদের করতে হবে। দরকার হলে আবার রাজপথে নামতে হবে। দরকার হলে আবার বুকের রক্ত দিতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এই দেশে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়িত করব। ম্যাডামের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব। তারেক রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব,' বলেন তিনি।
Comments