গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের গাড়িবহরে আ. লীগের হামলা, নিহত ১ আহত ৫০

নিহত শওকত আলী দিদার স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক।
গোপালগঞ্জে হামলায় আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীর গাড়িবহরে হামলায় একই কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।

বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছেন। 

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এসময় ১০টি গাড়ি ও ৭-৮টি দোকান ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৬টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।'

তিনি জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চরপাতালিয়া এলাকা থেকে দিদারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

হামলায় ২৫ জনের মতো আহত হওয়ার কথা শুনেছেন বলেও জানান ওসি।

গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান ডেইলি স্টারকে জানান, তারা বিকেল ৫টার দিকে সদর উপজেলার বেদগ্রাম মোড়ে বিএনপির একটি পথসভা শেষে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন। ঘোনাপাড়া এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২০০-৩০০ নেতাকর্মী মাইকিং করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে, গাড়ি ভাঙচুর করে এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের অন্তত ৫০ নেতাকর্মী আহত হন। 

তিনি বলেন, 'স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না, রাজু বিশ্বাস, মাহাবুব খান মুরাদ, লিন্টু মুন্সী, গোপালগঞ্জের সালমান সিকদার, সুজন সিকদার, সবুজ শিকদার, ঢাকার মতিঝিল এলাকার নাসির আহমেদ মোল্লা, বাদশা মোল্লা, নিশান, হাসান ও মাতুয়াইলের আলাউদ্দিনসহ ১৬ জনকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এবং তিন জনকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।'

পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এস এম জিলানী, তার স্ত্রী রত্না ও বাদশাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠান গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিকদার শহিদুল ইসলাম লেলিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বেদগ্রামের মোড়ে শান্তিপূর্ণ পথসভা শেষ করে এস এম জিলানীর বাবা-মায়ের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলাম। ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছালে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিন মোল্লা, গোবরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিকরুল ফরিক, স্থানীয় আওয়ামী নেতা আলিমুজ্জামান ও হাসান মোল্লার নেতৃত্ব আমাদের গাড়িবহরে হামলা হয়।'

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আলিমুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা গাড়িবহর নিয়ে যাওয়ার সময় ঘোনাপাড়া এলাকায় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। তাদের বাঁধা দিলে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আমি নিজেও আহত হয়েছি।'

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পরিচালক জীবিতেশ বিশ্বাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও তার স্ত্রী রত্নাসহ ২১ জন আহতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের মধ্যে চার জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।'

পরে পুলিশ একজনের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসে বলেও জানান তিনি।

সদর থানার ওসি বলেন, 'নিহত দিদারের স্ত্রীকে খবর দিয়েছি। তিনি এলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

এ ঘটনায় রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আজ গোপালগঞ্জে দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা এস এম জিলানীর গাড়িবহরে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. শওকত আলী দিদারকে খুন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীসহ অনেক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করার ঘটনা একটি গভীর দেশি—বিদেশি চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ। এসব সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন করার কোনো বিকল্প নেই।'

হামলাকারী দুষ্কৃতিকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহ্বান জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

7h ago