সিলেটে হামলায় আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ঢাকায় চিকিৎসাধীন
সিলেটের বনকলাপাড়ায় হামলার শিকার হয়েছেন নগরীর সাত নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমেদ।
রোববার রাত ৯টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মনজুর মারা গেছেন। মূলধারার কিছু গণমাধ্যমও এই খবর প্রকাশ করে। সোমবার দুপুরে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও মনজুরকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু গুরুতর আহত মনজুর এখনো বেঁচে আছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মনজুরের ভাই মনির আহমেদ ডেইলি স্টারকে জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মনজুরের বা হাত কবজির কাছে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং শরীরের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি পিঠ-মেরুদণ্ডেও গুরুতর আঘাত লেগেছে।
একইদিনে পার্শ্ববর্তী এলাকায় হামলায় আহত হয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরেক কর্মী রুমেল খান। তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন। তারও পিঠে ও দুই পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
মনজুরের পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকটি মোটরসাইকেলে হেলমেট পরা একদল দুর্বৃত্ত ঘটনাস্থলে এসে একটি সেলুনের ভেতরে আটকে মনজুরকে কোপায়। সেই সময় হামলাকারীরা সেলুনের আশেপাশের দোকানগুলোর শাটার লাগিয়ে দেয়।
আকাশ হেয়ার ড্রেসার নামক ওই সেলুনের কর্মী সুধাংশু বিশ্বাস স্বপন বলেন, 'রাতে সেলুনে চুল কাটতে আসেন মনজুর। সেসময় অন্তত সাতটি মোটরসাইকেলে করে হেলমেট পরা বেশ কয়েকজন এসে সেলুনে ঢুকে। তারা আমাকে জোর করে বের করে দেয়। তখন সেলুনে আরেকজন গ্রাহক ছিলেন। তাকে ভয় দেখিয়ে বসিয়ে রেখে মনজুরকে মারতে শুরু করে।'
'আমি দৌড়ে গিয়ে মনজুরের বাসায় তার ভাইদের জানিয়ে তাদেরকে নিয়ে ফিরে এসে দেখি হামলাকারীরা পালিয়ে গেছে এবং মনজুর গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে তাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যাওয়ার পর আমি সেলুনে থাকা রক্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করি।'
হামলার সময় সেলুনে থাকা পার্শ্ববর্তী একটি রেস্টুরেন্টের স্বত্ত্বাধিকারী মতিন মিয়া বলেন, 'হামলাকারীদের কেউ মনজুরকে দেখে "এইটা" বলে, অর্থাৎ মনজুরকে শনাক্ত করে। তারপর তারা আর কোনো কথা না বলে তাকে মারতে শুরু করে। সেলুনের সবাইকে বের করে দেয় আর আমাকে বলে বসে থাকতে। আমি অবস্থা দেখে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে অন্যান্যরা আমার জ্ঞান ফেরায়।'
সেলুনের বিপরীতে একটি মোবাইল সেবার দোকানে থাকা কয়েকজন জানান, হামলাকারীরা পীরমহল্লার দিক থেকে আসে। তারপর আশেপাশের সব দোকানের শাটার লাগিয়ে দিতে বাধ্য করে।
হামলাকারীদের মাথায় হেলমেট থাকায় ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা হামলাকারীদের দেখতে বা চিনতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। মনিরও তার ভাইয়ের বরাতে জানিয়েছেন, হামলাকারীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে মনজুরের পরিবারের একাধিক সদস্য ও অপর আহত রুমেল আহমেদ জানিয়েছেন, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাত নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেনের সমর্থনে কাজ করায় প্রতিদ্বন্দ্বী সায়ীদ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর অনুসারীরা তাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় তার বাসার সামনে সশস্ত্র মহড়া করেন পূর্ববর্তী কাউন্সিলর আফতাব হোসেন। দ্য ডেইলি স্টারে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে সায়ীদ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থীতা হারান আফতাব এবং নির্বাচনে বিজয়ী হন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী সায়ীদ।
এ ব্যাপারে কথা বলতে কাউন্সিলর সায়ীদ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমান বলেন, 'গুরুতর আহত একজন ঢাকায় এবং আরেকজন সিলেটে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে পুলিশ ঘটনা তদন্ত করছে।'
Comments