ছাত্রদের মতবিরোধ হলেই বাকবিতণ্ডা হয়, সে রকমই কিছু কিছু জায়গায় হচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

‘প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করা, এগুলো তারা করেনি, এগুলো কেউ তাদের শিখিয়ে দিয়েছে। তাদের শেখানো বুলি তারা বলেছেন। নিশ্চয়ই তারা এগুলো ভুলবশত করেছে।’

কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ছাত্রদের মধ্যে মতবিরোধ থাকে, মতবিরোধ হলেই বাকবিতণ্ডা হয়। সে রকমই কিছু কিছু জায়গায় হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'দেশের অনগ্রসর গোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের এখানেও কোটা ব্যবস্থা চালু ছিল। সেটা ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্থগিত করে দিয়েছিলেন। তারপর কয়েকজন সংক্ষুব্ধ হয়ে আদালতে রিভিউ চেয়েছিলেন, আদালত থেকে রিভিউ দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়েই বিপত্তি। আমাদের ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়েছে, তারা আবারও কোটা বিলুপ্তি চেয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট থেকে একটি নির্দেশনা দিয়েছেন এবং হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা স্থগিত করেছেন। পরবর্তী তারিখ ৭ আগস্টের মধ্যে নিষ্পত্তি করার কথা বলেছেন।

'আরও বলেছেন, আমাদের ছাত্রদের যাদের আপত্তি আছে তারা যেন আদালতে এসে তাদের আবেদন জানায়। একদম স্পষ্ট করে যেখানে বলে দেওয়া হয়েছে সেখানে আমার মনে হয়, আমাদের ছাত্রদের একটু অপেক্ষা করা উচিত ছিল। বিচারে শেষ পর্যন্ত কী হয় দেখা উচিত ছিল। না দেখেই তারা নানা ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছে, রাস্তায় অবরোধ করছে,' বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, 'রাস্তায় অবরোধ করলে তো সবাই এখানে ভুক্তভোগী হয়ে যায়। চিকিৎসা সেবার জন্য যিনি বের হয়েছেন, তিনি চিকিৎসা সেবা পান না। অনেক কাজে বিঘ্ন ঘটছে। রাস্তাঘাট বন্ধ করা এবং ভিসির বাড়ি ঘেরাও করা, নানা ধরনের দৃশ্য আমরা দেখছি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত করে আদালতে যাওয়ার কিংবা যোগাযোগ করার রাস্তা তাদের জন্য খোলা রয়েছে। এই খোলা রাস্তায় না যেয়ে এ ধরনের রাস্তায় যাওয়া (কর্মসূচি ঘোষণা) তাদের জন্য আমি মনে করি, ঠিক ভালো না। এই জায়গা থেকে তাদের চলে আসা উচিত।'

গতকাল আমরা দেখেছি ছাত্রলীগের সঙ্গে মারামারি, রক্তাক্ত অবস্থা। সারা দেশে শিক্ষার্থী মাঠে নেমে গেছে, এখন পরিস্থিতি কোন দিকে গেল জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'আমি কিন্তু ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি কিংবা ছাত্রদল কিন্তু আমি সংজ্ঞায়িত করছি না। আমি বলছি ছাত্ররা। ছাত্ররা হয়তো একদল পক্ষে রয়েছে, আরেক দল বিপক্ষে রয়েছে—হতে পারে এগুলো।'

তিনি বলেন, 'শুধু পুলিশ না, আমাদের কোনো শান্তিরক্ষা বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজের ভেতরে প্রবেশ করছে না। আমাদের কথা হলো, ছাত্রদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। সব সময়ই ছিল, এটা হতেই পারে। এখন কোন দল পক্ষে, কোন দল বিপক্ষে সেটা আমাদের জানার বিষয় না। আমাদের বিষয় হলো, তারা যেন নিয়মতান্ত্রিকভাবে, কাউকে কষ্ট না দিয়ে যেন তারা তাদের কথাগুলো বলে। তাদের দেশের জনগণও সেটা বুঝতে পারবে, সবাই সেটা উপলব্ধি করতে পারবে।

'আর মারামারি; এটা ছাত্রদের মধ্যে সব সময়ই, একমত হতে পারে না। মতবিরোধ থাকে, মতবিরোধ হলেই বাকবিতণ্ডা হয়। সে রকমই কিছু কিছু জায়গায় হচ্ছে। আমরা জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে দেখেছি, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে দেখেছি। ঢিল ছোড়াছুড়ি আমরা দেখেছি। আমরা এগুলো সবই দেখেছি। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে আমরা বলেছি, যে পর্যন্ত প্রয়োজন না হয়, সে পর্যন্ত তারা যেন ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে না প্রবেশ করে,' যোগ করেন তিনি।

এখন যে অবস্থা হয়েছে মহাসড়কে অবরোধ-রেলপথে অবরোধ, সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে আপনি মনে করেন কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'ভেঙে পড়েছে এতে আমি একমত নই। আইন-শৃঙ্খলা সঠিকভাবেই আছে। আমিও চলছি, আপনিও চলছেন, সবাই চলছে, সব কিছুই হচ্ছে। জায়গায় জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে কিছু করার জন্য; এরা ভুল করছে, আমি সব সময় বলি এরা ভুল করছে।

'এয়ারপোর্টে যারা গিয়েছিল, ইউনিভার্সিটির ভিসি এসে তাদের সরিয়ে নিয়ে গেছে। ভিসি তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, এগুলো ভুল হচ্ছে, তোমরা চলে আসো এবং তারা চলে গেছে। যেখানে যেখানে ছাত্ররা বসেছিল ভিসি কিংবা কলেজের কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা যেন চলে যায়। আমরা মনে করি, তারা সরে যাবে। তাদের যদি কিছু বলার থাকে তারা আদালতে এসে বলবে কিংবা এসে বলতে পারে এই জায়গায় এই এই দাবি আমাদের। রাস্তায় অবরোধ করে দাবি আদায় করা সঠিক পন্থা নয়,' যোগ করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, 'হ্যাঁ, সেটা তো দিয়েছে। দিলেই কি হয়ে যাবে না কি! এটা স্টাডি করতে হবে। রাষ্ট্রপতি একটি নির্দেশনা দেবে আমাদের, সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করব।'

একজন গণমাধ্যমকর্মী প্রশ্ন করেন, ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা বিরোধিতা করেছিল রাজাকার, আল শামস, আল বদর, তারা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। কোটার পক্ষে যারা আন্দোলন করছে, তারা নিজেদের আত্মস্বীকৃত রাজাকার হিসেবে দাবি করছে। সেটাও যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে। আপনি কি মনে করেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা তাদের বিরুদ্ধে হতে পারে?

তিনি আরও প্রশ্ন করেন, প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণেই কি গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে, আজকে ঢাকাসহ সারা দেশে এই ঘটনা ঘটছে।

জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের শিক্ষার্থী অনেকেই পরিপক্ব, অনেকেই পরিপক্ব না। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, ঘোলা পানিতে অনেকেই মাছ শিকারে পারদর্শী। তারা লেগে গেছে এদের মোটিভেট করার জন্য। জামায়াত ও বিএনপি নির্বাচনে আসে না, বাইরে থেকে হৈ চৈ করে, তারাও পেছন থেকে ইন্ধন দিতে পারে; এ সব কিছুই হতে পারে। এরা আমাদের নতুন প্রজন্ম, এরা দেশের ভবিষ্যৎ। এরা সঠিক পথে যাবে, আমরা ধৈর্য সহকারে দেখছি। তারা যদি কোনো রকম ধ্বংসাত্মক কাজে নেমে আসে তখন আমরা আমাদের কাজটি করব।'

শিক্ষার্থীরা নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এগুলো শেখানো বক্তব্য। এগুলো ছাত্রদের বক্তব্য নয়। এ দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসেন। এ দেশের মানুষ নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। কার নেতৃত্বে? বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছর, আর তার কন্যা, যার ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করা, এগুলো তারা করেনি, এগুলো কেউ তাদের শিখিয়ে দিয়েছে। তাদের শেখানো বুলি তারা বলেছেন। নিশ্চয়ই তারা এগুলো ভুলবশত করেছে।'

Comments