ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্নের আশঙ্কা আছে: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সম্পাদিত 'চুক্তি ও সমঝোতা' দেশের স্বার্থ বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এসব চুক্তি-সমঝোতার প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মির্জা ফখরুল।

এ সময় তিনি বলেন, 'সম্প্রতি শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে ২টি চুক্তি, ৫টি নতুন সমঝোতা ও ৩টি চুক্তি নবায়নসহ ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা সই হওয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'চুক্তিগুলো বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী হওয়ায় বিএনপি এই চুক্তিগুলো প্রত্যাখ্যান করছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বিএনপি সৃষ্টি হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে। বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে আমরা ২৮ তারিখে সংবাদ সম্মেলন করব। এরপরে আমরা প্রয়োজন হলে যে কর্মসূচি নেব, সেটা আপনারা জানতে পারবেন।'

'তবে আমাদের কথা পরিষ্কার, আমাদের এই যে বক্তব্য বা আমাদের যে আন্দোলন এটা ভারতের বিরুদ্ধে নয়, এটা সরকারের বিরুদ্ধে,' বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে ভারতকে রিচ করতে বা তার কাছ থেকে দাবিগুলো আদায় করে নিয়ে আসতে। আপনি (সরকার) অভিন্ন নদীগুলোর পানির হিস্যা না পেয়ে চুক্তি সই করতে চাচ্ছেন। তিস্তার পানি আমাদের সবচেয়ে আগে দরকার, কিন্তু তিস্তা প্রকল্পের কাজ করতে চায় সরকার। কারণ প্রকল্প হলে অনেক টাকা। সেই টাকাই তাদের (সরকার) আসল উদ্দেশ্যে।'

'পত্রিকায় দেখলাম, পরিষ্কার করেই মমতা ব্যানার্জি বলে দিয়েছেন যে পশ্চিম বাংলাকে বাদ দিয়ে এটা করা যাবে না, তারা দেবে না। এজন্য আপনাকে তো অবশ্যই চাপ প্রয়োগ করা দরকার। ফারাক্কা তো একদিনে হয়নি, যতটুকু পাওয়া গেছে সেটা আন্দোলন করেই পাওয়া গেছে…ফারাক্কার ইস্যুটি দেশে-বিদেশে-ইউনাইটেড ন্যাশনসে তোলা হয়েছিল,' যোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই সরকার এসব বিষয়ে (অভিন্ন নদী-তিস্তার পানির হিস্যা) জাতিসংঘে উত্থাপন করে নাই। আমরা অভিন্ন নদীর পানি পাচ্ছি না। এটাতে সমগ্র দেশের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে তাদের জীবন-জীবিকা থেকে। তাদের সবকিছু নির্ভর করে এসব নদীর ওপর। কোটি কোটি মানুষ এই পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-তিস্তার অববাহিকায় বাস করে। তাদের মাছ ধরা, পানি আনা সব কিছু নির্ভর করে এই নদীগুলোর ওপর। সেখানে এসব নদীর হিস্যার ব্যাপারে কোনো কথাই নাই। দেখবেন এসব চুক্তিতে কোথাও এই হিস্যা নিয়ে একটা কথাও নাই। এটা থেকে বোঝা যায় যে, আসলে এই সরকার দেশপ্রেমিক সরকার নয়, বাংলাদেশ বিরোধী একটা সরকার।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'চিকেন নেকটাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর তৈরি করা—এটাতে বাংলাদেশের লাভ কী? কোথায় বলতে পারেন? সম্পূর্ণ লাভ তার (ভারতের)।'

'এটা ভারত বিরোধী নয়। আমাদের প্রশ্ন আমাদের স্বার্থে। কানেকটিভিটি আমার স্বার্থে হতে হবে, আমার স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে হবে না। আমার নদীর পানির ন্যায্য হিস্যাকে বাদ দিয়ে কোনো চুক্তি হবে না,' বলেন তিনি।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'আপনি অভিন্ন নদীর পানির ব্যাপারে কোনো কিছুই করছেন না। সীমান্তে মানুষ হত্যা করছে—আপনি কিছুই বলছেন না। আপনি কী করেছেন? এই চুক্তিতে এসব বিষয়ে একটাও কথা নাই।'

'আমার প্রশ্ন, একজন দেশপ্রেমিককে তার দেশের স্বার্থ আগে দেখতে হবে। উনি (প্রধানমন্ত্রী) নিজেই বলেছেন যে, আমি সব কিছু উজাড় করে দিয়েছি। উজাড় করে দিয়ে তো রেজাল্ট পেয়েছেন। এবারও উজাড় করে দিয়ে এসেছেন, আবার রেজাল্ট পাবেন,' বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, 'অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা, সীমান্ত হত্যা, কানেকটিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত রেল যোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগের সমঝোতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতা, ওষুধ সংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ এবং ভারতের ইনস্পেস ও বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, সমুদ্র বিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতাগুলোতে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে।'

'ভারতকে সকল প্রকার সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ আদায় করতে শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এটা ম্যান্ডেটবিহীন অবৈধ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির বহিঃপ্রকাশ। এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলেছে,' যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

'বিএনপি আন্দোলন থেকে সরে যায়নি' জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিএনপি গত ১৫-১৬ বছরে যে আন্দোলন করেছে, এই আন্দোলনগুলোকে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে কয়েকশ মানুষ প্রাণ দিয়েছে, এই আন্দোলনে ২২-২৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, ২৭ হাজার লোককে দুইদিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু কোনোদিনই ন্যায়ের পথে আন্দোলন ব্যর্থ হয় না, আমাদের এটাতেও অবশ্যই সাফল্য আসবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Penalty less than illegal gains fuels stock manipulation

While fines are intended to deter future offences, questions remain over their effectiveness if the amount is lower than the illegal gain.

12h ago