বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবে, প্রশ্ন কাদেরের

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবে, প্রশ্ন কাদেরের
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

পৃথিবীর কোন দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকে সাংবাদিকরা অবাধে ঢুকতে পারছে প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ওয়েবসাইটে সব আছে আপনার জানার বিষয়। আপনি ভেতরে ঢুকবেন কেন!

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

কাদের বলেন, 'বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী তখন কারাগারে ছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এই ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দিয়েছিল। এর মধ্যে ৭০৩ জন দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী। এদেরকেও ক্ষমা করে দিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত খুনের প্রধান আসামিকে জিয়াউর রহমান ছেড়ে দিয়েছিল।'

তিনি বলেন, 'আজ মির্জা ফখরুল ইসলাম যখন বলেন বাকশালী শাসন, আমি মির্জা ফখরুলকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বাকশাল কোনো একদল নয়। এটা ছিল একটি জাতীয় দল। নামটায় কৃষক আর শ্রমিক যুক্ত করা হয়েছিল—কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। এটাকে বাকশাল বলে একটি গালিতে পরিণত করার দুরভিসন্ধি অনেকেরই ছিল।

'আমি মির্জা ফখরুলকে বলতে চাই, আপনাদের প্রতিষ্ঠাতা, আপনাদের নেতা জিয়াউর রহমান অফিসিয়ালি বঙ্গবন্ধুর কাছে আবেদন করে বাকশালের সদস্য হয়েছিল। সেটার কী জবাব দেবেন? আরও দুএকবার বলেছি জবাব পাইনি,' প্রশ্ন রাখেন কাদের।

তিনি আরও বলেন, 'অহেতুক ঘাঁটাঘাঁটি করলে আপনাদের চেহারাটাই উন্মোচিত হবে।'

গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করেন, বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ, সেখানে ইদানীং দেখা যাচ্ছে যে, তারা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা ছেড়ে নতুন করে ভারত বিরোধিতায় নেমেছে। এই ব্যাপারটি আপনি কীভাবে দেখছেন?

জবাবে কাদের বলেন, 'বিএনপির রাজনৈতিক শত্রু আওয়ামী লীগ, আমরা মনে করি তারা প্রতিপক্ষ।'

তিনি বলেন, 'আজকে পত্রিকায় দেখলাম, বিএনপির ভারত বিরোধিতার বিষয়টি তারা পুনর্বিবেচনা করে দেখছে—বিরোধিতা না করে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা যায় কি না।

উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে মফস্বলে কিন্তু বিএনপি গুলশান-বনানীতে লিফলেট বিতরণ করছে—এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'তাদের সামনে এখন কোনো ইস্যু নেই। তারা আছে, এটা বোঝানোর জন্য শেষ পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থান থেকে লিফলেট বিতরণে আসতে হলো। এটাই মজার ব্যাপার।'

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে আওয়ামী লীগের দলীয় বৈঠক শেষে জানানো হয়েছিল, র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে কিন্তু সম্প্রতি ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছে এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি—এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, 'আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ডিনারের পর সাংবাদিকদের সামনে যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটা যথাযথভাবে প্রকাশিত হয়েছে কি না এটা আমি তার সঙ্গে আলাপ করলেই বুঝতে পারব। তিনি হয়তো সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে পারে যে নিষেধাজ্ঞাটি তুলে নেওয়ার জন্য। তারা তুলে নেবে এমন কথা বলেছে কি না সেটা উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করলেই বোঝা যাবে।'

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ঘাটতির জন্য সব জায়গায় সমস্যা হচ্ছে এবং এর প্রভাব অর্থনীতিসহ বিভিন্ন জায়গায় পড়ছে। আপনি এ ব্যাপারে কী মনে করেন—জবাবে কাদের বলেন, 'জিল্লুর রহমান সাহেবের বক্তব্য তো? বাংলাদেশ বাংলাদেশের মতো চলবে। বাংলাদেশে একটি নির্বাচন হয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে নেই, সেটা অনেকেরই আজকে মেনে নেওয়া কঠিন।'

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ভোটের সংখ্যা ৪২ শতাংশের বেশি, এটাও কম ছিল না। এখন গণতন্ত্রের ঘাটতি কোথায়? সংসদ আছে, সংসদ চলছে। সংসদে বিরোধী দল সরকারের সমালোচনা করছে শুরু করেই। আমরা তো কারও মুখ বন্ধ করে দেইনি। বাইরেও যারা সংসদে নেই; বিএনপিও যখন যা খুশি ফ্রি স্টাইল বক্তব্য দিচ্ছে। তারপর তারা আজকে একের পর এক সমাবেশও করে যাচ্ছে। তারা ২৮ অক্টোবর যা করে গেছে, নির্বাচন বয়কটের পর তাদের ওপর দমন-নিপীড়ন যেটাকে বলে, সেটা তো হয়নি!'

তিনি বলেন, 'আজকে অনেক দেশে গণতন্ত্রের দাবি আছে। বিশ্বের বিভিন্ন নামি-দামি দেশে। বিশ্বে মানবাধিকারের তারা প্রবক্তা, গণতন্ত্রের প্রবক্তা। কলম্বিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আন্দোলন দমন করতে গিয়ে কীভাবে মেয়েদের পেছনের দিকে হাত নিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে পর্যন্ত।

'আজকে আমি আজ জাজিরায় কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্রীর প্রতিক্রিয়া শুনছিলাম। সে বললো, এক ধরনের কেমিক্যাল স্প্রে ছিটানোর পর অনেক ছাত্র-ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল এবং তাদের হাসপাতালে নিতে হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার তো বিএনপির সঙ্গে এই ব্যবহার করেনি! নির্বাচন বয়কট করার পরও যেখানেই তারা সভা-সমাবেশ করতে চেয়েছে, করতে পেরেছে। বিনা বাধায়, আমরা তো কোনো প্রকাশ হস্তক্ষেপ, দমন-নিপীড়ন—যেগুলো তাদের মুখে ভাষা, এগুলো তো বাস্তবে নেই। তাহলে গণতন্ত্রের ঘাটতি কোথায়,' পাল্টা প্রশ্ন করেন কাদের।

গণতন্ত্রের বাংলাদেশ অনেকে দেশের তুলনায় সারপ্লাসে আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

খেলাপি ঋণসহ অন্যান্য সূচকের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'বিশ্ব পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থনৈতিক সংকট যুদ্ধজনিত কারণে। আজকে মধ্যপ্রাচ্য, সুদান, ইউক্রেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে যুদ্ধ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে টিকে থাকাটাই কঠিন। অর্থনীতির ব্যাপারটা খুবই জটিল বিষয়।

'নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে সমন্বয় করা, এখানে অনেক সময় ওঠা-নামা করতে পারে। আন্তরিকভাবে যদি সরকার সচেষ্ট হয়, তাহলে এর মধ্যে অ্যাকোমোডেট করার মতো পরিস্থিতি আমরা সৃষ্টি করতে পারি এবং এ ব্যাপারে সরকারের চেষ্টা, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কাজগুলো প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে,' যোগ করেন তিনি।

ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের প্রভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে কাদের বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যুক্তি দিয়ে বলেছেন। এই সাত টাকা বৃদ্ধিটা প্রয়োজন ছিল। এখানে মূল্যস্ফীতি একটি ফ্যাক্টর।'

এতে খুব প্রভাব পড়বে তা নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'বাজার পরিস্থিতি ওঠা-নামা করে, এটা ওঠা-নামা করবেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও বেশি করে এই প্রবণতা দৃশ্যমান হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে সব পরিস্থিতিকে সহনীয় করে রাখা যায় এবং সেই চেষ্টাই সরকার করে যাচ্ছে।'

সংবাদ এসেছে, পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি বিদেশে বাড়ি করেছে—এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বিএনপি সরকারের আমলে অর্থ পাচারের ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'তাদেরটা তো হাতেনাতে ধরা পড়েছে। সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিং, এটা কি আওয়ামী লীগ করেছে?'

গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে কাদের আরও বলেন, 'এখন যারা করছে কেউ রেহাই পাবে। দুর্নীতি করলে কারও রেহাই হবে না। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণু।'

বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে 'রিজার্ভ এখন কম না' মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'এটা আরও বাড়তেও পারে। কারণ এখন আমাদের রপ্তানি আয় বাড়ছে, আমাদের রেমিট্যান্সও বাড়ছে। এই মুহূর্তে যে প্রবণতা। এগুলো বাড়লে রিজার্ভও বাড়বে।'

সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে দেওয়া হয় না—এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, 'পৃথিবীর কোন দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকে ঢুকতে পারছে অবাধে? ভারতের ফেডারেল ব্যাংকে কি ঢুকতে পারছে কেউ? কেন ঢুকবে? সব ওয়েবসাইটে আছে আপনার জানার বিষয়। আপনি ভেতরে ঢুকবেন কেন!'

Comments

The Daily Star  | English
CHT accord implementation

CHT Accord implementation a pressing need

The CHT Accord remains unfulfilled 27 years later, leaving the Jumma people in turmoil.

11h ago