নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের পছন্দের ৩ প্রার্থীর হার

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট বাক্স পাঠানো হয়। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ওসমান পরিবার সমর্থিত তিনজন প্রার্থীই পরাজিত হয়েছেন। বরং স্থানীয় দুই সংসদ সদস্যের প্রবল বিরোধিতার মুখেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির এক নেতা।

প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সমর্থিতদের এই পরাজয়কে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির জন্য বিশেষ বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে গতকাল বুধবার বন্দর উপজেলায় ভোট হয়েছে। ভোট পড়েছে ৪৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। মামলা জটিলতার কারণে সদর উপজেলার নির্বাচন স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন।

এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন চারজন। তারা হলেন গতবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদ (দোয়াত-কলম), দুইবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি (বহিষ্কৃত) আতাউর রহমান মুকুল (চিংড়ি), জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মাকসুদ হোসেন (আনারস) ও মাকসুদের ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ (হেলিকপ্টার)।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন দুইবারের ভাইস চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু (উড়োজাহাজ), বন্দর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জুয়েল (টিউবওয়েল), মো. আলমগীর হোসেন (মাইক) ও মোশাঈদ রহমান (তালা)।

সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর একজন বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা হোসেন (ফুটবল) এবং আরেকজন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার (কলস)।

উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আনারস প্রতীকের মাকসুদ হোসেন। ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন যথাক্রমে টিউবওয়েল প্রতীকের মো. আলমগীর হোসেন ও ফুটবল প্রতীকের ছালিমা হোসেন।

বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এক অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান চেয়ারম্যান পদে এমএ রশিদকে নিজের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। সেলিম ওসমান নিজে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেও তার দলের নেতা মাকসুদকে সমর্থন না দিয়ে রশিদের পক্ষে অনুসারীদের কাজ করার নির্দেশ দেন।

গত পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন। তার জয়ের পথ সুগম করতে সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানান সেলিম ওসমান। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক সিদ্ধান্তে রশিদকে সমর্থন দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। তবে থেকে যান এক সময়ের সেলিম ওসমানের অনুসারী বলে পরিচিত আতাউর রহমান মুকুল ও মাকসুদ হোসেন।

এক সময়ের এই দুই অনুসারী নির্বাচন সরে না সরায় প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝাড়েন সেলিম ওসমান। তার প্রয়াত বড়ভাই নাসিম ওসমানের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত ৩০ এপ্রিল বন্দরে এক অনুষ্ঠানে মুকুলকে উদ্দেশ্য করে সেলিম বলেন, 'এক বিএনপি নেতা বঙ্গবন্ধুকে অপমান করে এই এলাকা থেকে নির্বাচন করার কলিজাটা কোথায় পায়? কোথায় আমার আওয়ামী লীগের কর্মীরা? হাতে কি চুড়ি পরেছেন?'

আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী মাকসুদকে ইঙ্গিত করে ওই সংসদ সদস্য বলেন, 'একজন রাজাকার সন্তান, জমি দখলকারী; তার পোস্টার কী করে এলাকায় লাগে, শত শত গাড়ি বের করে? মানুষ অবজেকশন দিলে উনি বলেন, 'সরি' আর নির্বাচন কমিশন ওনাকে ছেড়ে দেন। প্রশাসনের লোকজন ঘুমায়ে গেলে হবে না, এগুলা দেখতে হবে।'

এই অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাচনে পছন্দের তিন প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার সহকর্মী রশীদ ভাই (চেয়ারম্যান প্রার্থী) একজন মুক্তিযোদ্ধা। নাসিম ওসমান একজন মুক্তিযোদ্ধা, নাসিম ওসমানের সহকর্মী সানাউল্লাহ সানু (ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী)। আমাদের ছোট শান্তা আমাদের মেয়ের মতো। এইখানে চারজন ইউপি চেয়ারম্যান আছেন, একজন মুখ খুলে বললেন কিন্তু অন্যরা বললেন না। কিন্তু ওনারা প্রতিজ্ঞা করে বলেছেন, এই চার ইউনিয়ন থেকে সমস্ত ভোট স্বাধীনতার পক্ষে যাবে।'

একই অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেন, 'এইখানে এসে শুনলাম, কেউ কেউ এমন এমন বক্তব্য দিচ্ছেন আর এমন এমন কথা বলছেন, ওই কথাগুলো যদি আমলে নেই তাহলে আগামীকাল থেকে কেউ মাঠে নামতে পারবেন না। আমি সেলিম ওসমান না, আমরা জানি কী করতে হবে। আমরা চাই সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হোক। যার কপালে লেখা আছে সে পাস করবে। কিন্তু কথাবার্তা সীমানার মধ্যে রাখেন।'

শামীম ওসমান প্রকাশ্যে কোনো প্রচারণায় না থাকলেও তার অনুসারী আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রশিদ ও সানুর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছেন।

অন্যদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাসিম ওসমানের পরিবারের সদস্যরা সমর্থন দেন মোশাঈদ রহমান মুকিতকে। নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান ও ছেলে আজমেরী ওসমান তার প্রচারণায় অংশ নেন।

যদিও, ওসমান পরিবারের পছন্দের এই তিনজন প্রার্থীই নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে রশিদ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮৩৮ ভোট। তার প্রাপ্ত ভোটের বিপরীতে দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মাকসুদ। তিনি পেয়েছেন ২৯ হাজার ৮৭৩ ভোট।

এছাড়া, আতাউর রহমান মুকুল ১২ হাজার ৬২২ ভোট এবং মাহমুদুল হাসান ২৫৫ ভোট পেয়েছেন।

এদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. আলমগীর ১৭ হাজার ৬০৬ ভোট বিজয়ী হয়েছেন। এ পদে ওসমান পরিবারের সমর্থিত দুই প্রার্থীর সানাউল্লাহ সানু পেয়েছেন ১৭ হাজার ১ ভোট এবং মোশাঈদ রহমান ৮ হাজার ৪০৬ ভোট পেয়েছেন।

তবে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সেলিম ওসমানের পছন্দের প্রার্থী ছালিমা হোসেন পেয়েছেন ২৯ হাজার ৪৫৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। পরাজিত কলস প্রতীকের প্রার্থী মাহমুদা আক্তার ২৬ হাজার ২৮৪ ভোট পেয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

BTRC directs telcos to provide 1GB free internet on July 18

The internet regulator has directed all mobile phone operators to offer 1GB of free internet to users on July 18, marking “Free Internet Day” as part of a government initiative to commemorate the July Uprising.

48m ago