‘আ. লীগের পরাজিত নেতারাই ভোট ডাকাতির সংবাদ তুলে ধরছেন’

রিজভী
শুক্রবার নয়াপল্টনে দলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এবার যে নির্বাচনের নামে ভোট ডাকাতি হয়েছে, আওয়ামী লীগের পরাজিত নেতারা তা নিজেরাই সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরছেন। 

আজ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উল্লেখ করে বলেন, 'ডামি প্রার্থী, ডামি ভোটার, ডামি এজেন্ট, ডামি পর্যবেক্ষক, ডামি ফলাফল, ডামি এমপি, ডামি শপথের মধ্য দিয়ে গতকাল ওয়ান ইলেভেনের কৃষ্ণতম দিবসে একদলীয় ফ্যাসিবাদের হুংকারে আরেকটি কৃষ্ণতম মেকি সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'ভুয়া ভোট শেষ হতে না হতেই শেখ হাসিনা নিশিরাতের সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই গেজেট জারি, তড়িঘড়ি শপথ ও নজিরবিহীন দ্রুততায় সরকার গঠনের ঘটনা প্রমাণ করে এক অজানা ভীতি—আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাকে। সব কিছু অবৈধ—ভুয়া—আর জালিয়াতির আবর্তে তাসের ঘরের ওপর সিংহাসন পাতলে এমন নির্ঘুম অনিশ্চয়তা আতঙ্কে জীবন পতিত হয়।'

'দেশের জনগণ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে' মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'জনগণ ডামি নির্বাচন বর্জন করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, ফলাফল, শপথ, সংসদ, সরকার সবকিছুই প্রত্যাখ্যাত, অগ্রহণযোগ্য।'

'৭ জানুয়ারি তথাকথিত নির্বাচনটি ছিল গণতন্ত্রকামী জনগণের আন্দোলনের পক্ষে এবং ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ডামি নির্বাচন বর্জনের পক্ষে একটি সুস্পষ্ট গণরায়। এই ডামি সরকার ওয়ান ইলেভেনের ধারাবাহিকতা মাত্র,' যোগ করেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, '২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশার মাধ্যমে দেশটাকে প্রভুদের করদ রাজ্যে পরিণত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আবারও সেই একইদিনে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করল ডামি ভোটের অসাংবিধানিক, প্রভুদের  আজ্ঞাবাহী হাসিনার সরকার। দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র তারা সফল করল।'

তিনি বলেন, 'দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব—গণতন্ত্রের বিনিময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশালের দ্বিতীয় সংস্করণ চালু করলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ—ডামি লীগ—আমরা আর মামুরা মিলে দেশে ঘোষণা ছাড়াই একদলীয় সংসদীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করলেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশি পত্র-পত্রিকা মিডিয়া এবং রাজনীতি বিশ্লেষকরা সোচ্চার কণ্ঠে বলছে, বাংলাদেশে একতরফা একদলীয় ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে একদলীয় রাষ্ট্র কায়েম করেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার এই বাকশালীয় ডামি তাসের ঘর জনগণ চূর্ণ করে দেয়ার প্রস্ততি নিচ্ছে।'

এই সিনিয়র নেতা বলেন, 'নির্বাচনের দিনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দিবানিদ্রায় থাকা পাতানো ডামি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আওয়ামী লীগ আর তাদের ডামি শরীকদের মধ্যেই শুরু হয়েছে গৃহদাহ। গত বুধবার শেখ হাসিনা গতবার রাতে ভোট হওয়ার স্বীকারোক্তি দিয়ে "এবার দিনের ভোট রাতে হয়েছে বলার ক্ষমতা নেই" বলে তাদের দলের অভ্যন্তরীন বিবাদ—গৃহদাহ নিরসন করতে চাইলেও ব্যর্থ হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের পরাজিত নেতারাই শেখ হাসিনাকে অবৈধ ভোটের প্রধানমন্ত্রী উপাধি দিচ্ছেন। এবার যে নির্বাচনের নামে ভোট ডাকাতি হয়েছে তা নিজেরাই সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরছেন। এতদিন দেশের সব জনগণ বলেছে, আমরা বলেছি। আর এখন তারা নিজেরাই গত তিনটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতির কথা বলছেন।'

'সংসদে বিদ্যুৎ বিক্রি করা এক গানের শিল্পী বলেছেন, মৃত মানুষ বিদেশে আছে তাদের ভোটও দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ও দলটির প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেছেন, নির্বাচনে অলৌকিক শক্তি কাজ করায় ভোটে কারচুপি হয়েছে, একচেটিয়া ভোট ডাকাতি হয়েছে। বরগুনা—১ আসনের আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেছেন, ভোটের ফল একহাতে তৈরি করা হয়েছে। একজন বলেছেন, গণভবন থেকে ফলাফল এসেছে। পরাজিত কুইনস পার্টির এক নেতা বলেছেন, শেখ হাসিনা তামাশার নাটক করেছেন। তার ক্ষমতায় থাকার লিপ্সা পূর্ণ করতে আমাদের সিঁড়ি বানিয়ে এখন ছুঁড়ে ফেলেছে। কাকে কত টাকা দিয়ে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছে তা প্রকাশ্যে হিসাব দিচ্ছেন পরাজিত প্রার্থীরা,' যোগ করেন তিনি।

রিজভী আরও বলেন, 'থলের বেড়াল সব বের হচ্ছে। সব অপকর্মের খবর ফাঁস হচ্ছে। এতদিন বাংলাদেশ তথা বিএনপি বলেছে শেখ হাসিনা ভোট ডাকাত। আর এখন আওয়ামী লীগের লোকজনই বলছে, শেখ হাসিনা ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট ডাকাত।'

'বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমর্থন অব্যাহত রেখেছে' মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'প্রতারণার মাধ্যমে শেখ হাসিনার উপহার দেওয়া দিবানিদ্রায় থাকা নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ভেজাল নির্বাচন ও কণ্ঠরোধের গণতন্ত্র তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। বিরোধীদের সমালোচনার ওপর সরকারের বুলডোজার চালানোর ঘটনা সর্বজনবিদিত। এই প্রতারণার ডামি নির্বাচনকে কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। অচিরেই এই সরকার চোরাবালিতে হারিয়ে যাবে। কারণ এরা অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য নিপীড়ণের সব রেকর্ড ভেঙে বিশ্বমানবতার শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এদের নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচার ও উৎপীড়নের কাহিনী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'যেহেতু জনসমর্থনহীন সরকার জবাবদিহিতার ধার ধারে না, সেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিনদিন বেপরোয়া ও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এরা এমন একটি দুর্নীতির সংস্কৃতি তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে তারা কল্পস্বর্গ বানিয়ে আনন্দে আত্মহারা। আর এদিকে সাধারণ মানুষ ক্ষুধা, দারিদ্র আর অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

17h ago