গণতন্ত্র-মানবাধিকার-ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে: রিজভী

রুহুল কবির রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেছেন রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গণতন্ত্র-মানবাধিকার-ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

আজ মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। 

এ সময় রিজভী বলেন, 'গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে জনগণের অভূতপূর্ব নীরব প্রতিবাদে একটি গণবর্জিত প্রহসনের প্রকাশ্য ভোট ডাকাতি দেখল দেশবাসীসহ গোটা বিশ্ব। 'ভয়-ভীতি, জেল-জুলুম নির্যাতন-প্রলোভন ও সরকারের চাপ উপেক্ষা করে ভোট না দিয়ে জনগণ নির্বাচনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১৮ কোটি মানুষের দাবি ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের আহ্বান পরোয়া না করে পূর্বনির্ধারিত ফলাফলের একদলীয় একতরফা ভোটার বর্জিত ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে মূলত বিজয় হয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত ভোট বর্জনকারী গণতন্ত্রকামী বীর জনতার।'

'৭ জানুয়ারি একটি জঘন্য কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে' মন্তব্য করে রিজভী বলেন, 'এই দিনে ভোট বর্জন করে দেশের সর্বস্তরের মানুষ আওয়ামী লীগকে লালকার্ড দেখিয়েছে। ৭ জানুয়ারি গভীর রাত থেকে চুরি-ডাকাতি, জালভোট, শিশু-কিশোর ভোট, রাস্তা থেকে পথিক ধরে নিয়ে ভোট, একই লাইন থেকে ঘুরেফিরে বারবার জাল ভোট দিয়েও বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোটের ঘোষণা দেওয়া হয়।'

'গণভবনের চাপে আবার এক ঘণ্টা পর ৪০ শতাংশ এবং গতকাল দুপুরে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোটের গোঁজামিলের ভৌতিক হিসাব বানানোর হাস্যকর নির্বাচন ভোটের ইতিহাসে কলঙ্ক দিল ডামি সরকার,' বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, 'জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই অংশগ্রহণহীন ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে। বিশ্বের সব মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনকে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও ভোটার সম্পর্কহীন পুরোপুরি "ওয়ান উইম্যান শো" ভোট বলে আখ্যায়িত করেছে।'

'দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ পাতানো ডামি নির্বাচনের ফাঁদে পা দেয়নি' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সারাদেশের ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল ভোটারশূন্য। শেখ হাসিনার এই প্রহসনমূলক নির্বাচন দেশকে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা ব্রিটিশ পর্যবেক্ষক জেজ কৌলসন সাংবাদিকদের বলেছেন, আই ফাউন্ড দ্য নর্থ কোরিয়া মডেল হিয়ার। বাংলাদেশে উত্তর কোরিয়া স্টাইলের একদলীয় নির্বাচন হয়েছে।'

'২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর আবারও অভিনব কায়দায় বিরোধী দলহীন, ভোটারবিহীন ভোট ডাকাতির একটি ডামি নির্বাচন করার জন্য গত ৫ বছর গণবিচ্ছিন্ন শেখ হাসিনা বিএনপিসহ বিরোধী দল ও ভিন্নমতের প্রতিটি মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

'কারা হেফাজতে প্রতিদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের কারো না কারো মৃত্যু সংবাদ আসছে' জানিয়ে এই সিনিয়র নেতা বলেন, 'আইন, আদালত, পুলিশ, সিভিল প্রশাসন সবকিছু দলীয়করণ করে সব মৌলিক অধিকার কবর দিয়ে ভয়ের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। লুটপাট করে দেশকে দেউলিয়া বানিয়েছে। সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী করে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। দেশের জনগণকে ভোটহীন করে রিফিউজিতে পরিণত করেছে।'

তিনি বলেন, 'ডামি নির্বাচনের ডামি প্রার্থীরা এখন ডামি পার্লামেন্টে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদের কোনো বৈধতা নেই। এক মুহূর্তে ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। এই অবৈধ সরকারকে জনগণ মানে না। আমি এই মুহূর্তে পাতানো গণবিরোধী ডামি নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় জনগণের চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আরও দুর্বার করে এই ডামি সরকারের পতন ঘটানো হবে।'

রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'ঘোষিত জয়-পরাজয় ও ভোটের দেখানো সংখ্যা নিয়ে বিশ্লেষণ করার বা আনন্দ-বেদনা প্রকাশের কিছু নেই। কাউকে কিঞ্চিৎ দেবে এবং কাউকে বঞ্চিত করবে, এই ধারার এক স্বেচ্ছাচারী একতরফা প্রহসনে শেখ হাসিনা কাউকে জিতিয়েছেন, কাউকে হারিয়েছেন। সবই ভেলকিবাজি ও তার মর্জির ফল। এর সঙ্গে জনগণ, ভোটার বা অন্য কারোর কোনো সম্পর্কই নেই।'

'সাধারণ মানুষের এই বর্জন বর্তমান "ডামিক্রেসি সরকার" ও শাসকগোষ্ঠীর প্রতি নীরব গণ-অনাস্থার সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। দৃশ্যমান এই অনাস্থা ক্ষমতাসীনদের ন্যূনতম বৈধতার ভিত্তি তাসের ঘরের মতো গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ভোটার সংখ্যা বাড়ানোতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সরকার একটি স্বাধীন দেশের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করেছে এবং প্রজাতন্ত্রের জনগণের ওপর কলঙ্ক লেপন করেছে,' বলেন তিনি।

রিজভী আরও বলেন, 'নির্বাচনে সরকার ভয়াবহ অন্যায় করার পরও বিজয়ের গৌরব উদযাপন করছে, আত্মগরিমা প্রকাশ করছে যা সরকারের অধঃপতিত মনোবৃত্তির প্রকাশ। ক্ষমতা ধরে রাখার উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা এবং ভোটার অংশগ্রহণকে বাড়িয়ে দেখানোই স্বৈরাচারের অপকৌশল। বিশ্বের সব স্বৈরশাসকই জনগণের সম্মতি ও সমর্থনের প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করে নির্বাচনে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। বর্তমান সরকারও তার ব্যতিক্রম নয় বরং অন্যতম দৃষ্টান্ত।'

'ভোট ডাকাত সরকার ভোট প্রদানের শতকরা হার যতই বাড়িয়ে বলুক, এটা এখন জনগণের কাছে হাস্যকর হয়ে গেছে,' যোগ করেন তিনি।

রিজভী বলেন, 'দুর্নীতিবাজ "ডামি সরকার" দিয়ে দেশ চলতে পারে না। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং ১২ কোটি কোটি মানুষের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার পুনর্প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আপনি যে দল কিংবা যে মতের হোন, আমাদের আন্দোলনকে বেগবান করতে আমাদের হাতকে শক্তিশালী করুন। আমাদের সঙ্গে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিন। আপনার সাধ্য ও সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দলের চলমান আন্দোলনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।'

Comments

The Daily Star  | English

Poll irregularities: Sedition among 3 new charges added against three ex-CECs

BNP filed a case against 24 individuals, including three former chief election commissioners, 10 election commissioners, and top government and police officials, for their alleged role in irregularities during national polls in 2014, 2018, and 2024

22m ago