‘বিএনপি নেতাকর্মীদের সাজানো মামলায় জেলে রাখার গোমর ফাঁস করেছেন কৃষিমন্ত্রী’

রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের মিথ্যা সাজানো মামলায় জেলে পুরে এবং বাড়ি-ঘর ছাড়া করে তাড়িয়ে বেড়ানোর গোমর ফাঁস করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। 

আজ সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, 'একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, সিট ভাগাভাগির উদ্ভট তামাশার নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন ও কণ্টকমুক্ত করার জন্যই বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলে রাখা হয়েছে। তিনি বলেছেন যে, "আমরা চিন্তাভাবনা করেই এ কাজ করেছি। তাদের জেলে না ভরলে দেশ অচল হয়ে যেত। হরতালের দিন গাড়ি চলত না"।'

'এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদের মতো কৃষিমন্ত্রীর এই হরষের স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা করে পুলিশি তাণ্ডব-হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে চলমান যত সহিংসতা, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, হত্যা, বিএনপিসহ বিরোধী দলের বাড়িঘরে হামলা-তল্লাশি, ভাঙচুর-গৃহছাড়া-আটক বাণিজ্য সবকিছু শেখ হাসিনার পূর্ব পরিকল্পিত,' যোগ করেন তিনি।

বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, 'শেষ পর্যন্ত এই প্রভাবশালী মন্ত্রী হাটে হাঁড়ি ভেঙে স্বীকার করলেন যে, দেশের আইন-আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন-কোর্ট কাচারি-বিচার-আচার সবকিছুই আওয়ামী মাফিয়া সরকারের হাতে বন্দী। বিচার ব্যবস্থা আর আওয়ামী লীগ একাকার হয়ে গেছে, পৃথক কোনো সত্ত্বা নেই।'

'বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় লাখ মামলা আর অর্ধকোটি আসামি করা হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'কারাগারে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে সরকারের ব্লুপ্রিন্টে। বিনা কারণে নির্বিচারে বিএনপিসহ আন্দোলনরত দলগুলোর নেতাকর্মীদের কারাগারে আটক ও নির্যাতন, ইচ্ছামাফিক জেল ও জামিন বিচার বিভাগের অস্তিত্বকেই বিলীন করে দিয়েছে।'

'বিচার বিভাগ আইনের গতিতে নয়, চলছে গণভবনের গতিতে। স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আইনের শাসনের আওয়ামী নমুনা কৃষিমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট হয়েছে। নির্বিঘ্নে নির্বাচন করতে পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশে ২০ হাজার নির্দোষ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শেখ হাসিনা চাইলে গ্রেপ্তারকৃতদের এক রাতেই ছেড়ে দিতে পারেন। ২০ হাজার নিরপরাধ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা এবং সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করলে এক রাতেই মুক্তি দেওয়া কোনো গণতান্ত্রিক দেশে, কোনো আইনের শাসনের দেশে এমনকি ডিকটেটর শাসিত অনেক দেশেও সম্ভব নয়,' যোগ করেন তিনি।

'বর্তমান আওয়ামী মাফিয়া সরকার এক অদ্ভুত স্বৈরতান্ত্রিক এবং একনায়কতান্ত্রিক সরকার। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় এই সরকারকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হবে,' মন্তব্য করেন তিনি।

রিজভী বলেন, 'শেখ হাসিনা আজীবন ক্ষমতায় থাকার লিপ্সায় চারবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে ফরমায়েশি রায়ে কারারুদ্ধ করে রেখে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে। সবকিছুর হিসাব রাখছে দেশের জনগণ। এই নজিরবিহীন অবিচারের বিচার একদিন হবেই হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিক ও লেখক এম জে আকবর বাংলাদেশে এসে গতকাল এক সেমিনার শেষে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে স্তুতি আর প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন। তার বক্তৃতা শুনে তার সম্পর্কে যারা অবগত তারা রীতিমতো বিস্মিত-হতবাক হয়েছেন। এম জে আকবরের মতো একজন প্রাজ্ঞ সাংবাদিক ও রাজনীতিক কি করে সবকিছু জেনেশুনেও একনায়কতন্ত্রের পক্ষে, ১৮ কোটি বাংলাদেশির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বলেন। জনসমর্থনহীন শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকা আপনাদের কী স্বার্থ নিশ্চিত করে?'

'তার মন্তব্য বাংলাদেশের জনগণকে অবজ্ঞা করার শামিল। ভারত কি তাহলে বাংলাদেশের জনগণকে উপেক্ষা করে শুধু আওয়ামী লীগকেই বন্ধুত্বের বন্ধনে আঁকড়ে রাখতে চায়? এম জে আকবরের মন্তব্য কর্তৃত্বসুলভ ও বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছাকে অসম্মান করা। বাংলাদেশ কোনো স্যাটেলাইট স্টেট নয়। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ,' বলেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, 'আমরা তো ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাই না। বাংলাদেশি নাগরিকরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সমমর্যাদার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ায় বিশ্বাস করে।'

Comments

The Daily Star  | English
changes in Bangladesh media industry

Allegiance shifts, so do faces at the helm

Bangladesh’s media industry has seen some major shake-ups, with more than two dozen outlets shuffling leadership positions following the July mass uprising last year.

18h ago