চট্টগ্রাম-১২

ওসির বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র সামশুলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আ. লীগ প্রার্থীর

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন যে, তিনি (ওসি) স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছেন। 
আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন যে, তিনি (ওসি) স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছেন। 

স্থানীয়দের মতে, এ ঘটনার তাৎপর্য অপরিসীম। কেননা এটি ইঙ্গিত দেয় যে, এই আসনে আগামী দিনগুলোতে নির্বাচনের গতিপথ কীভাবে মোড় নেবে।  

ইতোমধ্যে দুই প্রার্থীর মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে, যা নির্বাচনী প্রচারণায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পাশাপাশি উভয় প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সামশুল হক বর্তমান সংসদের হুইপ এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার চট্টগ্রাম-১২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

বৃহস্পতিবার দায়ের করা আবেদনে মোতাহেরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তিনদিন আগে ওসি নেজাম উদ্দিন পটিয়ার রশিদাবাদে হুইপের গ্রামের বাড়িতে তার সঙ্গে 'গোপন' বৈঠক করেন এবং হুইপ সামশুল তার ক্ষমতা ব্যবহার করে ১২ নভেম্বর পটিয়া থানার আগের ওসিকে বদলি করেন এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্তে নেজাম উদ্দিনকে পটিয়া থানায় বদলি করে আনেন।

আবেদনে মোতাহেরুল ইসলাম জানান, ওসি নেজাম উদ্দিন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়ে আসছেন। নেজাম উদ্দিন পটিয়া থানার ওসি পদে থাকলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে নেজাম উদ্দিনকে পটিয়া থানা থেকে বদলির প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে মোতাহেরুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করলে তার সহকারী রিসিভ করে বলেন, মোতাহেরুল ইসলাম ব্যস্ত আছেন, একটু পর তিনি নিজে আপনাকে কল করবেন। পরে আরও কয়েক দফা কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অপরদিকে হুইপ সামশুল হক দেশে না থাকায় তার মন্তব্য জানা যায়নি।

নিজের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ বিষয়ে পটিয়া থানার ওসি নেজাম উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী কাজ করছেন। বলেন, 'আমরা এখন নির্বাচন কমিশনের অধীন।'  

হুইপের সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগ বিষয়ে ওসি বলেন, 'এই অভিযোগ সত্য নয়। কেউ প্রমাণ করতে পারলে আমি চাকরি থেকে পদত্যাগ করব।'  

হুইপের তদবিরে পটিয়া থানায় বদলি হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমার কর্তৃপক্ষ পুলিশ বিভাগ, হুইপ নন।'

চট্টগ্রাম-১২ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোতাহেরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, পটিয়া থানার ওসি একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছেন।'

তিনি বলেন, 'অভিযোগ যে কেউ করতে পারেন। অভিযোগ সত্য কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।'

এদিকে, চট্টগ্রাম-১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানান স্থানীয়রা।

শামসুল হক টানা তিন মেয়াদে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর তার বেশ ভালো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়াও, উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এলাকায় তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। যে কারণে সামশুল হকের পক্ষ নির্বাচনী লড়াইয়ে শক্ত অবস্থানে থাকবেন।

স্থানীয়দের মতে, তিন বারের সংসদ সদস্য হিসেবে সামশুল হক এলাকায় বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়েছেন, যার জন্য তিনি ভোটারদের সহানুভূতি পেতে পারেন।

অপরদিকে, মোতাহেরুল ইসলাম পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং দলের একজন প্রবীণ ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা হিসেবে তিনি তৃণমূল ভোটারদের মনোভাব বেশ ভালোই বোঝেন।  

মোতাহেরুল ইসলামের অনুসারীদের মতে, পটিয়ার আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মীরা সামশুল হককে বহিরাগত বলে মনে করে, যিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছেন বলে তাদের অভিযোগ। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের মধ্য থেকে কাউকে প্রার্থী করা। তাই তারা জানান, এবার দল মোতাহেরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়ায় তাদের সেই দাবি পূরণ হয়েছে।    

পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম শামসুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলামের বিজয়ের জন্য দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ।'

তিনি বলেন, 'সামশুল হককে তিন মেয়াদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল এবং এখন দল একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা মোতাহেরুল ইসলামকে মনোনয়ন দিয়েছে। এতে সামশুল হকের বরং খুশিই হওয়া উচিত ছিল, কারণ তাকে আমরা তিনবার নির্বাচিত করেছি। আমরা আশা করি, এবার দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সামশুল হক তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন।'   

সামশুল হক শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকলে কঠিন লড়াই হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুজ্জামান বলেন, 'মোতাহেরুল ইসলামের জয়ের জন্য আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় আর বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় কঠিন লড়াইয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই।'

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পটিয়ার কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, সামশুল হক শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকলে মোতাহেরুল ইসলাম ও সামশুল হকের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

এ বিষয়ে জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সবুজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একদিকে হুইপ সামশুল হক পটিয়ার জনগণের কাছে জনপ্রিয়, অন্যদিকে মোতাহেরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে ভালো লড়াই অপেক্ষা করছে।'   

'আমরা একটি উৎসবমুখর, জমজমাট এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আশা করছি', বলেন তিনি।

Comments