ফেসবুকের লাইক-কমেন্টের বাটন টিপলে বিজয় আসবে না: নুরুল হক নুর

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে জনগণ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
‘গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মতপ্রকাশ ও ভোটাধিকার হরণের প্রতিবাদে’ গণ অধিকার পরিষদের গানের মিছিল। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে জনগণ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।

নুর বলেছেন, 'ঘরে বসে ফেসবুকের লাইক-কমেন্টের বাটন টিপলে বিজয় আসবে না। রাস্তায় নামতে হবে। আন্দোলনে শামিল হতে হবে। ইউরোপ আমেরিকার এত ঠেকা পড়ে নাই যে আপনার দেশের সরকারকে কিক আউট করবে। জনগণ যদি তাদের অধিকার আদায়ে রাস্তায় না নামে, রাস্তায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে, ইউরোপ-আমেরিকা কিচ্ছু করবে না।'

আজ শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বিজয় নগর পানির ট্যাংকির মোড় থেকে 'গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মতপ্রকাশ ও ভোটাধিকার হরণের প্রতিবাদে' প্রতিবাদী গানের মিছিল বের করে যুব অধিকার পরিষদ। মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ কথা বলেন নুর।

নুর বলেন, 'পরনির্ভরশীল না হয়ে রাস্তায় নামুন। আন্দোলনকে বেগবান করুন। আমরা যতদিন আন্দোলনে আছি ইউরোপ আমেরিকা সবাই কথা বলবে। সবাই আমাদের পাশে থাকবে। কাজেই আন্দোলনের পাশাপাশি ইউরোপ-আমেরিকা যে ব্যবস্থা নেবে সেইটা আমাদের জন্য বোনাস। দয়া করে ইউরোপ-আমেরিকার প্রতি নির্ভরশীল হয়ে আন্দোলনে ঢিলেমি দেবেন না। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমাদের বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে হবে।'

নুর মনে করেন 'মোমেন্টাম' তৈরি করতে পারলে জনগণ রাস্তায় নেমে আসবে। তাই সবার প্রতি আন্দোলনের সেই ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।

'নির্বাচনের আগেই সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে'

বক্তব্যে নুর বলেন, 'ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, বিশ্বের অনেক দেশেই নাকি বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন হয়। আমরা কম্বোডিয়াতে দেখেছি বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন। সরকারি দল ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল তৈরি করে প্রহসনের নির্বাচন করছে। আজ এখানেই আমরা একই চিত্র দেখতে পারছি। সরকারি দল ঠিক করছে কারা কারা প্রার্থী হবে। কোন কোন দল নির্বাচনে যাবে, কারা বিরোধী দল হবে। নির্বাচনের আগেই সব ঠিকঠাক হয়ে যাচ্ছে।'

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভক্ত করে সরকার রামরাজত্ব কায়েম করেছে বলেও মন্তব্য করেন নুর। বলেন, 'ইসলামি দলগুলোকে জোর করে, শর্ত দিয়ে নির্বাচনে নিয়ে যাচ্ছে। তেমনিভাবে আমাদেরও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা বার বার বলেছি আপসহীন তারুণ্য এই প্রতিবাদের সাথে আপস করবে না। প্রয়োজনে আমরা জেল-জুলুম কারাগারকেই বেছে নেব।'

বিজয় নগর মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের সময় গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। ছবি: স্টার

দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর 'অত্যাচার-নিপীড়নের' অভিযোগ তুলে নুর বলেন, 'আজকে এতটা অস্তিত্ব সংকটে আওয়ামী লীগ পড়েছে, এতটা ভয়ের মধ্যে আছে যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পাকিস্তানি আল বদর, আল শামসের মতো নব্য রাজাকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবি দিয়ে তাদের ধরিয়ে ধরিয়ে এলাকাছাড়া করে, বাড়িঘরে হামলা করে একটা ভয়ার্ত পরিবেশ তৈরি করছে।

'কিন্তু এর মধ্যেই এই ঢাকার রাজপথে যুব অধিকার পরিষদের সংগ্রামী তরুণরা এই শেকল ভাঙার গান শুরু করে দিয়েছে।

এ সময় নজরুলের গানের চরণ উদ্ধৃত করে ‍নুর বলেন, 'যতই ভয় দেখাও আমরা সেই ভয়ের টুটি চেপে ধরেই তোমাদের লয় করব। আজকের সময়ে যদি কবি নজরুল বেঁচে থাকতেন এই বিপ্লবী গান, কবিতা কি তিনি লিখতে পারতেন? শেখ হাসিনার বাকশালী আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনেক আগেই কবি নজরুলকে কেরাণীগঞ্জ কিংবা কাশিমপুরে নিয়ে যেত।'

সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, 'ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কাজী নজরুল ইসলাম শিকল ভাঙার গান লিখেছেন, আর এখনকার কবি-সাহিত্যিকরা তেল মেরে নৌকায় উঠতে ব্যস্ত। আগে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আন্দোলন হতো। কিন্তু এখন কবি, নায়ক, গায়করা প্রতিবাদ করেন না। সবাই তেল মেরে সুবিধা পেতে মরিয়া।'

কর্মসূচির আয়োজক যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান প্রমুখ।

সমাবেশের আগে পানির ট্যাংকির মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে কবি কাজী নজরুল ইসলামের কারার ওই লৌহকপাটসহ বেশ কয়েকটি প্রতিবাদী গান গাওয়া হয়।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Has IMF experiment delivered?

Two years after Bangladesh turned to the International Monetary Fund (IMF) for a $4.7 billion bailout to address its worsening macroeconomic pressures, the nation stands at a crossroads.

10h ago