‘কিংস পার্টিতে’ যোগ দিতে নেতাদের চাপ-ভয় দেওয়া হচ্ছে: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন তথাকথিত কিংস পার্টি দিয়ে তামাশার নির্বাচন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
তিনি বলেন, 'তথাকথিত এসব কিংস পার্টিতে যোগ দিতে নেতাদের চাপ দেওয়া হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে।'
আজ বুধবার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'গণতন্ত্রকামী কোটি কোটি মানুষকে মাফিয়া চক্রের নিপীড়নের মুখে ঠেলে দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের তফসিল নাটক স্রেফ ভাগ বাটোয়ারার নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার কারসাজি। কাজী রকিব ও নুরুল হুদার দেখানো ভাওতাবাজির নির্বাচনের পথেই হাঁটছেন কাজী আউয়াল।'
তিনি আরও বলেন, 'দেশের জনগণ মাফিয়া চক্রের এই ভুয়া তফসিল প্রত্যাখ্যান করায় শেখ হাসিনা এখন তথাকথিত কিংস পার্টি, ভূইঁফোড় পার্টি, ড্রিঙ্কস পার্টি, ছিন্নমূল পার্টি তৈরি করে তাদের দিয়েই তামাশার নির্বাচন মঞ্চস্থ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এজেন্সিগুলোকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন তথাকথিত কিংস পার্টি গঠনের জন্য। বিভিন্ন দল থেকে নেতা কিনতে গরুর হাটের মতো দরদাম চলছে।'
'আওয়ামী সরকারের কিংস পার্টিতে যোগ দিতে দেশপ্রেমিক বহু নেতাকে চাপ-প্রলোভন-ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ছলে বলে কৌশলে, টোপ দিয়ে কাউকে কাউকে বাগানো হচ্ছে। আবার কেউ কেউ জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে না গিয়ে বিরোধী দলের লেবাসে ফ্যাসিবাদের দোসর হয়ে হালুয়া-রুটির ভাগ পাওয়ার লোভে গণভবন-বঙ্গভবনে ছুটোছুটি করছেন,' বলেন তিনি।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, 'দেশের কৃষক-শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ, শ্রমজীবী-কৃষিজীবী, পেশাজীবী, আলেম-ওলামাসহ সবাই বর্তমানে মানবিক মর্যাদা, রাজনৈতিক অধিকার, ভোট প্রয়োগের অধিকার হারিয়েছেন। এ সময় কিছু লোক বিবেচনাহীনভাবে তামাশার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারা জনগণের সংকেত টের পাচ্ছেন না। জনগণ খুব দ্রুত ধেয়ে যাচ্ছে সরকারের সিংহাসন ধুলোয় লুটিয়ে দিতে।'
তিনি আরও বলেন, 'গণবিচ্ছিন্ন এই সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের বদলে অতীতের মতন প্রহসন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার বাসনায় জুলুম-নির্যাতন, চক্রান্ত, নাশকতা ও মিথ্যাচারের পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশ, র্যাব বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে অভিযান চালাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে "নিখোঁজ" ব্যক্তিদের কারাগারে খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনেরা।'
'দেশের প্রতিটি জনপদ-গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বন্দরে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে' উল্লেখ করে রিজভী বলেন, 'সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় নেতাকর্মীদের বেছে বেছে তাদের বাড়িতে হেলমেট বাহিনী হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে। গুপ্ত হামলা, বোমা হামলা চালাচ্ছে। গণতন্ত্রপন্থীদের ধরে নির্যাতন করে পুলিশে দিচ্ছে। আবার আটক বাণিজ্য করছে।'
তিনি দাবি করেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ১৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারাদেশে বিএনপির প্রায় ২ কোটি নেতাকর্মী দিনের পর দিন ঘরছাড়া।
এই বিএনপি নেতা বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, আদালত, বিচারক সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর তল্পিবাহকে পরিণত করা হয়েছে। র্যাবের মতো গোয়েন্দা পুলিশও এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় অনুগত উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। গণভবন-বঙ্গভবনে খোলা হয়েছে কমান্ড সেন্টার।'
তিনি বলেন, 'একতরফা নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। "জয় বাংলা বলে আগে বাড়ো" শ্লোগান দিয়ে আমলা ও পুলিশের মতো দেশের বিচারকরাও অন্ধ-অবিচারে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের নির্দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে। বিচারের নামে ক্যামেরা ট্রায়াল ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আদালতে সাজানো সাক্ষীর মুখে শেখানো বুলি শিখিয়ে এবং দীর্ঘক্ষণ আটকে রেখে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের আদলে নির্দয় ব্যবহার করা হচ্ছে।'
রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'গত ৪০ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা ২৬টি মিথ্যা মামলায় কথিত বিচার কার্যক্রমের নামে বিএনপির ৪১৫ নেতাকর্মীকে সাজা দিয়েছেন ঢাকার আদালত। এখন গায়েবি মামলার মতো গায়েবি সাজা দেওয়া হচ্ছে। আগে মৃত ব্যক্তি কবর থেকে উঠে ভোট দিত। আর এখন মৃত ব্যক্তিকে সাজা দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দল করলে মরেও শান্তি নাই।'
তিনি আরও বলেন, 'গত পরশু যেখানে মৃত ও গুম ব্যক্তিকে সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করেছে আওয়ামী আদালত। প্রায় চার বছর আগে মারা যাওয়া নিউমার্কেট থানার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের দাইয়াকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ১০ বছর আগে র্যাবের হাতে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন এবং ৮ বছর আগে গুম হওয়া বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম জাকিরকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।'
'যারা বিচারকের আসনকে মজলুমদের জুলুমের মঞ্চ বানিয়েছেন এবং সেখানে বসে এই ধরনের তামাশা করছেন তাদের বিচার জনগণ একদিন করবে। ইতিহাসের পাতা থেকে এগুলো মুছে ফেলা যাবে না,' যোগ করেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী বলেন, 'সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের একদফা দাবিতে জনগণের আন্দোলন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে এখন। ফ্যাসিবাদী সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বানচাল করতে নিজেরা আগুন সন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াওয়ের তাণ্ডব চালাচ্ছে। আর বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। অথচ আপনারা দেখেছেন যারা ধরা পড়ছে তারা ক্ষমতাসীনদের লোক।'
তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের মোট ৫১৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ২১টি মামলা হয়েছে এবং এসব মামলায় ২ হাজার ৩১৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া, ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের কয়েকদিন আগে থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ১৯০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, তাদের বিরুদ্ধে ৩৬৭টির বেশি মামলা হয়েছে। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির মোট ৪ হাজার ৪৬৮ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন এবং অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
Comments