আমাদের প্রায় ৪৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা চলছে: ফখরুল

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

সরকার পদত্যাগের এক দফার সমাধান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই আসবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানে হোটেল লেকশোরে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত 'বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং ইন্দো-প্যাসেফিক কৌশল' শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আজকে আমরা সবাই… এ দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে হয়েছি এবং একটা দফার মধ্যে এসেছি … এই রেজিমের (সরকার) পদত্যাগ। আমরা একটা স্বচ্ছ, অবাধ নির্বাচন চাই বলে নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার চাই।'

'আমি মনে করি, আমরা আজকে যেভাবে ঐক্য হয়েছি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে… জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আমাদের সেই দাবি অর্জন করতে পারব। আমরা বিশ্বাস করি যেটা সবসময় বাংলাদেশের মানুষ তারা প্রমাণ করেছে যে, জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে, চেষ্টার মধ্য দিয়ে সবসময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন জয়ী হয়েছে। আমরা এবারও বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জনগণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।'

সরকারের দমননীতির চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরা যে সময়টা অতিক্রম করছি, এই সময়টা জাতির জন্য সবচাইতে একটা সংকটময় সময়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি সবচেয়ে বেশি গণতন্ত্রের পক্ষে তার সারাটা জীবন দিয়েছেন, তিনি আজকে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় এই শাসকগোষ্ঠীর চরম প্রতিহিংসার কারণে বিনা চিকিৎসায় মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব, তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় রাখা হয়েছে। আমাদের প্রায় ৭০০ তরুণ-যুবক, তার মধ্যে তিনজন সংসদ সদস্য ছিলেন, তাদেরকে গুম করা হয়েছে… এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সের কারণে। আমাদের প্রায় ৪৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা চলছে। আমাদের অনেককেই নির্বাচনের পূর্বে সাজা দিয়ে তারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেটা করা হচ্ছে।'

'এই সরকার এই অবস্থা তৈরি করেছে। এর একটাই মাত্র কারণ, যেন বিরোধী দল নির্বাচনে না আসতে পারে, নির্বাচনে না যোগ দিতে পারে, যেখানে একমাত্র আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় যাবে, শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় যাবে।'

আয়োজনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, 'আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দানের বিষয়টিই প্রতিফলিত হয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে কাতারবদ্ধ হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করার পাশাপাশি লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম ও রাজনীতি নির্বিশেষে সব বাংলাদেশির স্বাধীনতা, সমতা, সমৃদ্ধির ক্ষমতায়নের জন্য দেশীয় উদ্যোগ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের দল বিএনপি জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করতে নিবেদিত।'

'গণতান্ত্রিক বিশ্বে গৃহীত ইন্দো-প্যাসেফিক কৌশল বৈশ্বিক একটি অবাধ, উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের লক্ষ্যে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থাপত্যকে নতুন করে ঢেলে সাজাবে বলে আশা করা যায়। সংযোগের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বঙ্গোপসাগরের শীর্ষে বাংলাদেশের অবস্থান পশ্চিম ও পূর্ব গোলার্ধের পাশাপাশি ভারত মহাসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা সহযোগিতা, নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সম্প্রীতি, নিরাপদ নৌ চলাচল, টেকসই অর্থনীতি, মুক্ত বাণিজ্য, জলবায়ু, স্বাস্থ্য, মহামারির মতো হুমকিগুলো মোকাবিলার পাশাপাশি একটি অবাধ, মুক্ত, উদার, গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল গ্রহণ করেছি।'

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির শাহজাহান ওমর, তাবিথ আউয়াল, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহেদুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ শহিদুল ইসলাম বাবুল, সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদ-লেনিনবাদ) হারুন চৌধুরী, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির শামসুল আলম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের হারুনুর রশীদ, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার রাশেদ প্রধান ও খন্দকার লুতফুর রহমান, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, বিএনপির নজরুল ইসলাম খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মনিরুল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, তাজমেরী এসএ ইসলাম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, আবদুল কাইয়ুম, আব্দুল কুদ্দুস, হাবিবুর রহমান হাবিব, মামুন আহমেদ, এনামুল আহমেদ চৌধুরী, শাহাজাদা মিয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আসাদুজ্জামান আসাদ, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, সেলিম ভুঁইয়া, হাছিন আহমেদ, জহির উদ্দিন স্বপন, ইশরাক হোসেন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands. 

3h ago