কোথাও কিছু ঘটেনি, নতুন করে ৪৭ মামলা: ফখরুল
আওয়ামী লীগ সাজা দেওয়ার চক্রান্ত কার্যকর করতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে বিএনপির নির্বাহী কমিটি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফখরুল বলেন, 'আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায়, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের সাজা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গত ১৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ হয়েছে, এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে তারা ৪৭টি মামলা দিয়েছে এবং আসামির সংখ্যা করেছে তারা ১২ হাজার ৭৩০ জন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪৬০ জন এখন পর্যন্ত।'
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জের ধরে তিনি বলেন, 'কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে কোনো নির্বাহী প্রধান কোনো মামলা-মোকদ্দমার ব্যাপারে, আদালতের ব্যাপারে বিচারাধীন মামলার ব্যাপারে এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন না। সরাসরি তিনি হস্তক্ষেপ করছেন, নির্দেশ দিয়েছেন—সব মামলা করতে হবে, সব মামলায় সাক্ষী আনতে হবে, সব মামলাতে সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তার যে বক্তব্য, এটা সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এই সরকার ফরমায়েশ করে, আদেশ দিয়ে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করছে এবং তারা (বিচার বিভাগ) সেভাবে ফরমায়েশি রায় দিচ্ছেন।'
গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই বিএনপি আমাদের কত নেতাকর্মী হত্যা করেছে, চোখ তুলে নিয়েছে। ২০০১ এ ক্ষমতায় এসে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে তাদের হাড় গুঁড়া গুঁড়া করে হত্যা করেছে। এরপর আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তারা সৃষ্টি করল ২০১৩ সালে—অগ্নি সন্ত্রাস। যারা এই অগ্নি সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত; ২৯ জন পুলিশ হত্যা করেছে, তিন হাজার ২২৫ জন মানুষ পুড়িয়েছে, ৫০০ মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তিন হাজার ৮৮২টি গাড়ি, ২৯টি রেল, নয়টি লঞ্চ এবং সাধারণ মানুষ, তাদের প্রাইভেট কার, সিএনজি (সিএনজিচালিত অটোরিকশা), বিভিন্ন কিছু তারা অগ্নি সন্ত্রাস করে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে, চলমান বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে।
'ট্রাকে ড্রাইভার, ড্রাইভারের ছেলে বা তার হেলপার—তাদেরকে পুড়িয়েছে। এই যে অগ্নি সন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত। জেলায় জেলায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই মামলাগুলো চলমান, সেই মামলাগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। আইনজীবীদের কাছে বা আমাদের যারা সরকারি কর্মকর্তা তাদের কাছে এটাই আমার অনুরোধ। এদেরকে যদি সাজা না দেওয়া যায়! কারণ এরা এত অন্যায় করেছে, আমার শুধু মনে হয়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই তো তাদের কাছে সব থেকে বেশি নির্যাতিত। তাহলে তাদের শাস্তি হবে না কেন? তাদের শাস্তি এত দেরিতে হবে কেন? তাদের এই বিচার কাজ কেন দ্রুত হবে না? সে ব্যাপারে আপনাদের অবশ্যই নজর দিতে হবে। কারণ অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এরা বাড়বে,' বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'এই সমস্ত অপরাধী, তাদের মামলাগুলো শুধু চালালেই হবে না, তারা যাতে যথাযথ সাজা পায় সেই ব্যবস্থাটা আপনাদের করতে হবে। এটা হলো আপনাদের কাছে আমার দাবি।'
বিভিন্ন জেলায় তার দলের নেতাকর্মীদের মামলা ও শাস্তির চিত্র তুলে ধরে ফখরুল বলেন, 'সারা দেশেই তারা সাজা দেওয়ার চক্রান্ত এখন কার্যকরী করছে।'
তিনি বলেন, 'আজকে এ কথা প্রমাণিত হয়ে গেছে, এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে এই দেশে কখনোই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এ দেশের মানুষ এখন আর এ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না এবং সেটা শান্তিপূর্ণভাবে। এ সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে পদত্যাগ করে একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।'
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আবার নতুন করে গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, '৪৭টি মামলা সম্পূর্ণ বেআইনি। একদম মিথ্যা মামলা, কোথাও কোনো কিছু ঘটেনি। কিন্তু মামলা হচ্ছে।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'সরকারি কর্মকর্তা হুমকি দিচ্ছেন—কঠোর হস্তে দমন করা হবে। সরকারি দলের বিরুদ্ধে এখনই মামলা হতে হবে, যে হুমকি তারা দিয়েছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী নিজে দিয়েছেন। তার আগে ওবায়দুল কাদের সাহেব দিয়েছেন—হাত ভেঙে দেওয়া হবে, দাঁত ভেঙে দেওয়া হবে। এসব অনর্গল বলে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা তারা নিচ্ছেই না, তারা বিরোধী দলকে নির্মূল করার জন্য এই অবৈধ সরকারের সঙ্গে একজোট হয়ে তারা কাজ করছে।'
এ সময় 'অহেতুক' বাধা সৃষ্টি না করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
আগামী ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ কোথা হবে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের ফখরুল বলেন, 'আমাদের সমাবেশ পার্টি অফিসের সামনে আমরা চেয়েছি। যেটা সাধারণ নিয়ম, চিঠি দিয়ে আমরা অবগত করেছি। আমি মনে করি, অবগত করাই উৎকৃষ্ট উপায়। সরকারের দায়িত্ব, ডিএমপির দায়িত্ব আমাদের এই সমাবেশে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।'
সমাবেশ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের পরিণতি হবে—এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, 'এটাতেই বোঝা যায় এই সরকারের উদ্দেশ্য খুব খারাপ।'
তিনি বলেন, 'আমরা নিশ্চয়তা দিতে চাই, ২৮ অক্টোবর আমাদের যে কর্মসূচি এটাও অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হবে।'
সংসদের শেষ অধিবেশন শুরু হচ্ছে বিকেলে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযুক্তির আহ্বান জানাবেন কি না জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, 'যদি দেশপ্রেম থাকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসে, গণতন্ত্রের প্রতি যদি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকে তাহলে আমি আহ্বান জানাবো আওয়ামী লীগকে যে, তারা এই অধিবেশনে নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। অন্যথায় এ দেশের যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি তারা ইতোমধ্যে করেছে এটা দায়-দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে।'
গুঞ্জন শোনা ২৮ অক্টোবর আপনারা সব নেতাকর্মীদের আসতে বলেছেন এবং এখানে আপনারা বসে পড়বেন-অবস্থান নেবেন, এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা একেবারেই অপপ্রচার। আমাদের কোনো নেতাকর্মীকে ঢাকায় এসে বসে পড়তে বলিনি। ২৮ তারিখের কর্মসূচির পরে যে যার জায়গায় চলে যাবে এবং পরবর্তী কর্মসূচির অপেক্ষা করবে।'
Comments