আজ এ্যানিকে যেভাবে মেরেছে কাল আপনাদের সবাইকে মারবে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। অন্যথায় তারা আজ এ্যানিকে যেভাবে মেরেছে কাল আপনাদের সবাইকে মারবে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে 'ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যে'র ছাত্র কনভেনশনে বক্তৃতাকালে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'আমরা একটা বড় যুদ্ধে নেমেছি। সেই যুদ্ধটা হচ্ছে একটা ভয়াবহ শক্তি যাকে ফ্যাসিবাদী শক্তি বলছি, যারা আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে আমাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে খানখান করে দিয়ে, আপনজনদের আমাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বাংলাদেশকে তাদের বিচারকের ভাষায় জাহান্নাম বানিয়েছে তাদের এক ধাক্কায় সরিয়ে দেওয়ার যুদ্ধে নেমেছি।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আপনারা যদি নিজেরা বাঁচতে চান, দেশকে বাঁচাতে চান, আপনাদের বাবা-মা-ভাই-বোনকে বাঁচাতে চান তাহলে জেগে উঠতে হবে এবং ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে রাজপথে। লড়াই করে, সংগ্রাম করে তাদের পরাজিত করতে হবে।'
'আমাদের আজ শপথ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং দেশকে দেশের মানুষকে ভয়াবহ দানবের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। আমরা আশাবাদী যে ছাত্র ঐক্য তৈরি হয়েছে। এই যুবক-তরুণদের ঐক্যের মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে এই দানব ফ্যাসিবাদের পরাজয় ঘটবে,' যোগ করেন তিনি।
বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে বুধবার রাতে বাসা থেকে দরজা ভেঙে আটক ও থানায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এটা আমাদের সবার জন্য লজ্জার। বিশেষ করে ছাত্রদের জন্যে, যে এ্যানির মতো একজন সাবেক ছাত্রনেতাকে এভাবে আমাদের পয়সায় যাদের বেতন হয় সেই পুলিশ বেআইনিভাবে তার ওপর হাত তুলে তাকে আহত করেছে। কোন অবস্থায় এ্যানির মতো একজন সাহসী ছেলে আদালতে দাঁড়িয়ে বলে যে, চোর-ডাকাতকে মানুষ এভাবে মারে না, আমাকে তারা (পুলিশ) যেভাবে মেরেছে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এখান থেকে যে বার্তা আপনারা পাবেন সেটি হচ্ছে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। অন্যথায় তারা আপনার মাথার ওপর চেপে বসবে। আজ এ্যানিকে যেভাবে মেরেছে কাল আপনাদের সবাইকে মারবে। সুতরাং সেই বোধটা নিয়ে আসতে হবে।'
নিজের ছাত্রজীবনের কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। এখানে যেসব নেতারা বসে আছে তারা যুদ্ধ করেছেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন, যুদ্ধ করে একটা স্বাধীন দেশ তৈরি করেছেন, স্বৈরাচারকে পরাজিত করেছেন।'
'আজ আপনাদের (ছাত্রসমাজ) কাছে সেই গুরুদায়িত্ব এসেছে এই ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করার,' বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'অনেকে বলেন যে, এখন তরুণদের সব ক্ষোভ মোবাইল সেটে। স্ট্যাটাস দিলেই ক্ষোভ শেষ। ক্ষোভ মোবাইল সেটে দিলে শেষ হবে না। ক্ষোভ রাজপথে আসতে হবে। রাজপথে এসে তাদের পরাজিত করতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে। আমার সবকিছু কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা। আমার মাকে অসহায় অবস্থায় বন্দি করে রেখে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে। আমার ভাইকে তারা মেরে আহত করছে, আমাদের ৬৪৮ জন ভাইকে গুম করে দিয়েছে, সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে তারা বিচারবর্হিভূতভাবে হত্যা করেছে।'
'এক বছরের মধ্যে ২২ জন যুবনেতা, ছাত্রনেতা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করেছে। এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কোথায়? আপনাদের মধ্যে সেই বিদ্রোহ জাগিয়ে তুলতে হবে,' যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে যে, আমরা এবার যুদ্ধ জয় করতে পারব।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'উনারা (সরকার) খুব আনন্দে আছেন। আমেরিকায় ১৮ দিন ঘুরে আসলেন, এখন ব্রাসেলস যাবেন। চতুর্দিকে ঘোরাঘুরি শুরু হয়েছে। ঘুরে ঘুরে যদি কোনোরকমে সামাল দেওয়া যায়, এই চেষ্টা করছেন।'
'আমি বলতে চাই আর ঘোরাঘুরি করে লাভ হবে না। চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ দেশের সব মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। বাঁচতে চায় আপনাদের হাত থেকে। আপনাদের নির্যাতন-অত্যাচার-চুরি-দুর্নীতি, রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেওয়া, সবকিছু থেকে মানুষ এখন বাঁচতে চায়,' যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'এখনো বলছি সময় আছে। আমাদের মাহমুদুর রহমান মান্না সাহেব বলেছেন, দুর্গাপূজার কথা। দুর্গাপূজার ছুটিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। ল্যাঠা চুকে যাবে। মানুষ ভোট দিতে যাবে।'
'এতই যদি জনপ্রিয় হোন তাহলে সুষ্ঠু একটা ভোট দিতে অসুবিধা কোথায়? পদ্মা সেতু বানিয়েছেন, আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল বানিয়েছেন, উড়াল সেতু বানিয়েছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানিয়েছেন, লোকজন তো আপনাকেই ভোট দেবে। তাহলে দেন একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেটা আপনি করবেন না। কারণ আপনি জানেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না,' বলেন বিএনপি মহাসচিব।
'ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যে'র উদ্যোগে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই ছাত্র কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ (প্রধান), ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম-মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্র সমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্র সমাজ (বিজেপি-পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (খন্দকার লুতফুর), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনসহ মোট ১৫টি ছাত্র সংগঠনে নিয়ে 'ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য' আত্মপ্রকাশ করে।
জাতীয় ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান এই কনভেনশনের সভাপতিত্ব করেন। এতে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ বক্তব্য দেন।
Comments