আপনার কথায় পরিষ্কার যে, আপনি খালেদা জিয়ার মৃত্যু চান: প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল

গণঅধিকার পরিষদের এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ শুক্রবার বিকেলে গণঅধিকার পরিষদের এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আবার তারা (সরকার) বলতে শুরু করেছে এবং জোরেশোরে চিৎকার করে বলছে যে, আমরা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করব, সেইভাবে নির্বাচন হবে এবং সেটা সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। কিছুক্ষণ আগে আওয়ামী লীগের সভাপতি গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করে একই কথা বলেছেন।'

'এগুলো হলো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা দিয়ে মানুষকে প্রতারণা করা, তাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করা এবং খালি মাঠে আমরা যাকে বলি ওয়াকওভার নিয়ে আবার সরকার গঠন করা… তবে এটা করার ব্যাপারে বাধা এসেছে। কোত্থেকে এসেছে? পশ্চিমা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো বাধা দিয়েছে… বলেছে- ওই ধরনের ওয়াকওভার মার্কা নির্বাচন চলবে না। এবার একটা সুষ্ঠু অবাধ ও অংশগ্রহণকারী নির্বাচন হতে হবে। আমরা বলেছি, ওই নির্বাচন হতে হলে হাসিনার অধীনে হবে না, সম্ভব নয়। আমাদের একটাই কথা, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না', বলেন তিনি।

এসময় বর্তমান সরকারের অধীনে 'সুষ্ঠু নির্বাচন'র নমুনাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, 'আপনারা বার বার বলেন যে, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। যদি আপনি পেছন দিকে তাকিয়ে দেখেন, গত ১৫ বছরে বিরোধীদল তথা বিএনপির ৪৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, আপনারা ৬০০'র অধিক নেতাকর্মীকে গুম করে দিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করেছেন এবং পত্র-পত্রিকায় এখন বেরিয়ে এসেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কত মামলা…আমাদের সাইফুল ইসলাম নিরবের বিরুদ্ধে সাড়ে ৫০০ মামলা, সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ৩০০, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে আছে প্রায় ৪০০, এরকম সব নেতার বিরুদ্ধে, এমনকি বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা, আমার বিরুদ্ধে আছে ৯৮টি… এরকম সব নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা আছে।'

'এত বছর তারা এই মামলাগুলো ফেলে রেখে দিয়েছিল। যতই নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, এখন তারা অতিদ্রুত এই মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে বিরোধী নেতাদের সাজা দেওয়ার জন্য স্পেশাল সেল তৈরি করেছে। তারা নির্দেশ দিয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারকদের, অতিদ্রুত বিচার দুই মাসের মধ্যে শেষ কর এবং পরিষ্কার বলেছে যেগুলোর চার্জশিট হয়নি, সেগুলোর চার্জশিট দাও। এগুলোর নাম হচ্ছে তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন', বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের ওবায়দুল কাদের সাহেব… উনি সবসময় বলেন খেলা হবে। খেলবেন কী? কার সঙ্গে খেলবেন? যাদের সঙ্গে খেলবেন তাদের তো জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।'

তিনি বলেন, 'বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মিলে আমরা ঐক্য গঠন করেছি। যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারকে পরিষ্কার করে এক দফা দাবি জানিয়েছি। এক দফা দাবিতে কোনোমতে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হতে পারে না, তাকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে এবং বশংবদ চাটুকার নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে।'

'আমাদের রোডমার্চগুলোতে লাখ লাখ মানুষ একবাক্যে বলেছে, এই সরকারের পদত্যাগ চাই। এ দেশের মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই আমি জনগণকে বলতে চাই, এ দেশটাকে যদি বাঁচাতে চান তাহলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে আসুন। জেগে উঠুন। বজ্রকন্ঠে সোচ্চার করে বলুন যে, অনেক হয়েছে, অনেক লুট করেছ, অনেক অত্যাচার করেছ, নির্যাতন করেছ, অনেক ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত করেছ হাত, অনেক মায়ের বুক খালি করেছ, অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছ, অনেক পুত্রকে পিতাহারা করেছ… আর নয়। দয়া করে এখনো সময় আছে শান্তিতে শান্তিতে মানে মানে বিদায় হও', বলেন বিএনপি মহাসচিব।

সরকার পতনের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'আজকে তরুণরা বেরিয়ে এসেছে। আমি আশাবাদী। আমরা যখন তরুণ-যু্বক ছিলাম, আমরা যুদ্ধ করেছি, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। নব্বই সালে আমাদের ছাত্র-যু্বকরা সংগ্রাম করে স্বৈরাচারকে হটিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিল বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব।'

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তারা এমন কথা বলছে, যা মুখে আনা যায় না… অশালীন-অরুচিকর কথা। এটা পরিষ্কার যে, আপনি তার মৃত্যু চান, তাকে হত্যা করতে চান। এটা পরিষ্কার আপনার কথায় যে… আর কত বাঁচবে?'

'এবার আপনাকেও সময় গুণতে হবে। আপনি কতদিন টিকে থাকবেন ক্ষমতায়। জনগণ আপনাকে টেনে-হিঁচড়ে নামাবে', বলেন তিনি।

বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে ফকিরাপুল কালভার্ট রোড মোড়ে গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে 'গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার'র দাবিতে এই সংহতি সমাবেশ হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে কয়েকশ নেতাকর্মী সমবেত হন।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, রিপাবলিকান পার্টির কে এম আবু হানিফ, সম্মিলিত শ্রমিক অধিকার পরিষদের এ এম ফয়েজ উদ্দিন, গণঅধিকার পরিষদের সাইদুজ্জামান খান, হানিফ খান প্রদীপ, আবদুর জাহের, ফাতেমা জেসমিন, নূরে ইফাত সিদ্দিকী, আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আবদুর রহমান এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের আরিফুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Comments

The Daily Star  | English
US dollar price rises

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

1h ago