বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লির কূটনৈতিক বার্তা

‘আশা করব, ভারত বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দেবে’

'আশা করব, ভারত বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দেবে’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

জি২০ বৈঠকের আগে বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লির কূটনৈতিক বার্তা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা নিশ্চয়ই এটা আশা করব যে, ভারত বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দেবে এবং এই দেশে সত্যিকার অর্থেই সব দলের অংশগ্রহণে, সবার সদিচ্ছায় একটি নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে তারা পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করবে।

আজ শনিবার সকালে চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

একজন গণমাধ্যমকর্মী প্রশ্ন করেন, একটি বার্তা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ভারত বলছে তারা বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় কিন্তু শেখ হাসিনাকে বাইডেন সরকার যেভাবে অস্বস্তিতে ফেলেছে সেটি ভারত প্রত্যাশা করে না। ভারত মনে করছে, এটি বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করবে।

এই বার্তার ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরাও দেখলাম, ডয়চে ভেলের বরাত দিয়ে পত্রিকায় রিপোর্টটি করা হয়েছে। এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে; এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।'

প্রসঙ্গত, ডয়চে ভেলেতে 'হাসিনার পক্ষ নিয়ে অ্যামেরিকাকে বার্তা ভারতের' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'কূটনৈতিক নোটে ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে তা ভারত এবং অ্যামেরিকা কারও পক্ষেই সুখকর হবে না। কারণ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে জামায়াতের মতো সংগঠনের ক্ষমতা বাড়বে বলে মনে করে ভারত।'

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, 'অ্যামেরিকা জামায়াতকে একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দেখে। মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে তুলনা করে। কিন্তু ভারত মনে করে জামায়াত একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠন। ভারতের বার্তায় একথা স্পষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ স্থলসীমান্ত আছে। বাংলাদেশে জামায়াতের মতো সংগঠন শক্তিশালী হলে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা সমস্যার মুখে পড়বে। জামায়াতের মতো সংগঠনের সঙ্গে পাকিস্তানের নিবিড় যোগ আছে বলেই মনে করে ভারত।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে বাংলাদেশের সব সংকটের মূলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের ওপর যে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে রাষ্ট্রকে দিয়ে, বাংলাদেশে যে একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস গড়ে তোলা হয়েছে এবং বলা যেতে পারে যে, একটা টোটালি ডিপ স্টেট তৈরি করা হয়েছে; সেখানে ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশ—যারা গণতন্ত্রের কথা বলে সব সময়, তাদের কাছে এটা অপ্রত্যাশিত, যদি এই নিউজ সত্য হয়ে থাকে।'

তিনি আরও বলেন, 'এ কথাটা আমরা কখনোই বলতাম না, বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমরা দেখতে পাচ্ছি যদি এটা সত্য হয়ে থাকে তাহলে তারা বাংলাদেশের রাজনীতির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তারা এই মন্তব্যগুলো করছে।'

'আমরা এ কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, বাংলাদেশে কোনো মৌলবাদী দল ক্ষমতায় আসবে তার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে দেখা গেছে, কখনোই কোনো মৌলবাদী দল ক্ষমতায় আসতে পারেনি। বরং তাদের যে শক্তি তা দিন দিন ক্ষীয়মান হয়ে এসেছে,' বলেন ফখরুল।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, 'আমরা বাংলাদেশের মানুষের আস্থার ওপর আস্থা রাখি। তাদের শক্তির ওপর আস্থা রাখি।'

'আমি মনে করি, ভারত দেখবে বাংলাদেশের মানুষ কী চায়। বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি তারা কোনো পদক্ষেপ নেয় সেটা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক এবং আমরা মনে করি, সেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য—এই অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তার জন্য শুভ হবে না,' বলেন তিনি।

ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আওয়ামী লীগ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, 'আজকে তারা মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করেছে।'

তিনি বলেন, 'এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করেছে এবং এখন বাংলাদেশের মানুষকে জিম্মি করে তারা একটা রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এই দেশের জনগণ আজকে এক হয়েছে, সব দলগুলো এক হয়েছে, তারা তাদের অধিকার-ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই শুরু করেছে। এই একদফা লড়াইয়ে নিশ্চয়ই জনগণ জয়ী হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

17h ago