ডেঙ্গু রোগীর প্রয়োজনে রক্ত দেবে বিএনপি নেতাকর্মীরা, ৪ কর্মসূচি
রাজধানীতে ডেঙ্গু বিস্তারে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে বিএনপি।
একই সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদের পাশে থাকাসহ জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য ৪ দফা কর্মসূচি নিয়েছে দলটি।
আজ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে ধানের শীষের দুই মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আউয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
এগুলো হলো-
১। ব্লাড ড্রাইভ কর্মসূচি: ডেঙ্গু রোগীদের জন্য রক্তের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যাওয়ায় দলের নেতাকর্মীরা রক্ত দেবে এবং অন্যদের রক্ত দিতে উৎসাহিত করা হবে।
২। অনলাইনে সেন্ট্রালাইজড 'ব্লাড ইনফরমেশন ডিপোজেটারি' ওয়েবসাইট চালু করা হবে। যতদিন ডেঙ্গু পরিস্থিতি থাকবে এই সেবা চালু থাকবে। এর মাধ্যমে যে গ্রুপের রক্ত জরুরি প্রয়োজন, তা দ্রুত পাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
৩। এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে এবং ডেঙ্গু থেকে সতর্ক থাকতে রাজধানীর ওয়ার্ড পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ এবং পোস্টার প্রকাশের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে।
৪। এডিস মশা উৎপাদনের বড় ক্ষেত্র সরকারি স্থাপনা ও নির্মাণাধীন ভবন। এসব স্থাপনা চিহ্নিত করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে।
এছাড়া, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা দূর করতে এলাকাবাসীকে নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হবে।
এসব কর্মসূচি ঘোষণার পর তাবিথ আউয়াল বলেন, 'ডেঙ্গু থেকে মুক্ত হতে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখা, এডিস লার্ভা যেখানে জন্ম হয় সেই জায়গাগুলো নষ্ট করে দেওয়া এবং বিভিন্ন জায়গায় জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, আমরা দেখছি যে এসব কোনো কাজই করা হচ্ছে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি বলতে পারি "তামাশা" করে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। হাঁস ছাড়া হয়েছে বিভিন্ন লেকে, মাছ ছাড়া হয়েছে, ব্যাঙ ছাড়া হয়েছে এবং দেখানোর জন্য কিছু লেক বা খালের পাশে ঘাস কাটা হয়েছে। মশক নিধনে কার্যক্রম চলছে অবৈজ্ঞানিকভাবে। ব্যবহার করা হচ্ছে অকার্যকর, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ।'
ইশরাক হোসেন বলেন, 'আজকের দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর যে পরিস্থিতি তাতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে গত ২০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে এবার। বর্তমানে মেয়র পদে চেয়ার দখল করে যারা আসীন আছেন, তাদের ব্যর্থতার কারণে আজ ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে।'
'তাদের জবাবদিহিতার অভাবের কারণে, জনগণের কাছে তাদের জবাব দিতে হয় না বলেই আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে,' বলেন তিনি।
ইশরাক হোসেন আরও বলেন, 'সার্বিকভাবে দূষণরোধ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা আজ ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য অন্যতম একটি কারণ। পর্যাপ্ত বর্জ্য নিষ্কাশন না করায় ময়লা-আবর্জনার মধ্যে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লাগামহীন বিস্তার ঘটেছে। শুধু হাতে গোনা কিছু এলাকায় তারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করেছেন যেখানে উচ্চবিত্তরা থাকেন।'
তিনি বলেন, 'মেয়র পদটাকে নগরপিতা বলা হয় যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা পদ। আমি মনে করি যারা এ পদে বসে আছেন তারা এর গুরুত্ব বোঝেন না। নগরপিতার যে ভূমিকা, সেটা রাখা তো দূরের কথা বরং তারা স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করছেন।'
'বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে তারা মনগড়া কিছু কার্যক্রম করছেন, লোকদেখানো কার্যক্রম করছেন। এখানে ড্রোন ওড়ানো হয়েছে, আরও অন্যান্য উদ্ভট কিছু কর্মসূচি দিয়েছে, জনগণ যেগুলোকে ভাওতাবাজি বলে মনে করছে,' যোগ করেন তিনি।
দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের 'আয়তন ও জনসংখ্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত কীটতত্ত্ববিদ' নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ইশরাক।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের বিদেশ সফর ও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের চাকরির মেয়াদ আবারও বৃদ্ধি, রাজধানীতে বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি সংকটসহ নাগরিক সেবা না পাওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরে সিটি করপোরেশনের মেয়রদের ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় এই সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্যসচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Comments