বরিশাল সিটি নির্বাচন: আ. লীগে বিভক্তি, জোরালো প্রস্তুতি ইসলামী আন্দোলনের

বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের গণসংযোগ (বামে) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিমের নাম ঘোষণা। ছবি: স্টার

বরিশাল মহানগরে আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি সামনে আসায় নতুন মেরুকরণের সৃষ্টি হয়েছে। আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে।

এই বিভক্তি আরও স্পষ্ট হয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে। নির্বাচনী প্রচারণা কমিটিতে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীদের কাউকে রাখা হয়নি বলে জানা গেছে।

এ দিকে আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সিটি নির্বাচনে নেই বিএনপি। তবে দলটির সাবেক নেতা কামরুল আহসান রুপন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ অবস্থায় মেয়র পদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিমের অবস্থান আরও শক্ত করতে জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

আওয়ামী লীগের বিভক্তি

গত পহেলা মে বরিশালে আওয়ামী লীগের পক্ষে দুটি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নেওয়া হয়। এ নিয়ে উত্তেজনাও তৈরি হয় বর্তমান সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী ও তার বিরোধী পক্ষের মধ্যে।

সেদিন সদর রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে দুই গ্রুপের সভা আহ্বানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হলে নগরীর বিবির পুকুর ও আওয়ামী লীগ অফিস ঘিরে র‌্যাব ও পুলিশ টহল দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে।
 
মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকনের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলেও, এতে মহানগর আওয়ামী লীগের সব পক্ষের অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার কথাও স্বীকার করেছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা জানান, তাদের নেতারা একটি যৌথসভা করবেন। সভা থেকে দিক-নির্দেশনা পেলেই তারা সবাই মিলে সে অনুযায়ী কাজ করবেন।

কিন্তু মেয়রপন্থী কাউকে না রেখেই যে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে, ওই কমিটি ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।

সাদিকপন্থী বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গাজী নইমুল হোসেন লিটু দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির যৌথ সভায় বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যৌথসভায় আমরা সিদ্ধান্ত নেব যে নির্বাচনে আমাদের কী ভূমিকা থাকবে। সে অনুযায়ী নেতাকর্মীদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হবে।'

তবে, কবে এ যৌথসভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সে সম্পর্কে সঠিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি।

এ অবস্থায় মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর অনুসারীরা প্রচারণা শুরু করেছেন। মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক শাহিন সিকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যৌথসভার কথা বলে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। আমরা এজন্য নিজেরাই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেছি এবং এ কমিটি ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে।'

ইসলামী আন্দোলনের প্রস্তুতি

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের মধ্যে এ বিভক্তির মধ্যেই সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোরেশোরে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। নির্বাচনের মাঠে শক্ত ভাবে থাকতে চাইছে দলটি।

মেয়র নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিমকে আগামী ৮ মে নগরীর জিলা স্কুল মোড়ে সংবর্ধনার আয়োজন চলছে। এর মাধ্যমে তারা নগরীতে বড় শো-ডাউন করার পরিকল্পনা করছে।

ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মিডিয়া উপকমিটির সদস্য কে এম শরীয়তউল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামী ৮ তারিখে জিলা স্কুল মোড়ে বড় সভার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সভায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে। এ নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নির্বাচনের আগে আগামী ১ মাসের কার্যক্রম পরিচালনায় জোরেশোরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।'

হয়রানির অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর

আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিএনপির সাবেক নেতা কামরুল আহসান রুপন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে যাচ্ছেন। তিনি অবশ্য জানিয়েছেন যে নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণার পরে তার ওপর নানা ধরনের চাপ আসছে। ইতোমধ্যে দুদক তার বাবা, মা ও বোনদের সম্পদের হিসাব দিতে ডেকেছে।

কামরুল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, 'যেহেতু আমার দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, তাই আমি স্বতন্ত্র ও ব্যক্তিগত জায়গা থেকে প্রার্থী হয়েছি। তাৎক্ষনিকভাবে আমাকে দুদক কার্যালয়ে তলব করা হয়েছে। আমার কাছে আমার মা-বোনের সম্পত্তির হিসাব চাওয়া হয়েছে। প্রার্থী হওয়ার কারণেই আমাকে দুদক থেকে তলব করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'বরিশালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।'

'আমার বিরুদ্ধে দুদকের চাপ, প্রশাসনিক চাপ ও সামনে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি রয়েছে। আমি বর্তমান পরিস্থিতি দেখে বুঝতে পারছি এভাবে যদি আমাকে হয়রানি করা হয়, তাহলে আমার নির্বাচনের মাঠে থাকাটাই সমস্যা হয়ে যাবে,' বলেন তিনি।

আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে গত ১৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বদলে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে এবার বরিশাল সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

3h ago