এক শ্রেণির ব্যক্তি-সরকারি কর্তাদের পৌষ মাস, যত চুক্তি তত লাভ: ফখরুল

বক্তব্য রাখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর | ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'এখন এক শ্রেণির ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও সরকারি কর্তাদের পৌষ মাস। যত চুক্তি তত লাভ।'

তিনি আরও বলেন, 'কুইক রেন্টাল ও আইপিপি চুক্তিগুলো এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে সরকার-ঘনিষ্টদের কৌশলে অবৈধ ও অনৈতিক আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়া যায়।'

আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। 
 
ফখরুল বলেন, 'গত ১৪ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের শাসনামলে দেশের পুরো বিদ্যুৎ খাতে যে ভয়াবহ দুর্নীতি, লুট ও অব্যবস্থাপনা হয়েছে, যার কুফল এখন সমগ্র দেশবাসীকে ভোগ করতে হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'অপরিকল্পিতভাবে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন, অযোগ্য কোম্পানিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প প্রদান, প্রতিযোগিতা ছাড়া বিনা টেন্ডারে অতিরিক্ত দরে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি এবং স্বল্প মেয়াদের রেন্টাল ও কুইকরেন্টালগুলোর মেয়াদ বাড়িয়ে বিদ্যুৎ খাতে বছরের পর বছর খরচ বাড়ানো হয়েছে।'

'সরকার পরিণাম না ভেবে দেশের স্বার্থবিরোধী প্রাইভেট সেক্টরেও যৌথ মালিকানার নামে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আনন্দে বিভোর ছিল। এখনো আছে,' বলেন ফখরুল।

বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা নীতি যখন সম্পূর্ণ মুখ থুবড়ে পড়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এরই মধ্যে ভারতের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সরকারের আরেকটি একপেশে ও দেশের জন্য অত্যাধিক ক্ষতিকর চুক্তি প্রকাশ হলো।'

তিনি বলেন, 'সরকার গত ২ মাসে ৩ বার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের মূল্য আরও ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্য ছিল ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। নতুন মূল্যহার কার্যকরের ফলে বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৮ টাকা ২৫ পয়সা।'

'বলা হয়েছিল জরুরি পরিস্থিতিতে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম সরকার বাড়াবে কিন্তু কোনো জরুরি পরিস্থিতি ছাড়াই বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়া এই ধরনের মূল্যবৃদ্ধি সম্পূর্ণ বেআইনি। এ নিয়ে গত ১২ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১২ বার। এতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১১৮ শতাংশ বাড়ানো হলো,' বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'সরকার গত সাড়ে ১৩ বছরে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে ৪০০ শতাংশ। বৃহৎ শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করেছে। অর্থাৎ, পূর্বের দামের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ। এতে রপ্তানিমুখী শিল্প চ্যালেঞ্জে পড়েছে, অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে ছোট ও মাঝারি শিল্প। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি উসকে দেবে মূল্যস্ফীতি, জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়বে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকারের রাজস্ব যে বেড়ে যাবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। সরকার এখন যে কোনো মূল্যে রাজস্ব বৃদ্ধিতে উঠে পড়ে লেগেছে। অথচ অপচয় ও দুর্নীতি বন্ধ করে এ অর্থের যোগান দেওয়া যেত।'

তিনি বলেন, 'সরকার বাজেট সহায়তা হিসেবে আইএমএফ-এর কাছ থেকে যে ঋণ নিচ্ছে তার শর্ত পূরণ করতে গিয়ে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বন্ধের অংশ হিসেবে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। জানা যায় প্রতি মাসেই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করবে সরকার। সমন্বয়ের নামে রাতারাতি ভর্তুকি কমিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম এত বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত বোঝাটা জনগণের ওপর চাপানো হলো। প্রশ্ন হলো, সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার দায় জনগণকে কেন বহন করতে হবে?'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফা সংস্কার কর্মসূচিতে উল্লেখ করেছি যে, ভবিষ্যতে অবাধ নির্বাচনে জনগণ বিএনপিকে নির্বাচিত করলে এই আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল করা হবে, দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে এবং কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।'

জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার অপরিণামদর্শী ভ্রান্ত নীতি, অব্যবস্থাপনা ও নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে যে মহাবিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা পরবর্তী যে কোনো সরকারের পক্ষেই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রিয় দেশবাসীকে জানাতে চাই, বিএনপি সরকার গঠন করলে দেশের স্বার্থ বিনষ্টকারী এই ধরনের সব চুক্তি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনসহ সব কালো আইন বাতিল করা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য, বিকল্প ও মিশ্র-জ্বালানির সংস্থান করা হবে এবং স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ খাতকে পুনর্গঠন ও টেকসই করে গড়ে তোলা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

No place for Islamic extremism in Bangladesh: Yunus

Islamic extremism will never find a place in Bangladesh again, said Chief Adviser Muhammad Yunus recently

2h ago