পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আ. লীগ দেশের স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। ছবি: সংগৃহীত

পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশের স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ মন্তব্য করেন।

আওয়ামী লীগকে পাল্টা কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তারা গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তারা দেশের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা চেষ্টা করছে একটা অনিশ্চয়তার দিকে দেশকে নিয়ে যেতে। আমি আহ্বান জানাচ্ছি আওয়ামী লীগকে তারা ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন।'

আগামীতে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এখন পর্যন্ত নেই। ভবিষ্যতে আসবে কি না, এটা বলতে পারব না। প্রয়োজন বলে দেবে ভবিষ্যতে কী হবে।'

'জনগণই বলে দেবে। জনগণ যদি বলে যে এখন হরতাল চাকা বন্ধ, তখন হরতাল চাকা বন্ধ হবে। আমরা বলছি শান্তিপূর্ণ। আমরা সবসময় পিসফুল প্রোগ্রাম চাচ্ছি, আমরা এতে বিশ্বাস করি,' যোগ করেন তিনি।

হরতালের কর্মসূচি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মধ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এর আগে আমি অনেকবার বলেছি। আপনারা আন্দোলন বলতে ওইটা (হরতাল-অবরোধ) বোঝেন। এটা ঠিক না। পাশের দেশ ভারতে দেখেন। সেখানে হরতাল হয়? হয় না। আন্দোলন হয়। রাস্তায় লোক নামে, লাখ লাখ লোক হেঁটে যায়। ভারত জুড়ে প্রোগ্রাম করলো কংগ্রেস, হাঁটল ১৪৯ দিন ধরে, হাঁটছে, এগুলো আন্দোলন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা যে কর্মসূচি করছি, এগুলো কি আন্দোলন না? এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেখবেন একদিন জনমত এমন জায়গায় আসবে যে, তখন হরতাল দিতে হবে না। ওরা এমনিতেই চলে যাবে।'

'সরকারি দল অলিখিতভাবে অঘোষিতভাবে হরতাল দেয়' উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা যখন বিভাগীয় সমাবেশ করেছিলাম, তখন তারা তিন দিন আগে থেকে হরতাল দেয়। রাস্তাঘাট, বাস-ট্রাক, স্টিমার-লঞ্চসহ পরিবহন সব বন্ধ করে দেয়।'

তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল, ভাঙচুর করেছিল, সেটা আপনারা জানেন। তবে আমরা এটা মনে করি না, আমরা বিশ্বাস করি যে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তাদের পরাজিত করব।' 

পাল্টা কর্মসূচি থেকে সরে আসুন

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের প্রতিটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। আবারও তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে করে আওয়ামী লীগের মূল চরিত্র উন্মোচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের দল। এটা বলতে দ্বিধা নেই যে তারা সন্ত্রাস, ত্রাস সৃষ্টি করা, ভয় দেখানো, আক্রমণ করা, হামলা করায় অত্যন্ত পারদর্শী। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে নস্যাৎ করতে তারা পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে।'

আওয়ামী লীগকে পাল্টা কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তারা গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তারা দেশের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা চেষ্টা করছে একটা অনিশ্চয়তার দিকে দেশকে নিয়ে যেতে। আমি আহ্বান জানাচ্ছি আওয়ামী লীগকে তারা ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন।'

আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করে গত ৪ ফেব্রুয়ারি। ১০ দফা দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও যুগপৎভাবে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আওয়ামী লীগ প্রথম থেকে উস্কানি দিয়ে, হুমকি দিয়ে বিভিন্নভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। আমরা অত্যন্ত সচেতনভাবে সেই সংঘাত এড়িয়ে চলেছি।'

'আওয়ামী লীগ আবার পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ে। এটা নতুন একটা ফেনোমেনা। অর্থাৎ তারা ভীত, সন্ত্রস্ত। তারা এখন নিজেদের রক্ষা করতে বিভিন্নভাবে তাদের অপকৌশলে আবার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই কাজগুলো করছে। আমরা আবারও জোর দিয়ে বলতে চাই, আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সংঘাত এড়িয়ে কর্মসূচি পালন করছি এবং করব,' যোগ করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমাদের আল্টিমেট লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মাধ্যমে এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা, সংসদ বিলুপ্ত করতে বাধ্য করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।'

৯ ও ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিএনপির পদযাত্রা

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ১০ দফা দাবি আদায়ে ঢাকা মহানগরীতে আগামী ৯ ও ১২ ফেব্রুয়ারি আবারও পদযাত্রা করবে বিএনপি। 

৯ ফেব্রুয়ারি মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে গোপীবাগ ব্রাদার্স ক্লাবের মাঠ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত এবং ১২ ফেব্রুয়ারি মহানগর উত্তরের উদ্যোগে শ্যামলী ক্লাব মাঠ থেকে লিংক রোড, শিয়া মসজিদ মোড়, তাজমহল রোড, নূরজাহান রোড, বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড মোড়, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড সড়ক হয়ে বছিলা সাত রাস্তার মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা হবে।

এর আগে গতকাল রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের ব্যাপক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় সমবেদনা প্রকাশ, 
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এইচআরডব্লিউর বিবৃতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকারের বেআইনিভাবে ব্যবহার এবং ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গায় মন্দির-প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার নিন্দা জানানো হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

1h ago