পতাকা উত্তোলন নিয়ে সংঘর্ষে নোয়াখালীতে আ. লীগের সম্মেলন পণ্ড, আহত ৫
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে অতিথিরা আসার আগে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পণ্ড হয়ে যায় উপজেলার ১নং জয়াগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন।
এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন আহত হয়েছে।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার জয়াগ মহাবিদ্যালয় শিক্ষক মিলনায়তনে ও ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন-জয়াগ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাফিজ তানবির, যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুর রহিম, ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ইসমাঈল হোসেন বাবু, ও জয়াগ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি রাব্বি।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার জয়াগ মহাবিদ্যালয় হলরুমে ৯ বছর পর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে নোয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম, বিশেষ অতিথি হিসেবে সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার রুহুল আমিন ও প্রধান মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
সকাল ১০টার দিকে সোনাইমুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমিনুল ইসলাম বাকের ও সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাবুল বাবু জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সূচনা করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সম্মেলনস্থলে অতিথিরা আসেন।
তারা সম্মেলন স্থলে এসে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন নিয়ে প্রশ্ন তুলে সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ না করে জয়াগ মহাবিদ্যালয় শিক্ষক মিলনায়তনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে শিক্ষক মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা প্রবেশ করে অতিথিদের সম্মেলনে যোগদান করার আহবান জানান।
তখন আগেই পতাকা উত্তোলনের কারণ জানতে চাইলে এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের অনুসারীরা শিক্ষক মিলনায়তন থেকে বের হয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।
সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা পুলিশ ও গণমাধ্যমের সামনেই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
সোনাইমুড়ী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মহসিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সম্মেলন বেলা ১১টায় শুরু হলেও জয়াগ ইউনিয়নে সম্মেলন নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা আগে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শুরু করে দেন। তারা নিজেরা দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এটা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এ কারণেই সংঘর্ষের সূত্রপাত।'
সোনাইমুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাবুল বাবু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জয়াগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ১০টা। বেলা ১১টা পর্যন্ত অতিথিরা না আসায় গরমে কাউন্সিলররা কষ্ট পাচ্ছিলেন। তাছাড়া সম্মেলনের সমন্বয়ক ফুয়াদ হাসান ব্যালট ও সিল নিয়ে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সম্মেলনস্থলে না আসায় আমি ও সভাপতি মমিনুল ইসলাম বাকের দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলন শুরু করি।'
'সাড়ে ১১টার দিকে প্রধান ও বিশেষ অতিথিরা ঘটনাস্থল এসে পতাকা উত্তোলন দেখে সম্মেলনস্থলে যাননি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশেষ অতিথিদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের কারণে পূর্ব নির্ধারিত উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের সম্মেলনও স্থগিত করা হয়েছে,' বলেন তিনি।
এসব কিছুর জন্য সোনাইমুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয়ক ফুয়াদ হাসানকে দায়ী করেন তিনি।
এ বিষয়ে ফুয়াদ হাসানের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে সোনাইমুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমিনুল ইসলাম বাকের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশে সম্মেলন উদ্বোধন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। প্রধান ও বিশেষ অতিথিরা ঘটনাস্থলে এসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন নিয়ে প্রশ্ন তুললে ছাত্রলীগের নেতা তানভির কটাক্ষ করেন। এতে গণ্ডগোল শুরু হয়। এক পর্যায়ে খন্দকার রুহুল আমিনের অনুসারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।'
যোগাযোগ করা হলে নোয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলন শুরু করবেন। জয়াগ ইউনিয়ন সম্মেলনে আমার আসতে দেরি হওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে সম্মেলন শুরু করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এতে দোষের কিছু নেই। দলের একটা পক্ষ চায় না সম্মেলন হোক।'
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশীদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সম্মেলনে প্রধান ও বিশেষ অতিথিরা আসতে দেরি হওয়ায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এই নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।'
Comments