‘২১ আগস্ট দেশে ছিল রশিদ-ডালিম, খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে সাহায্য করে’

ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারে এসেও প্রতিশোধ নেয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২১ আগস্ট হামলার সময় কর্নেল রশিদ এবং ডালিম বাংলাদেশে ছিল; এই চক্রান্তের সঙ্গে। খালেদা জিয়া তাদের যেভাবেই হোক দেশ থেকে চলে যেতে সাহায্য করে।

তিনি আরও বলেন, তারা যে ঢাকায় ছিল সেটা অনেকেই জানে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ রোববার সকালে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

পঁচাত্তরের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতায় যারা বিরোধিতা করেছে, দুর্ভাগ্য হলো এখানে মুক্তিযুদ্ধের নামধারী, মুক্তিযুদ্ধ করেছে সব যেন এক হয়ে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে। বিজয় অর্জন করে একটা বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, এটা কি অত সহজ কাজ? কিন্তু তিনি করে ফেলেছিলেন। মনে হয়, এটাই যেন একটা অপরাধ করে ফেলেছেন তিনি। সে জন্য তাকেই শেষ করে দেওয়া। এর পরেই বাংলাদেশকে ইসলামিক রিপাবলিক ঘোষণা, সব রাজাকার, আল বদর, স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় আনা, খুনীদের ইনডেমনিটি দেওয়া, তাদেরকে পুরস্কৃত করা। যেন একমাত্র অপরাধী আমরা! কারণ আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন, বাংলাদেশ নামে একটি দেশ দিয়েছেন, বাঙালি জাতি নামে একটি আত্ম পরিচয় দিয়েছেন। বাঙালি জাতি একটি জাতি হিসেবে আপন পরিচয়ে বিশ্বে স্থান করে নিতে পেরেছে। মনে হলো যেন এটাই তিনি বড় অপরাধ করে গিয়েছিলেন। মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো এবং তারপর এই হত্যাকাণ্ড।

তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশে আসার পর থেকে প্রতি পদে পদে বাধা পেয়েছি। কতবার আঘাত এসেছে! যেখানে গিয়েছি সেখানেই আক্রমণ হয়েছে। ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা...সে সময় দেশের অবস্থা কী ছিল? ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতা আসতে পারলাম না। ৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করেছি। সরকার গঠন করে তো দেশের জন্যই কাজ করেছি—বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো, রাস্তা-ঘাট করা, বিভিন্ন নদীর ওপর ব্রিজ থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। কোনটা না আমরা করেছি! মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জাতির পিতার যে আদর্শ-স্বপ্ন সেটা অনুসরণ করেই ৫টা বছর আমরা দেশ চালিয়েছি। বাংলাদেশ তো তখন এগিয়ে যাচ্ছিল। বাংলাদেশের মানুষ সরকারি সেবা পাচ্ছিল।

২০০১ এর নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাব এসেছিল আমার কাছে গ্যাস বিক্রি করতে হবে। এই গ্যাস ফিল্ডগুলো স্বাধীনতার পরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই তো ক্রয় করে রেখে যান। সেটা মানুষের কাজে লাগানোর জন্য, মানুষের জন্য। আমি তা বিক্রি করতে পারবো না যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের চাহিদা পূরণ হবে এবং ৫০ বছরের রিজার্ভ না থাকবে। গ্যাস উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি এসেছিল, সেখানে আমেরিকান কোম্পানি ছিল। আমেরিকান কোম্পানির মালিকরা এসেছিল আমাদের কাছে, আমাকে বোঝাচ্ছিল গ্যাস বিক্রি করলে এত টাকা বছর কামাই হবে। আমি জবাব দিয়েছিলাম, আমাদের মাটি এত উর্বর; আমরা তরকারি-শাক-সবজি করেই সে টাকা কামাই করতে পারবো। যে সম্পদ জনগণের সম্পদ, সে সম্পদ আমি বেচবো না। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল। গ্যাস বেচবে আমেরিকান কোম্পানি কিনবে ভারত, এই ছিল তাদের অবস্থা। তাতে আমি রাজি হইনি। তাই ২০০১ এর নির্বাচন আমাদেরই কিছু...সুশীল সমাজ থেকে শুরু সবাই আমাদের বিরুদ্ধে বিরাট চক্রান্ত করল। আর সেই সঙ্গে এই দুদেশ তাদের অ্যাম্বাসির লোকেদের তো একেবারে হাওয়া ভবন আর তারেকের বন্ধু মামুনের বাড়িই ছিল তাদের আড্ডার জায়গা। সেই করেই আমাদের জেতা সিট, জনগণ আমাদের ভোট দিচ্ছে, আমাদের নেতা-কর্মীরা যে অত্যাচারিত হয়েছে তখন; নির্বাচনের ৪-৫ দিন আগে থেকে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, কেউ বাড়িতে থাকতে পারেনি। ধানখেতে, বাগানে বাগানে থেকে তারা নির্বাচন করেছে। তারপরে তো নির্বাচনের ফলাফলে আমাদের হারিয়ে দেওয়া হলো। আমরা সরকার গঠন করতে পারলাম না।

তখন আমাদের জ্ঞানী-গুণী অনেক সুশীল বাবুরা ছিলেন, হাইকোর্টে কারো চেম্বারে বসে আলোচনা হতো, আরও কয়েক জায়গায়—আমার সব জানা, বলতে চাই না। সময় আসলে বলবো। সেখানে বসেই ষড়যন্ত্রটা করা হলো। আমরা আসতে পারলাম না ক্ষমতায়। সারা বাংলাদেশে আর্মি ডেপ্লয় করে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার। আমার নির্বাচিত চেয়ারম্যান গাড়ির পেছনে বেঁধে তাদের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয়েছে, এ রকমও ঘটনা ঘটেছে। যেখানে আমি নির্বাচন করেছি সেখানেও দেখি এই অবস্থা, বলেন তিনি।

২১ আগস্টের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। লক্ষ্য তো ছিল আমাকেই হত্যা করা এবং আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা। আইয়ুব খান চেষ্টা করেছে, ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছিল। একাত্তরে চেষ্টা হয়েছে। এরপর জিয়াউর রহমান এসে চেষ্টা করেছে। আজকে গুম-খুন বলে বলে কথা বলে, আমি তো মনে করি আমাদের আওয়ামী লীগের যত নেতা-কর্মী তাদের পরিবার যারা আছে, এই জিয়ার আমলে যাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেনা বাহিনী ও বিমান বাহিনীর যত অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে সবগুলো সামনে নিয়ে আসা দরকার যে, তারা কী করেছে।

এ সময় বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি কয়টা ঘটনা বলবো! বিএনপির আমলে লাশ টানা, বোমাবাজিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, এটা তো প্রতিদিনের কাজ ছিল। আর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দিন যারা উদ্ধার করতে এসেছে তাদের ওপর লাঠিচার্জ-টিয়ার গ্যাস, পরবর্তীতে হাসপাতালে যেয়ে...ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাক্তার নেই। চিকিৎসা দিতে পারছে না। শুধু আমাদের যারা ডাক্তার ছিল, আওয়ামী সমর্থক, তারা ছুটে এসেছে। বিএনপির একটা ডাক্তারও ছিল না। সব বন্ধ করে রেখে গেছে যেন চিকিৎসা না হয়। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনকে ভর্তি করেনি। আমাদের নেতা-কর্মী যে যেখানে পেয়েছে বিভিন্ন ক্লিনিক-হাসপাতালে ভর্তি করেছে। কই, সরকারের পক্ষ থেকে একটা লোক তো আসেনি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

আইভি রহমানকে নিয়ে যাওয়া হলো সিএমএইচ-এ। খালেদা জিয়া না দেখা পর্যন্ত তাকে মৃত ঘোষণা করবে না। তিনি যেদিন যাবেন আইভি রহমানের ছেলে-মেয়েদের একটা ঘরে তালা-চাবি দিয়ে রেখে দিলো আটকে। মায়ের কাছে থাকতে দেয়নি। কেন? খালেদা জিয়া, প্রধানমন্ত্রী দেখতে আসবেন। উনার দেখার শুটিং যখন শেষ হলো ওই দিন পরে ঘোষণা দিলো আইভি রহমান আর বেঁচে নেই। এই রকম একেকটা অন্যায় আমাদের সঙ্গে হয়েছে। আমরা সংসদ সদস্যরা আহত, একটা কথা বলার অধিকার পর্যন্ত তারা দেয়নি, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০০৮-এর নির্বাচনে আমরা জয়ী হয়েছি। জনগণ আমদের ওপর বিশ্বাস রেখেছে, আস্থা রেখেছে। ২০১৪-তে আমরা নির্বাচনে জিতেছি। ২০১৮-এর নির্বাচনে আমরা জয়ী হয়েছি। সেই নির্বাচনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। যারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাদের বলবো বেশি দূর যাওয়া লাগবে না, ২০০১-এর ইলেকশানটাই খোঁজ করে দেখেন না, কেমন ইলেকশান হয়েছিল? কতগুলো মানুষ ভোট দিতে পেরেছিল। তারপরও তো আমরা ভোট বেশি পেয়েছিলাম। আমাদের সিট পেতে দেওয়া হয়নি। ২০০৮-এর ইলেকশানে আমরা জয়ী হয়ে আসি। তারপরও আমরা জনগণের ভোটেই তো নির্বাচিত হয়েছি। তারা ইলেকশান করবে কীভাবে! যে দলে নেতাই নাই, সাজাপ্রাপ্ত অথবা পলাতক। তারা ইলেকশান করবে কী আর কীভাবে ভোট পাবে? ভোট কাকে দেখে দেবে? এটাই তো প্রশ্ন। তারপরও অনেক চক্রান্ত আছে। এখনো নানা রকমের চক্রান্ত। ইলেকশান সামনে আসলেই শুরু হয়। কিন্তু আমার এ দেশের মানুষের ওপর আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। আজকে উন্নয়নটা আমরা করে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি। হয়তো এটাই বড় অপরাধ। বা ৯৬ থেকে ২০০১ অত্যন্ত সফলভাবে দেশ চালিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করেছিলাম সেই জন্যই ২১ আগস্টের ঘটনা আমাদের শেষ করার পরিকল্পনা।

গ্রেনেড হামলায় আহতদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এটা কেউ চিন্তা করে না যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বারবার আঘাতের শিকার হচ্ছে। কিন্তু আমরা সরকারে এসে কই আমরা তো রিভেঞ্জ নিতে যাইনি। আমরা ওদের ঘর-বাড়িও দখল করিনি, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েও মারিনি, কারাগারেও রাখিনি কিছুই করিনি। যে মামলাগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেওয়া হয়েছিল তদন্ত সেই মামলাগুলোই চলছে। আর অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ মেরেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা। একেকজন খুন-খারাবি করে দেশ থেকে পালিয়েছে। ২১ আগস্ট যারা হত্যা করেছিল তারা দেশ থেকে পালিয়েছে। ১৫ আগস্টের যাদের সাজা কার্যকর করতে পেরেছি, বাকিরা পালিয়েছে। ২১ আগস্ট হামলার সময় কর্নেল রশিদ এবং ডালিম বাংলাদেশে ছিল; এই চক্রান্তের সঙ্গে। খালেদা জিয়া তাদের যেভাবেই হোক দেশ থেকে চলে যেতে সাহায্য করে। এটা তো বাস্তব কথা। তারা যে ঢাকায় ছিল সেটা অনেকেই জানে।

এদের কে এনেছিল? যদি বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না করা হয়; তারা আসলো আবার চলেও গেল এবং বিভিন্ন দেশে তারা ফিউগিটিভ হয়ে আছে। সেগুলোকে কি কেউ গুম হওয়া বলবে? তা তো বলবে না। আঘাত আসবে আরও আমি জানি। আমার তো প্রতি পদে পদে...একটা জিনিস মনে করিয়ে দিই, খালেদা জিয়ার বক্তৃতাগুলো অনুসরণ করবেন। যখন কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা হলো, ঠিক তার আগে খালেদা জিয়া বক্তৃতা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ শত বছরেও ক্ষমতায় আসবে না। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে খালেদা জিয়ার বক্তৃতা, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা-বিরোধী দলের নেতাও কোনো দিন হতে পারবে না। সেই বক্তৃতা সে আগাম দিলো কীভাবে? যে বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবো না, সেই বক্তৃতাটা সে আগাম দিলো কীভাবে! তার মানে আমাকে হত্যা করবে। এই পরিকল্পনা তারা নিয়ে নিয়ে ফেলেছে। খালেদা জিয়ার আমলে যাদের ক্রসফায়ারে মারা হয়েছে, অপারেশন ক্নিল হার্টের নামে আমাদের নেতা-কর্মীদের অত্যাচার করে করে হত্যা করা হয়েছে, অগ্নিসন্ত্রাস করে যাদের মারা হয়েছে—হত্যা-খুন এটাই তো ওদের (বিএনপি) চরিত্র, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন তাদের সঙ্গে বসতে হবে, তাদের খাতির করতে হবে, তাদের ইলেকশানে আনতে হবে; এত আহ্লাদ কেন আমি তো বুঝি না। বাংলাদেশে কি মানুষ নেই? অনেক বিদেশিদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি, তারা এসে রিকোয়েস্ট করে কোনো মতে তাদের একটু জায়গা দেওয়া যায় কি না। জায়গা দেবে কি দেবে না সেটা ভাববে জনগণ। সে সিদ্ধান্ত দেবে বাংলাদেশের জনগণ। যে আবার সেই সন্ত্রাসীর যুগে ফেরত যাবে নাকি আজকে যে বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে সেই উন্নয়নের যুগে থাকবে। সে সিদ্ধান্ত জনগণকে নিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

3h ago