৪২৪ গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য, চ্যালেঞ্জের মুখে পুলিশ

বাংলাদেশ পুলিশের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ ৪০০টিরও বেশি পদ গত প্রায় ১০ মাস ধরে শূন্য থাকায় পদে পদে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে পুলিশ। এর ফলে অপরাধ দমনেও এই বাহিনীর সক্ষমতায় ভাটা দেখা যাচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, নয়টি অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ৩৪টি উপ-মহাপরিদর্শকসহ (ডিআইজি) কমপক্ষে ৪২৪টি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য পদের মধ্যে অতিরিক্ত ডিআইজির দুটি, অতিরিক্ত এসপির ৪৭টি এবং সহকারী এসপির ৩৩২টি পদ রয়েছে।

এ ছাড়া, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপিসহ ১১৯ জন শীর্ষ ও মধ্যম স্তরের কর্মকর্তাকে কোনো সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ছাড়াই বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে। যার অর্থ, এই কর্মকর্তারা কেবল অফিসে উপস্থিত হন এবং নথিপত্রে কিছু কাজ করেন।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছু সদস্যকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর ফলে এই বাহিনী আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে।

অনেক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের আমলে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের মাধ্যমে ভিন্নমত দমনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ২৫ বছরের চাকরি জীবন সম্পন্ন করা কমপক্ষে ৪০ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত মামলায় এএসপি ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার আরও ২৩ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অতিরিক্ত ডিআইজি থেকে এএসপি পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৭ কর্মকর্তা ৬০ দিনেরও বেশি সময় ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক এনামুল হক সাগর বলেন, 'পদোন্নতি, বদলি ও শূন্যপদ পূরণ একটি নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ।'

তিনি বলেন, 'ঈদ ও পূজাসহ সাম্প্রতিক উৎসবগুলোতে আমরা কার্যকরভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পেরেছি, বড় ধরনের কোনো অপরাধের খবর পাওয়া যায়নি। আমরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত ও সক্ষম।'

তবে তিনি স্বীকার করেছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর বাহিনী বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে এবং এখন তারা সর্বোচ্চ সক্ষমতায় কাজ করে চলেছে।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, পদোন্নতিতে দেরি এবং সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব না দিয়ে বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছেন কর্মকর্তাদের একটি অংশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা সরকারি নির্দেশ মেনে দায়িত্ব পালন করি। যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা অপরাধ করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু, কোনো নির্দিষ্ট দায়িত্ব ছাড়াই বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করার বিষয়টি হতাশাজনক।'

ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, 'আমার চেয়ে জুনিয়র কর্মকর্তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি পাচ্ছে। অবসর নিতে আর মাত্র কয়েক বছর বাকি। শিগগির যদি পদোন্নতি না হয়, তাহলে ডিআইজি থেকেই আমার ক্যারিয়ার শেষ হবে।'

একই সুর পাওয়া যায় একজন অতিরিক্ত এসপির কণ্ঠেও। বলেন, 'মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া ও আইন প্রয়োগের কৌশলের চেয়ে বেশি উদ্বেগ এখন পদোন্নতি ও পোস্টিংকে ঘিরে।'

সম্প্রতি ঢাকা শহরের ছয়টি থানা পরিদর্শনকালে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতারা দেখতে পান যে, কোনো অপরাধের ঘটনা সংবাদমাধ্যম বা জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ না করলে পুলিশ কর্মকর্তারা প্রায়শই সেই অভিযোগ রেকর্ড করেন না।

গত ১০ জুন রাজধানীর মিরপুর-১১ এলাকায় পুলিশ ২২ বছর বয়সী রকিবুল হাসানের মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং হাত-পা স্কার্ফ দিয়ে বাঁধা ছিল।

রকিবুলের মা রোজিনা বেগম বলেন, স্থানীয় সন্ত্রাসীরা এর আগেও একটি হাসপাতালে তার ওপর হামলা চালিয়েছিল। তিনি পল্লবী থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ অভিযোগ রেকর্ড করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তিনি বলেন, 'পুলিশ যদি ওই হামলার পরপরই ব্যবস্থা নিত তাহলে আমার ছেলে আজ বেঁচে থাকত।'

সেই অভিযোগ রেকর্ডকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) হোসেন মোবারকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনাটির বিস্তারিত মনে করতে পারছেন না।

এর আগে গত ৩১ মে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় দুই সন্দেহভাজন অপরাধীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা ছিনতাইকারী ছিলেন।

এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, 'আমরা পুলিশকে কল করেছিলাম, কিন্তু কেউ আসেনি। তাই, এলাকার লোকজনই তাদের মারতে শুরু করে।'

তবে, দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম দাবি করেন, তারা সব ফোন কলই রিসিভ করেন এবং এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেন।

গত ১০ মাসে দায়ের করা অসংখ্য হত্যা মামলায় পুলিশ কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি।

তার একটি উদাহরণ হলো বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধন হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলা। গত ২৬ মে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কিন্তু এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

এর আগে, নিখোঁজের একদিন পর ১৪ মে পাঁচ বছরের এক মেয়ের বস্তাবন্দী মরদেহ পাওয়া যায়। তার মা তেজগাঁও থানায় মামলা করলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

Khaleda urges unity, quick action to institutionalise democracy

She also demanded a comprehensive list of victims of abduction, murder, and extrajudicial killings

2h ago