দুদক ও বিএফআইইউ অনুসন্ধান

যুক্তরাজ্যে নজরুল ইসলাম মজুমদারের প্রায় ৬৫৬ কোটি টাকার সম্পদ

শেখ হাসিনা, নজরুল ইসলাম মজুমদার, নাসা গ্রুপ, এক্সিম ব্যাংক, বিএফআইইউ, বাংলাদেশ ব্যাংক, গণঅভ্যুত্থান,
নজরুল ইসলাম মজুমদার । ফাইল ফটো

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের যুক্তরাজ্যে চার কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার পাউন্ড বা প্রায় ৬৫৬ কোটি টাকার সম্পদ আছে। দুদক ও বিএফআইইউ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

তাদের তদন্তে উঠে এসেছে, লন্ডনের কেনসিংটনের অভিজাত এলাকায় ৩৭ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন পাউন্ডের পাঁচটি সম্পত্তি এবং আইল অব ম্যানে পাঁচ দশমিক ২৮ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের দুইটি সম্পত্তি আছে তার।

অবশ্য ১৭ বছর ধরে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের ফোরাম বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা নজরুল ইসলাম মজুমদার কীভাবে বিদেশে এই সম্পদ অর্জন করেছেন তার বিস্তারিত বিবরণ এখনো স্পষ্ট নয়।

দেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন, তবে সেজন্য আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।

তবে, নজরুল ইসলাম মজুমদার বিদেশে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়েছিলেন এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

নথি বলছে, এখন পর্যন্ত ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় নাসা গ্রুপ নেই।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক ডজনের বেশি ব্যবসায়ী গ্রুপের অর্থপাচার, ঋণ জালিয়াতি, সরকারি ও আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অনুসন্ধান শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা শাখা বিএফআইইউ ও দুর্নীতি দমন কমিশন।

এই তদন্তের অংশ হিসেবে ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর অর্থপাচার ও বিদেশি সম্পদের বিষয়ে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছিল।

ইতোমধ্যে বিএফআইইউ তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে পাঠিয়েছে।

এসব তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বিএফআইইউ।

বিএফআইইউ ও দুদকের তথ্য অনুযায়ী, নজরুল ইসলাম মজুমদার ট্রেড বেজড অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়া তিনি এক্সিম ব্যাংক থেকে ১৮টি ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে চার হাজার ৭১৭ কোটি টাকা সরান।

তিনি ২০০৭ সাল থেকে গত বছরের ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

নজরুল ইসলাম মজুমদারের জামাতা মোজাম্মিল হুসেনের মালিকানাধীন ফ্লেমিংগো এন্টারপ্রাইজ এবং মদিনা ডেটস অ্যান্ড নাটস নামে দুটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পরপরই ব্যাংকটি থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ পায়।

এ ছাড়া এক্সিম ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নাসা গ্রুপের কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়। ওই অর্থের কিছু অংশ জমি কিনতে ব্যয় করা হয়েছিল।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদে্যাগে সম্পদের মান যাচাই করতে এক্সিম ব্যাংকে ফরেনসিক অডিট করেছে আন্তর্জাতিক হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং।

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের একটি হত্যা মামলায় গত বছরের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হওয়া নজরুল ইসলাম মজুমদার বর্তমানে কারাগারে আছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থপাচার ও আর্থিক অসদাচরণের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন নাসা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান রঞ্জন চৌধুরী। তিনি এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং আইনসঙ্গত নয় বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, 'নাসা গ্রুপ সব সময়  নীতিমালা মেনে চলে এবং প্রয়োজন হলে দরকারি তথ্য সরবরাহ করবে তদন্ত সংস্থাগুলোকে। এখানে কোনো অনিয়ম নেই, অন্যায় নেই। আর অবশ্যই কোনো ভুয়া কোম্পানি নেই, যেমনটি অভিযোগ করা হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
How artistes flamed cultural defiance in July

How artistes flamed cultural defiance in July

From stage to street, artistes and activists led a cultural revolt against brutality and censorship

7h ago