লালগালিচায় ৩ উপদেষ্টার খাল উদ্ধার কার্যক্রম

ছবি: পিআইডি

ঢাকা শহরের পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯টি খাল ও জলাশয় খনন, সংস্কার ও পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এর অংশ হিসেবে, আজ ঢাকার মিরপুরের বাউনিয়া খালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ছয়টি খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও খনন কাজের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা।

এসময় তারা সেখানে বিছানো লালগালিচায় (লাল রংয়ের কার্পেট) হেঁটে খালের সংস্কারকাজ উদ্বোধন করেন।

তিন উপদেষ্টা হলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

খালগুলো হলো বাউনিয়া খাল (প্রায় ৭.১৯ কি.মি), রূপনগর খাল (প্রায় ৩.৫ কি.মি), বেগুনবাড়ী খাল (প্রায় ১.৬৯ কি.মি), মান্দা খাল (প্রায় ৪.৩৭ কি.মি), কালুনগর খাল (প্রায় ৪.৪৬ কিমি) এবং করাইল খাল (প্রায় ২.৪৫ কিমি)।

এই ছয়টি খালের সংস্কারকাজ শুরুর জন্য মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশনে একটি আবাসিক এলাকার বাউনিয়া খালসংলগ্ন রাস্তায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যের পর খালের সংস্কার কাজের উদ্বোধন করা হয়। এসময় খালের পাড় থেকে ওই ভাসমান খননযন্ত্রে যেতে অস্থায়ী একটি পথ তৈরি করা হয়। ওই পথে বিছানো ছিল লাল রঙের কার্পেট। তিন উপদেষ্টাসহ অন্য কর্মকর্তারা ওই পথে হেঁটে খালে থাকা ভাসমান খননযন্ত্রের ওপর ওঠার পর যন্ত্রটি চালু করে খালের খননকাজের উদ্বোধন করেন।

এসময় গণমাধ্যমকর্মী পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে লালগালিচার ওপর দিয়ে খালে নামার বিষয়ে জানতে চান। প্রশ্ন করা হয়, 'আগে দেখতাম মেয়ররা এমন ধুমধাম করে উদ্বোধন করতেন। সেখানে হয়তো লালগালিচা থাকত না। কিন্তু আজকে দেখলাম আপনারা খালেই নামলেন লালগালিচার ওপর দিয়ে।'

জবাবে পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, তিনি দেখেননি, তিনি এটা খেয়াল করেননি।

লালগালিচা নিয়ে ডিএনসিসির ব্যাখ্যা

ভাসমান এক্সকাভেটরে যেতে লাল কার্পেট বিছানোর কারণ কী— এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইনের সই করা এক প্রেস নোটে জানানো হয়, 'যেখানে ভাসমান এক্সকাভেটর রাখা হয়েছে তা কোনো স্থায়ী পন্টুনে স্থাপিত নয়, বরং একটি অস্থায়ী স্থানে রাখা হয়েছে। এছাড়া এক্সকাভেটরে ওঠার রাস্তাটি অনেক ঢালু ও কাদা মাটির হওয়ায় এবং এক্সকাভেটরের ফ্লোর পিচ্ছিল থাকায় অতিথিদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য এবং চলাচল এলাকা দৃষ্টিগ্রাহ্য করতে একটি লাল রঙের কার্পেট সদৃশ ম্যাট ব্যবহার করা হয়েছে।'

প্রেস নোটে আরও বলা হয়, 'এটি কোনো আনুষ্ঠানিক লাল গালিচা নয়, বরং শুধুমাত্র নিরাপত্তার স্বার্থে রাখা একটি ব্যবস্থা। এখানে কোনো ধরনের অপব্যয় বা অতিরিক্ত শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদ্দেশ্য নেই। যেহেতু ভাসমান এক্সকাভেটরে ওঠানামার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ, তাই ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।'

খাল খনন ও উদ্ধার

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'বর্ষার আগে আপাতত ৬টা খাল দখল ও দূষণমুক্ত করতে সক্ষম হব এবং খুব শিগগিরই আরও ৪টা খাল দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজ শুরু করব এবং এই বর্ষার আগেই বাকি আরও ৯টির কাজ শুরু হবে। অর্থাৎ এ বছরের মধ্যেই ১৯টি খালের দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।'

ঢাকার নদী ও খাল রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, 'এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং আমাদের এখনই শুরু করতে হবে। আমরা যদি উদ্যোগ না নিয়ে মাস্টার প্ল্যানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি তবে পুনরুদ্ধার কাজ কখনই শুরু হবে না।'

তিনি বলেন, এই খালগুলো জীবনের উৎস হওয়া উচিত। এখানে সমৃদ্ধ বাস্তুতন্ত্র থাকা উচিত, কিন্তু বর্তমানে এগুলো মশার প্রজনন ক্ষেত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।'

খালগুলো পুনরুদ্ধারে আশপাশের এলাকায় সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি। 'এই খালগুলোতে কেবল পয়ঃবর্জ্য ফেলা হয় না, আসবাবপত্র এমনকি বিছানাও ফেলে যান অনেকে। এটা আর বরদাসত করা হবে না।

তিনি বলেন, রাতারাতি দূষণ দূর করা সম্ভব নয়। ৫৩ বছর ধরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে অবহেলা করা হয়েছে। মাত্র পাঁচ মাসে কীভাবে এর সমাধান সম্ভব? তবে বাসিন্দাদের অসহনীয় দুর্গন্ধ কমাতে আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সমাধান নিয়ে কাজ করছি।

Comments

The Daily Star  | English

Remittances grow 3% in January

Migrants sent home $2.18 billion in the first month of 2025

1h ago