সাঁওতাল নারীকে মারধর ও জমি দখল: সব আসামিকে গ্রেপ্তার-শাস্তিসহ ৭ দাবি

ভূমি ও মানবাধিকার সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের জমি দখলকে কেন্দ্র করে আদিবাসী নারীকে মারধর ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দাবি করেছে ভূমি, আদিবাসী ও মানবাধিকার সংস্থা।

আজ মঙ্গলবার ১৭টি ভূমি ও মানবাধিকার সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বক্তারা। 

আয়োজক সংস্থাগুলোর পক্ষে এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় গত ৩ জানুয়ারি আদিবাসীদের জমিতে রাজাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও তার লোকদের মাটি ভরাটকে কেন্দ্র করে এক আদিবাসী নারীকে মারধর ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। 

এ ঘটনায় নাগরিক সমাজ ও জাতীয় পর্যায়ের ভূমি ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা গত সপ্তাহে সরেজমিনে ঘটনার তথ্য অনুসন্ধানের জন্য সেখানে যান। প্রাপ্ত তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে শিগগির ওই ঘটনায় অভিযুক্ত সব আসামিকে প্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। 

সেইসঙ্গে প্রশাসনের প্রতি বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আদিবাসীদের যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, তা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য এবং আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে দৃশ্যমান ফলাফল দেখাতে শিগগির সব আসামিকে প্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

এছাড়া, প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসকের  অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং আদিবাসী বিদ্বেষী মন্তব্য করার জন্য তার অপসারণেরও দাবি তোলেন বক্তারা। 

তারা আরও বলেন, 'জেলা প্রশাসকের মাথায় আদিবাসীদের জমিতে ইপিজেড করার ভুত চেপে আছে। এটি কখনোই সম্ভব নয়। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।'

আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে বেশকিছু দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো—

১। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় গত ৩ জানুয়ারির ঘটনা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশকে তদন্ত করতে হবে। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্মের সাঁওতাল পল্লীতে আক্রমণের কারণে পুলিশের ওপর আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। আস্থা ফিরিয়ে আনতে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া অতীব জরুরি।

২। সাঁওতাল নারীদের মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেপ্তার চেয়ারম্যান ও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।

৩। চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের জোরপূর্বক সাঁওতাল আদিবাসীদের জমি দখলকে কেন্দ্র করে হত্যার উদ্দেশ্যে রাতে সাঁওতাল বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।

৪। রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে রফিকুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করতে হবে।

৫। সাঁওতালদের পৈতৃক জমি চেয়ারম্যান থেকে উদ্ধার করে সাঁওতালদের তা ফিরিয়ে দিতে হবে। চেয়ারম্যানের অবৈধ দখলে রাখা খাস পুকুর উদ্ধার করে সাঁওতাল আদিবাসীদের লিজ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৬। সাঁওতাল আদিবাসীদের কবরস্থান উদ্ধার করে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক কবরস্থান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থায়ী দেওয়াল নির্মাণ করতে হবে।  

৭। গাইবান্ধার বর্তমান জেলা প্রশাসক সাঁওতাল আদিবাসীদের প্রতি যে বিদ্বেষমূলক আচরণ প্রদর্শন, ক্ষমতার দম্ভ প্রদর্শন এবং রাষ্ট্রীয় নীতির তোয়াক্কা না করে ৪ ফসলি জমিতে ইপিজেড করার চক্রান্তের জন্য অবিলম্বে তাকে অপসারণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এএলআরডির ম্যানেজার রফিক আহমেদ সিরাজী তথ্যানুসন্ধানের লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। 

এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, লেখক-গবেষক পাভেল পার্থ, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ, ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এসএম রেজাউল করিম, কাপেং ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক হিরন মিত্র চাকমা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। 

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক সংস্থাগুলো হলো—এএলআরডি, ব্লাস্ট, বাংলাদেশে আদিবাসী ফোরাম, কাপেং ফাউন্ডেশন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, নিজেরা করি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, বাগদা ফার্ম ভুমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী-বাঙালি ঐক্য পরিষদ, পিইউপি, রোপ, স্বপ্ন, পেইস্ট, ছিন্নমূল, পল্লী উন্নয়ন অগ্রগতি, নিত্যবিকাশ কেন্দ্র ও তরণী।

Comments