সাঁওতাল নারীকে মারধর ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ: জড়িতদের শাস্তি দাবিতে ৪৭ নাগরিকের বিবৃতি

আগুনে একটি ঘর পুড়ে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় এক সাঁওতাল নারীকে লাঞ্ছনা এবং সাঁওতালদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ৪৭ বিশিষ্ট নাগরিক। একইসঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন তারা।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি করা হয়।

এতে বলা হয়, ৩ জানুয়ারি গোবিন্দগঞ্জের রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় সাঁওতালদের জমিতে মাটি ভরাট শুরু করেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার লোকেরা। এ সময় কয়েকজন যুবক বাধা দেন। তখন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন নেকোলাস মুর্মু নামের এক যুবককে মারধর করে। পরে ব্রিটিশ সরেন নামের এক যুবক প্রতিবাদ করতে গেলে চেয়ারম্যান তাকে মারধরের হুমকি দেন। তখন ব্রিটিশ সরেনের মা এগিয়ে গেলে তাকে মারধর করে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। সেদিন রাতে ব্রিটিশ সরেনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন চেয়ারম্যানের লোকজন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ওই ঘটনায় শনিবার বিএনপির ওই চেয়ারম্যানসহ ২০ থেকে ২৫ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ওই চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তবে এই বহিষ্কার যথেষ্ট নয়। এ ধরনের দখলবাজির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকারের ঘোষণা দেওয়া বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের বিশেষ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত কমেছে। সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ও বিভাজন সৃষ্টি করে রাজাহার ইউনিয়নে তাদের জমি জবরদখল করা হয়েছে এবং ভয় দেখিয়ে তাদের প্রায় ২৫০ একর জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই জমি কীভাবে দখল হলো তা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করতে হবে। একইসঙ্গে দখলকারী এবং ভূমি অফিসে তাদের সহযোগীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।

বিবৃতিতে সই করেছেন—আনু মোহাম্মদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা; খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি; ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি; ড. স্বপন আদনান, ভিজিটিং রিসার্স ফেলো, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়; অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও চেয়ারপার্সন, আসক; ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, নির্বাহী পরিচালক, রীব; ড. পারভীন হাসান, ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্টাল উইম্যান ইউনিভার্সিটি; ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট; তাসলিমা ইসলাম, প্রধান নির্বাহী (ভারপ্রাপ্ত), বেলা; শিরীন পারভীন হক, সদস্য, নারীপক্ষ; ড. সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসোসিয়েশ ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি); ড. ফস্টিনা পেররা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; ড. জোবাইদা নাসরীন, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী; রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ফিরদৌস আজিম, অধ্যাপক, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়; ড. নোভা আহমেদ, অধ্যাপক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়; মাইদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; অ্যাড. তবারক হোসেইন আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; অ্যাড. সালমা আলি, নির্বাহী পরিচালক, বিএনডব্লিউএলএ; সাঈদ নাসের বখতিয়ার আহমেদ, চেয়ারম্যান, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি; সালেহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন; মনিন্দ্র কুমার নাথ, ভারপ্রাপ্ত সা্ধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং রাহনুমা আহমেদ, কবি ও লেখক।

আরও আছেন—তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রেজাউর রহমান লেনিন, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী; সায়দিয়াগুলরুখ, সাংবাদিক ও গবেষক; রোজিনা বেগম, গবেষক ও অধিকারকর্মী; জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ; পল্লব চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, কাপেং ফাউন্ডেশন; অ্যাড. সাইদুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন; অ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; ব্যারিস্টার শুভ্র চক্রবর্তী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; ব্যারিস্টার শাহাদাত আলম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; অ্যাড. এম এম খালেকুজ্জামান, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; অ্যাড. নাজমুল হুদা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; অ্যাড. রেজাউল হক, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; দীপায়ন খীসা, কেন্দ্রিয় সদস্য, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; হানা শামস আহমেদ, আদিবাসী অধিকার কর্মী এবং মুক্তাশ্রী চাকমা, কোর গ্রুপ মেম্বার, সাঙ্গাত।

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

2h ago