গুমবিরোধী সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ পাঠ্যবইয়ে
নতুন বছরে অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে উঠে এসেছে 'মায়ের ডাক' সংগঠনের কথা। সংগঠনটি বিগত আওয়ামী শাসনামলে গুম হওয়া পরিবারগুলোর একটি প্ল্যাটফর্ম।
অষ্টম শ্রেণির ইংলিশ ফর টুডে বইয়ের 'অভ্যুত্থানে নারীর ভূমিকা' শীর্ষক অধ্যায়ে সংগঠনটির নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আমরা 'মায়ের ডাক' সংগঠনের মতো নারীদের উদ্যোগ দেখেছি, যাদের পরিবারের সদস্যদের গুম করা হয়েছিল। সংগঠনটি স্বৈরাচারী শাসনামলের বিরুদ্ধাচরণের এবং ন্যায়বিচার চাওয়ার প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
'তারা বিক্ষোভ করেছিল এবং তাদের নিপীড়িত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু থামানো যায়নি তাদের,' বইয়ের ১৩৯ পৃষ্ঠায় ওই অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়।
পাঠ্যপুস্তকের ১৪০ পৃষ্ঠায় 'মায়ের ডাকে'র বিক্ষোভের একটি ছবিও রয়েছে।
মায়ের ডাকের অন্যতম সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা ইতিহাস। এটা আমাদেরও অনুপ্রাণিত করবে। আমার কাছে এটা সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে যে নিখোঁজদের পরিবারগুলো কীভাবে সংগ্রাম করে গেছে।'
তিনি বলেন, 'মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করতে হয়, নতুন প্রজন্মই শুধু না সাধারণ মানুষও তা জানতে পারবে।'
'আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া উচিত। আমরা সবসময় জয়ী হব এমন নয়। তবে আশা জাগিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ,' বলেন সানজিদা।
গুমের শিকার আটটি ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে 'মায়ের ডাক' সংগঠন গড়ে তোলেন। এখন প্রায় এক হাজার পরিবার এই প্ল্যাটফর্মের সদস্য, যাদের পরিবারের কেউ না কেউ গুমের শিকার হয়েছেন। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামল থেকেই তারা সোচ্চার ছিলেন।
গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গুম সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। কমিশন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনও দিয়েছে। প্রতিবেদনে তারা বিগত শাসনামলে ঘটে যাওয়া গুমের এক হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেছে।
কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অভিযোগগুলোর মধ্যে ৭৫৮টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ২৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২০০ জন তাদের পরিবারের কাছে ফিরে আসেননি।'
কমিশনের ধারণা, গুমের ঘটনা সাড়ে ৩ হাজারের বেশি হতে পারে।
গত ১৬ ডিসেম্বর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, 'গুম কমিশনের প্রতিবেদন লোমহর্ষক। মানুষ মানুষের প্রতি কী পরিমাণ নৃশংস হতে পারে, এতে আছে তার বিবরণ। অবিশ্বাস্য বর্ণনা!'
তিনি বলেন, 'গত সরকারের ঘৃণ্যতম অধ্যায়ের ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে এই প্রতিবেদন অমর হয়ে থাকবে।'
Comments