নাটোরে তাবলিগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত অন্তত ৩০

সংঘর্ষের সময় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে যান চলাচল ঘণ্টাখানেক বন্ধ থাকে। ছবি: স্টার

নাটোরে মারকাজ মসজিদের দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে তাবলিগ জামাতের দিল্লি মারকাজ ও দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারী জুবায়ের এবং সাদপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নাটোর শহরতলীর তেবাড়িয়া এলাকায় মসজিদ প্রাঙ্গণেই এই সংঘর্ষ শুরু হয়। চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

সংঘর্ষের সময় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে যান চলাচল ঘণ্টাখানেক বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুই পক্ষকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তেবাড়িয়া মারকাজ মসজিদের দখল নেন জুবায়েরপন্থীরা। সেখানে একটি কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর কিছু ছাত্ররা অবস্থান নেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সাদপন্থীরা 'ইজতেমা' আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে মারকাজ মসজিদে আসলে শুরুতে দুই পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।

এ সময় দুই পক্ষের অনুসারীরাই সড়কে অবস্থান নিলে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে যান চলাচলা বন্ধ হয়ে যায়। এতে দীর্ঘ সময়ের জন যানজট তৈরি হয় সড়কে। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী এসে দুই পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করে। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও এখন পুরো এলাকাজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ঘটনাস্থল থেকে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুর রহমান বলেন, 'আমরা দুই পক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করছি। সংঘর্ষে অনেক মানুষ আহত হয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আরিফ হোসেন বলেন, 'আগামী রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠক হবে। পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। প্রয়োজনে ১৪৪ ধারা জারি করা হবে।'

ভারতীয় উপমহাদেশের সুন্নি মতাবলম্বী মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় সংঘ তাবলিগ জামাতের মূল কেন্দ্র বা মারকাজ ভারতের দিল্লিতে। কেন্দ্রীয় ওই পর্ষদকে বলা হয় নিজামউদ্দিন, যার ১৩ জন শুরা সদস্যের মাধ্যমেই উপমহাদেশে তাবলিগ জামাত পরিচালিত হয়।

ভারতের ইসলামি পণ্ডিত ইলিয়াছ কান্ধলভী ১৯২০ এর দশকে তাবলিগ জামাত নামের এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন। স্বেচ্ছামূলক এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধের প্রচার।

মাওলানা ইলিয়াছের মৃত্যুর পর তার ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ এবং তারপর মাওলানা ইনামুল হাসান তাবলিগ জামাতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। মাওলানা ইনামুলের মৃত্যুর পর একক আমিরের বদলে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেওয়া হয় শুরা কমিটি বা নিজামউদ্দিনের ওপর।

সেই শুরা কমিটির সদস্য মাওলানা জুবায়েরের মৃত্যুর পর ইলিয়াছ কান্ধলভীর নাতি মাওলানা সাদ কান্ধলভী নিজেকে আমির ঘোষণা করে একক নেতৃত্বের নিয়ম ফিরিয়ে আনেন।

কিন্তু মাওলানা জুবায়েরের ছেলে মাওলানা জুহাইরুল হাসান তখন নেতৃত্বের দাবি নিয়ে সামনে আসেন এবং তার সমর্থকরা নতুন করে শুরা কমিটি গঠনের দাবি জানান। সাদ তা প্রত্যাখ্যান করলে বিরোধ বড় আকার ধারণ করে। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের মধ্যেও।

 

Comments

The Daily Star  | English
US attack on Iran nuclear sites

Iran denounces US attack as ‘outrageous’

Iran says 'no signs of contamination' after US attacks on key nuclear sites

8h ago