পুলিশের মারণাস্ত্র ব্যবহারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মানা হয়নি: আইজিপি

চট্টগ্রামে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের মারণাস্ত্র ব্যবহারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মানা হয়নি। পুলিশ সদস্যরা জাতিসংঘ মিশন গেলে যে মানদণ্ড মেনে থাকেন, এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। পুলিশ এটি নিয়ে কাজ করছে।

আজ শনিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে, সকালে চট্টগ্রামে আসেন আইজিপি। দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনসে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন পুলিশ সভা করেন। বিকেলে নগর পুলিশের দামপাড়ায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বেঠক করেন। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী সভার পর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। 

পুলিশের সংস্কার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আইজিপি বলেন, 'পুলিশের সংস্কার একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। এটি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। আমরা আলোচনা করছি। সরকার এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত আন্তরিক। সরকারি কমিটির বাইরে পুলিশ নিজেরাও সংস্কারের জন্য কমিটি করেছে। মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদের ১১টি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি করা হয়েছে। পোশাক এবং ডিউটি টাইমসহ নানা ইস্যু উঠে এসেছে।'

'একটি জায়গায় পুলিশকে আমরা জোর দিয়ে সংস্কার করতে চাই, সেটি হলো পুলিশের লেথাল ওয়েপন বা মারণাস্ত্রের ব্যবহারবিধি। লেথাল ওয়েপন ব্যবহারে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মানা হয়নি। পুলিশ সদস্যরা জাতিসংঘের মিশনে গেলে যে স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে থাকেন, এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। আমরা এর ওপর কাজ করছি', বলেন তিনি।

আইজিপি বলেন, '৫ আগস্টের পর পুলিশের প্রশিক্ষণে "সফট স্কিলের" ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রশিক্ষণকে ঢেলে সাজাচ্ছি। কমিউনিকেশন-অ্যাটিচিউডসহ নানা বিষয় নিয়ে কাজ করছি। যাতে পুলিশ জনতার পুলিশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।'

'যেসব পুলিশ, ছাত্র-জনতা মারা গেছেন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রতিটি মৃত্যুর বিচার করা হবে। আন্দোলনে ৪৪ জন পুলিশ সদস্য ও দুই হাজার ৫০০ জনের মতো আহত হয়েছেন। যে পুলিশ সদস্যরা মারা গেছেন তাদের মৃত্যুর প্রতিদান হবে পুলিশের আগামী দিনের কাজের মাধ্যমে', যোগ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে গুজব সৃষ্টি করে একটি পক্ষ সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে বলেও জানান আইজিপি।

পুলিশের চলমান যৌথ অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, 'এখন পর্যন্ত পুলিশ এবং বিভিন্ন বাহিনীর লুণ্ঠিত অস্ত্রের প্রায় ৭৫ ভাগ উদ্ধার (২৩৮টি) করা সম্ভব হয়েছে।'

আসন্ন দুর্গাপূজা সম্পর্কে আইজিপি বলেন, 'এই পূজা যেন উৎসবের মাধ্যমে পালন করা হয় তার পরিপূর্ণ ব্যবস্থা থাকবে।'

'আসামি হলেও নিরপরাধ কারও ভয় পাওয়ার কারণ নেই'

মামলার ক্ষেত্রে সরাসরি পুলিশের ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই জানিয়ে আইজিপি বলেন, 'যে মামলাগুলো হচ্ছে সেই মামলাগুলোতে যেমন অনেক সাংবাদিক আছেন, তেমনি অনেক পুলিশ সদস্যও আসামি রয়েছেন। সাংবাদিকদের চেয়ে পুলিশের অনেক বেশি সদস্য মামলার আসামি হয়েছেন। বিজিবি, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের আসামি করা হয়েছে।'

'যারা মামলার বাদীপক্ষ, তারা আমাদের সমাজের অংশ। যারা সত্যিকার অর্থে ঘটনায় জড়িত, তাদের আসামি করলে মামলা শক্ত ও তদন্ত করা সহজ হয়। আমরা থানা পুলিশকে বলেছি, থানায় মামলা রেকর্ড করার আগে তা যাচাই-বাছাই করে নিতে। মামলা হলে যে গ্রেপ্তারের আওতায় আসবে সেটা আইন বলে না। আমরা পৃথক তদন্ত কমিটি করেছি। আমরা মামলার তথ্যাদি সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাই করছি, বিশ্লেষণ করছি যাতে নিরপরাধ কেউ আসামি না হন', বলেন আইজিপি।

যেসব অপরাধী, জঙ্গি জামিনে এসেছেন তারা যদি আবার অপরাধে জড়িত হন তাহলে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Has IMF experiment delivered?

Two years after Bangladesh turned to the International Monetary Fund (IMF) for a $4.7 billion bailout to address its worsening macroeconomic pressures, the nation stands at a crossroads.

9h ago