গাজী টায়ারস: ২১ ঘণ্টায়ও নেভেনি আগুন, লুটপাট চলছে এখনো

আজ সন্ধ্যায়ও গাজী টায়ারসের একটি ভবনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

গাজী টায়ারসের ছয়তলা ভবনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুন নেভেনি ২১ ঘণ্টাও। একদিকে ভবনটিতে আগুন জ্বলছে, অন্যদিকে দিনভর কারখানাটির বিভিন্ন অংশে লুটপাট চলে।

যদিও, কারখানার ভেতরে ও বাইরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য উপস্থিত আছে।

গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে গাজী গ্রুপের ওই টায়ার কারখানায় আগুন দেওয়া হয়। এর আগে দুপুর থেকে চলে লুটপাট।

আজ সোমবার সন্ধ্যায়ও কারখানার মূল চত্ত্বরের বাইরের অংশে লুটপাট চলে দেখা গেছে।

স্থানীয় নারী-পুরুষদের কারখানা থেকে অনেক কিছু নিয়ে যেতে দেখা যায়। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ঢাকা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে জানান, কারখানার একটি ছয়তলা ভবনে এখন আগুন জ্বলছে। আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। আগুন ছড়ানোর শঙ্কা নেই।

তিনি বলেন, 'কারখানায় থাকা টায়ার প্রস্তুতের বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নেভাতে সময় লাগছে। আগুন পুরোপুরি নেভানোর পর কারখানার ভেতরে নিখোঁজদের সন্ধান করা হবে।'

দুপুর ১২টার দিকে যখন ভবনটি দাউ দাউ করে জ্বলছিল, তখনও স্থানীয় কয়েকজন নারী-পুরুষকে কারখানার ভেতর থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করতে দেখা গেছে।

কারখানার সামনে ও ভেতরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে কারখানার মূল অংশে লুটপাট হয়নি। 

তবে কারখানা চত্বরের আশেপাশে বিভিন্ন অরক্ষিত অংশ থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, স্টিল, প্লাস্টিক ও তামা লুট করে অনেকে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ক্যানেলে কারখানা থেকে নির্গত জ্বালানি তেল সংগ্রহ করতেও দেখা গেছে অনেককে।

কারখানার বাইরের অংশে কয়েকজন জানালা ভেঙে লুট করছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তারা কথা বলতে রাজি হননি।

তবে এক যুবক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, 'গাজী আমাগোরতে অনেক খাইছে। এইটা আমাগোই।'

সকালে কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রোববার দুপুরে কয়েকশ লোক কারখানায় ঢুকে পড়ে। তাদের বাধা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। লুটপাটের সময় রাত ৯টার দিকে কারখানার ছয়তলা ভবনটির নিচতলায় আগুন লাগিয়ে দেয় লুটপাটকারীরা।'

দুপুরে লুটপাট শুরু হলে পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করেন সহকারী মহাব্যবস্থাপক।

কারখানা থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং লৌহজাত জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় অনেকে। ছবি: স্টার

তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, 'পুলিশ কোনো অবহেলা করেনি। আমরা কারখানার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।'

প্রশ্নের জবাবে একই কথা বলেন শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, 'যারা কারখানাটিতে ঢুকেছিলেন তারা লুটপাট করতে ঢুকেছিলেন। এমনকি তারা টয়লেটের কমোড পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। খবর পাওয়ার পর থেকে কাজ শুরু করেছি। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর একবার এ কারখানা লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তারপর থেকে সেখানে কোনো গার্ড ছিল না, নিরাপত্তা প্রহরী ছিল না, প্রাচীরও ছিল না।'

'কারখানাটি পুরোপুরি অরক্ষিত ছিল। এ অবস্থায় বিভিন্ন এলাকার অনেক লোকজন ঢুকে মালামাল, মেশিন লুট করে। এমনকি টয়লেটের কমোডও নিয়ে গেছে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের অনেকগুলো ইউনিট কাজ করছে। আমরা রাত থেকে টানা ডিউটি করছি, কেবল শিফটিং চেঞ্জ হয়েছে। এটা একটা ক্রিমিন্যাল অফেন্স। আমরা আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী যথেষ্ট কাজ করেছি।'

লুটপাটের বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ রাসেল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কারখানার লুটপাট ঠেকাতে পুলিশ, শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করেছি তারা যেন আরও শক্ত অবস্থান নেয়।'

Comments

The Daily Star  | English
election before ramadan 2026 in Bangladesh

Election possible a week before Ramadan next year: Yunus tells Tarique

He said it will be possible if preparations completed, sufficient progress made in reforms and judicial matters

3h ago