বিচারপতি মানিকের ‘৬০-৭০ লাখ টাকা, ব্রিটিশ পাসপোর্ট’ এবং আটক নিয়ে যা জানা গেল
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আজ শনিবার সকালে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে গতকাল শুক্রবার স্থানীয়দের সহযোগিতায় সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে আটক করেন বিজিবি সদস্যরা।
বিচারপতি মানিককে আটকের সময় এবং পরবর্তীতে সীমান্তবর্তী বিজিবি ক্যাম্পে অবস্থানের সময় ধারণকৃত কিছু ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এসব ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দিন ও অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিচারপতি মানিক বৃহস্পতিবার সীমান্তবর্তী ওই এলাকায় আসেন এবং দালালদের সহযোগিতায় দেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশও করেছিলেন।
সূত্র জানায়, দনা সীমান্তবর্তী পাতিছড়া গ্রামের এক দালালের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার তিনি সেখানে যান এবং শুক্রবার বিকেলে দিকে ওই ব্যক্তি তাকে ভারত সীমান্তের ভেতরে নিয়ে যান।
ওই ব্যক্তির বাড়ি একেবারে সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় তিনি নিজে নিয়মিত ভারতে অনুপ্রবেশ করেন এবং তার সহযোগিতায় বিভিন্ন মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে থাকেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া একটা ভিডিওতে দেখা যায় বিচারপতি মানিক কলাপাতার ওপরে শুয়ে থেকে কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করছেন।
তখন তিনি বলছিলেন, 'পয়সা আমি দিবো, আমার ভাই-বোন দিবে। আমি এদেশে এত কষ্ট করে এসেছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য?'
এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত কাউকে বলতে শোনা যায় 'আমাদের পয়সা লাগবে না, আপনি যদি সেফটি চান…'
পরবর্তীতে বিজিবি ক্যাম্পে ধারণ করা আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায় বিচারপতি মানিকের গলায় গামছা বেঁধে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি সীমান্তে প্রতারিত হয়েছেন বলে
উল্লেখ করেন এবং জানান যে দালালদের সঙ্গে ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে সীমান্ত পার করে ভারতে প্রবেশ করেন, তারা তাকে মারধর করে তার কাছে থাকা ৬০-৭০ লাখ টাকা, মোবাইল ফোন এসব নিয়ে পালিয়ে গেছে। এখন তার কাছে বাংলাদেশি ও ব্রিটিশ পাসপোর্ট, ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ও কিছু টাকা আছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দালালরা তাকে সীমান্ত পার করে দিতে চুক্তি করেছিল, তারা তাকে সীমান্তের ওপারে নিয়ে তার কাছ থাকা টাকা লুট করে পালিয়ে গেছে। পরে বিজিবির সহযোগিতায় তাকে সীমান্তের ভেতরে নিয়ে এলে তাকে আটক করা হয়।
আটকের রাত রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (১৯ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার মো. আসাদুন্নবী জানান, 'সীমান্ত হয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় তাকে আটক করা হয়। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।'
পরে সকালে তাকে কানাইঘাট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বিজিবি।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, 'সকালে বিজিবি সদস্যরা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মানিককে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দেশের অন্যান্য জায়গায় মামলা থাকলে তাকে সে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।'
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি অবসরে যান।
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বেসরকারি একটি টেলিভিশনের টকশোর সঞ্চালক দীপ্তি চৌধুরীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে তাকে 'রাজাকারের বাচ্চা' বলে আখ্যা দিলে বিষয়টি নিয়ে চরম সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
গত ১২ আগস্ট তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। এ নোটিশের প্রত্যুত্তরে বিচারপতি মানিক দীপ্তি চৌধুরীর কাছে এবং জাতির কাছে ক্ষমা চান।
১৯ আগস্ট বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে মানহানির একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২০২২ সালে একটি টকশোতে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিহিত করার ঘটনার জেরে এ মামলা দায়ের করেন একজন আইনজীবী।
Comments