বগুড়া

শিক্ষার্থীদের জন্য এক স্কুলশিক্ষকের আত্মত্যাগ

সেলিম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিতে এসে আর ঘরে ফেরা হয়নি বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল লাইট হাইস্কুলের শিক্ষক সেলিম হোসেনের।

গত ৪ আগস্ট বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারান সেলিম হোসেন।

সেলিম হোসেনের বাড়ি বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার পালিকান্দা গ্রামে। তিনি মা-বাবা-ভাইদের নিয়ে থাকতেন বগুড়া শহরের তেলিপুকুর এলাকায়।

সেলিম হোসেনের ছোট ভাই উজ্জ্বল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এর আগে কখনো মিটিং-মিছিলে যেতেন না। কিন্তু আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর নির্বিচার গুলি করার দৃশ্য দেখে তিনি নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি। ভাই বাড়িতে মিথ্যা কথা বলে এসে শহরে ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতেন।'

সেলিম গত ৪ অগাস্ট সকাল ১১টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তার ছোট ভাই উজ্জ্বলও সেদিন আন্দোলনে যোগ দেন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে উজ্জ্বল বলছিলেন, 'আমি পুলিশের টিয়ারশেলে আহত হলে দুপুর ২টার দিকে বাড়িতে চলে আসি। ভাইয়ের সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফোনে জানান যে সাতমাথায় তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। সেখানেই তিনি মারা গেছেন।'

'বিকেল ৩টার দিকে উপজেলা ডাকবাংলোর সামনে পুলিশ যখন আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ছোড়ে তখন তারা সরে গেলেও সেলিম ভাই ডাকবাংলোর ভেতরে আশ্রয় নেন। পুলিশের সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজন তাকে দেখে ফেলে। তারা তাকে মারতে মারতে বাইরে এনে ছুরিকাঘাত করে। রক্তক্ষরণে সেখানেই তিনি মারা যান।'

উজ্জ্বল বলেন, 'আমার ভাইয়ের দেড় বছরের একটা ছেলে আছে। তিনি ছেলেকে রেখে ১টা রাতও বাইরে থাকতেন না। সেই ভাই আমার বাসায় মিথ্যা কথা বলে ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।'

সেলিমের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, 'আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠার পর আমার স্বামী ঘুমাতে পারতেন না। শুধু অনলাইনে খবর দেখতেন। আমাকে দেখিয়ে বলতেন দেখ আমার দেশের কি অবস্থা। এগুলো আমার সহ্য হয় না। ছাত্রদের জন্য আমি কিছু করতে চাই।'

এই ঘটনায় সেলিমের বাবা সিকান্দার হোসেন বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় গত ১৬ জুলাই শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও স্থানীয় আরও ৯৯ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নাম হত্যা মামলা দায়ের করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Wrap up polls preparations by December

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday ordered the authorities concerned to complete, by December, the preparations for the upcoming national election.

7h ago