‘বাসায় ফিরে বাচ্চাদের কী জবাব দেব’

নিহত ফারুকের মরদেহের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী সীমা আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

একটি হোটেল থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে কাজে ফিরছিলেন মোহাম্মদ ফারুক (৩২)। পথিমধ্যে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান তিনি।

সেখানে হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। বিকেলের দিকে তাকে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, স্বামীর মরদেহের পাশে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী সীমা আক্তার। 

চট্টগ্রাম মহানগরীর শুলকবহর এলাকায় শাহজালাল ফার্নিচার নামে একটি দোকানে কাজ করতেন ফারুক। আট বছর বয়সী ছেলে ফাহিম ও পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে ফাহিমাকে নিয়ে ভালই চলছিল সীমা-ফারুকের সংসার।

হাসপাতালে বিলাপ করতে করতে সীমা বলছিলেন, 'তিনটার দিকে দুপুরের খাবার খেয়ে দোকানে ফিরছিলেন ফারুক। আমাকে ফোন করে বলছিল হোটেল থেকে খাবার খেয়েছে। দোকানে ফিরে ফোন দেবে বলেছিল।'   

সীমা জানান, ১৭ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই লালখান বাজার এলাকায় আছেন তারা। ফার্নিচারের দোকানে ৮ বছর ধরে চাকরি করছিলেন ফারুক।

'সন্তানদের অসুস্থ শাশুড়ির কাছে রেখে আসছি। বাসায় ফিরে গিয়ে তাদের কী জবাব দেব। আমার মেয়ে তার বাবাকে ছাড়া একদিনও থাকতে পারে না,' বলছিলেন সীমা।

ফারুকের বেতনেই তাদের সংসার চলত বলে জানান তিনি।

ফারুকের বাবা আব্দুল দুলাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনটার দিকে কর্মস্থলের পাশে মুরাদপুর এলাকার একটি হোটেলে দুপুর খাবার শেষে রাস্তায় পার হওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয় ফারুক।' 

কোট সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময়ই ফারুক গুলিবিদ্ধ হন বলে জানান তিনি।

ফারুকের বাবা চট্টগ্রাম শহরে ভ্যানগাড়ি চালান। সন্তানের জন্য আহাজারি করতে করতে কয়েকবার জ্ঞান হারান তিনি।

ছয় ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে ফারুক দ্বিতীয় বলে জানান তিনি।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা হলেও ফারুক পরিবার নিয়ে থাকতেন চট্টগ্রাম লালখান বাজার এলাকায়। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চারটার দিকে আহত কয়েকজনের সঙ্গে ফারুককেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। ফারুকসহ তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন ইমার্জেন্সি বিভাগের মেডিকেল অফিসার নুসহাত ইমু।

নিহত অপর দুজন হলেন-চট্টগ্রাম কলেজের সমাজতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ওয়াসিম আকরাম। ওয়াসিম কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। 

অপরজন এমসি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ শান্ত। 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংঘর্ষে আহত অন্তত ৩০ জন এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ২০ জন।'

Comments

The Daily Star  | English

Not for kidney patient, they tried to rob bank for iPhones

Police say three robbers fabricated a story claiming that the robbery was to save a kidney patient

1h ago