একদিনের কসাই!

অন্য পেশার অনেকেই একদিনের জন্য কসাই হিসেবে কাজ করেন। ছবি: স্টার

ঈদুল আজহা ঘিরে প্রতি বছরই লাখো পশু কোরবানি দেওয়া হয়। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় জবাই হয় কয়েক লাখ পশু। যে সংখ্যক পেশাদার কসাই ঢাকা শহরে আছে, বিশেষ এই দিনের চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম।

এই দিনের চাহিদা মেটাতে তাই ঢাকার বাইরে থেকে যেমন কসাই আসেন, পাশাপাশি অন্য পেশার অনেকেই এই একদিনের জন্য কসাই হিসেবে কাজ করেন।

রাজধানীর পূর্ব শেওড়া পাড়ায় গিয়ে তেমনই একটি দলের দেখা পাওয়া যায়।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সময়ে তারা দুইটি গরু ও দুইটি খাসির কাজ করেছেন। গরুর জন্য তারা আট হাজার করে মোট ১৬ হাজার এবং খাসির জন্য এক হাজার করে মোট দুই হাজার টাকা পেয়েছেন।

তারা জানান, এই কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি যার, তিনি এক হাজার টাকা বেশি পান। বাকি টাকা সবার মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হয়।

এই চারজনের একজনের নাম আলামিন (২৮), যিনি পেশায় রিকশাচালক। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'ঈদের দিন রিকশা চালালে আয় হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। কিন্তু কসাই হিসেবে কাজ করলে আয় যেমন ভালো হয়, তেমনি মাংসও পাওয়া যায়।'

এই দলে কাজ করা রাজন মিয়া (৩৪) পেশায় কৃষক, থাকেন ময়মনসিংহে। তিনি জানান, কসাইয়ের কাজ করতে ঈদের দুইদিন আগে ঢাকায় এসে এক আত্মীয়র বাসায় উঠেছেন। ঈদের দিন কাজ করেছেন। আজ রাতেই বাড়ি ফেরার কথা তার।

রাজধানীতে কাজ করা অপেশাদার কসাইদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব গরুর দাম এক লাখের বেশি, সেগুলোর জন্য তারা ১০ হাজার টাকা করে নেন। আর এক লাখের কম মূল্যের গরুর জন্য নেন আট হাজার টাকা।

ইব্রাহিমপুরে দেখা যায় পাঁচজনের একটি দলকে কাজ করতে। তাদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ থেকে এই কাজের জন্য ঢাকায় এসেছেন আব্দুল হাকিম (৪০)। আরও আছেন ঢাকার রিকশাচালক আব্দুল জলিল (৫৪) ও হকার মতিউর রহমান (৫৫)। সঙ্গে ছিলেন তাদের আরও দুই সহকারী।

এই দল জানায়, মোট দুটি গরুর কাজ পেয়েছেন তারা। পারিশ্রমিক পাবেন মোট ২০ হাজার টাকা। সবাই চার হাজার টাকা করে নেবেন। আর সঙ্গে কিছু মাংসও পাবেন।

ইব্রাহিমপুরের বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, যেহেতু কোরবানির ঈদ ঘিরে কসাইদের চাহিদা বেশি থাকে, তাই অপেশাদার কসাই ভাড়া করেছি। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি পেশাদার কসাইয়ের জন্য। কিন্তু কাউকে পাইনি। বেলা বাড়ছে দেখে বাধ্য হয়েই তাদের ভাড়া করেছি।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, কোরবানির ঈদে ঢাকা বিভাগে আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয় লাখ গরু জবাই হয়। এর মধ্যে ঢাকা শহরে হয় দুই থেকে আড়াই লাখ। ঢাকায় কসাই (মাংসশ্রমিক) আছেন তিন হাজারের মতো। কিন্তু তাদের পক্ষে একদিনে এত গরুর কাজ করা সম্ভব না। ফলে এই দিনে কাজ করা কসাইদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই অপেশাদার।

'অনেকে ঢাকার বাইরে থেকে আসেন, যাদের মধ্যে পেশাদার কসাই যেমন আছেন, আবার নিম্ন আয়ের অন্য পেশার লোকও আছেন। পাশাপাশি রিকশাচালক, হকার ও কৃষকরাও একদিনের জন্য কসাই হিসেবে কাজ করেন। তারা একদিনের এই বিশাল চাহিদার সামাল দেন', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

3h ago