প্রতিদিন ৩-৪টি ট্রাক উল্টে যায় যে সড়কে

বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকার তিন কিলোমিটার সড়কটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ছবি: স্টার

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর। তবে এই স্থলবন্দরে যাওয়ার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। 

সড়কের বেহাল দশার কারণে ব্যবসায়ী ও যাত্রী, বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানিকারক ও পাসপোর্ট যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যান চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে জটিল সমস্যা। 

বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকার তিন কিলোমিটার সড়কটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা প্রবল হওয়ায় পরিবহন শ্রমিকরা যানবাহন চালাতে ভয় পাচ্ছেন। স্থলবন্দরে যাওয়া-আসার জন্য অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই ট্রাক ব্যবহার করায় রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং গত একমাসে এটি প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কের বেহাল দশার কারণে চালকরা যানবাহন নির্বিঘ্নে চালাতে না পারায় যানজটের সৃষ্টি হলেও তা সংস্কারের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ছবি: স্টার

স্থলবন্দরের ট্রাকচালক শরিফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সড়কে প্রতিদিন তিন থেকে চারটি পণ্যবোঝাই ট্রাকসহ অনেক যানবাহন উল্টে যাচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

তিনি বলেন, 'আমরা রাস্তায় ট্রাক চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করি।'

আমদানি করা পাথর ডেলিভারি করতে আসা ভারতের ট্রাকচালক শ্যামল দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের দেশে ২০০ কিলোমিটার রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে যে পরিমাণে ক্লান্ত হইনি, তার চেয়েও বেশি ক্লান্ত হয়েছি বুড়িমারী স্থলবন্দরের আধা কিলোমিটার রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে।'

'ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় গাড়ি চালানো সবসময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি এবং জীবনের ঝুঁকি বহন করে', বলেন তিনি।

বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি দিয়ে নিরাপদে যাতায়াত করতে না পারায় এলাকাবাসীও উদ্বিগ্ন। 

'আমরা সবসময় যানজটের সম্মুখীন হই, তাই গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে। আমরা রাস্তা মেরামতের দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি', বলেন তিনি।

ছবি: স্টার

বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সায়েদুজ্জামান সায়েদ ডেইলি স্টারকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাটি তাদের ব্যবসার জন্য মন্দপ্রভাব নিয়ে এসেছে। রাস্তার অবস্থা বেহাল হওয়ায় তাদের অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়া বহন করতে হচ্ছে। 

'আমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাটি মেরামতের জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছি, কিন্তু কোনো ফল হয়নি, যদিও তারা প্রতিদিন আমাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করছে', বলেন তিনি।

বুড়িমারী স্থলবন্দরে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (এডি) মেহেদী হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে সবসময়ই লক্ষ্যমাত্রার বেশি রাজস্ব আয় হয়। আমি সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলেছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। রাস্তাটি শিগগির মেরামত করা হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।'

লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং তা মূল্যায়ন পর্যায়ে রয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে আমরা যান চলাচলের জন্য সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করছি। টেন্ডার মূল্যায়ন শেষ হলেই সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবে।'

বুড়িমারী স্থলবন্দরের সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হবে বলেও জানান তিনি।

 

Comments