'আসামি' ধরতে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে পুলিশের মারধর ও টাকা লুটের অভিযোগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়াকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এসময় চেয়ারম্যানের বসত ঘরে থাকা নগদ ২৫ লাখ টাকা পুলিশ সদস্যরা লুটে নেয় বলেও অভিযোগ তুলেছে পরিবারের লোকজন।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ওই উপজেলার ছতরপুর গ্রামে চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়ার বাড়িতে আসামি ধরতে অভিযানে যায় বিজয়নগর থানা এবং স্থানীয় চম্পকনগর ফাঁড়ি পুলিশের একটি দল।
এসময় পুলিশ সদস্যরা চেয়ারম্যান জামালকে মারধর করে বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। আহতাবস্থায় তাকে বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে বিজয়নগর থানা পুলিশ বলছে, চেয়ারম্যান জামালকে মারধর করা হয়নি। তিনি মিথ্যে বলছেন এবং 'কল্পকাহিনী' সাজিয়েছেন।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, ২০১৮ সালে তার বাবা আব্দুল হক ভূঁইয়া ও তার নামে দায়ের করা একটি মামলায় ২০২১ সালে তাদের এক বছরের কারাদণ্ড হয়। তারা দুজন এই মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। ঘটনার ঠিক আগের দিন রোববার তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিন নেন। জামিন নেওয়ার পর আদালত থেকে একটি রিকল পেপারও সংগ্রহ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'বিজয়নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাসান জামিল খান ও সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পীযুষ কান্তি দে এবং চম্পকনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রবিউল ইসলামের নেতৃত্ব ১৫/২০জনের একদল পুলিশ আমার বাড়িতে এসে ভাঙচুর চালায় এবং মারধর করে। এসময় পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে জামিনের রিকল পেপার দেখানোর পরেও তারা বন্দুকের বাট দিয়ে আমার হাতে, কোমরে, কপালে ও চোখের কাছে আঘাত করেন। একই সময়ে পুলিশ সদস্যরা আমার পশ্চিম ভিটির মাটির ঘরে থাকা ওয়ারড্রোব তছনছ করে নগদ ২৫ লাখ টাকা নিয়ে যায়।'
নিজের খামারের জন্য গরু কেনার উদ্দেশ্যে ওই ২৫ লাখ টাকা তুলে ওয়ারড্রোবে রেখেছিলেন বলে জানান তিনি।
আক্ষেপ করে জামাল উদ্দিন বলেন, 'দিনদুপুরে একজন জনপ্রতিনিধির বাড়িতে পুলিশের এমন আচরণে আমার পরিবারের সবাই আতঙ্কে আছেন। বিষয়টি জানানোর জন্য আমি পুলিশ সুপারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েছি। তিনি কল না ধরায় এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট সব ছবি ও ডকুমেন্টস পুলিশ সুপারের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়েছে।'
এ ঘটনায় বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা, বিজয়নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাসান জামিল খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'জামাল চেয়ারম্যান ও তার বাবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভূক্ত আসামি ছিলেন। এজন্য পুলিশ তাদেরকে ধরতে অভিযান চালায়। অভিযান চলাকালে জামাল চেয়ারম্যান জামিনের রিকল পেপার দেখালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু এখন চেয়ারম্যান সম্পূর্ণ মিথ্যা বলছেন এবং কল্পকাহিনী সাজিয়েছেন। এমন কিছু হলে তো তার বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরায় এর প্রমাণ থাকার কথা।'
জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'বিষ্ণুপুরের চেয়ারম্যান যেসব অভিযোগ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে করছেন, তার প্রমাণ তিনি এখনও উপস্থাপন করতে পারেননি। প্রমাণ করতে পারলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ওই ইউপি চেয়ারম্যান যদি পুলিশের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে অভিযোগ তুলে থাকে তাহলে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।'
Comments