কমেছে পানিপ্রবাহ, পদ্মা যেন মরুভূমি

কমেছে পানিপ্রবাহ, পদ্মা যেন মরুভূমি
এটি কোনো মরুভূমি নয়। পাবনা ও কুষ্টিয়ার শিলাইদহের মধ্যবর্তী পদ্মা নদীর একটি অংশ। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় শত শত মানুষকে এই পথে প্রায় তিন কিলোমিটার বালুচর হাঁটতে হচ্ছে। ছবিটি বৃহস্পতিবার বিকেলে তোলা | ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

কুষ্টিয়ার শিলাইদহ এলাকা থেকে দিনমজুর আব্দুল হাকিমকে প্রতিদিন পদ্মা নদীর বিশাল চর পাড়ি দিয়ে পাবনা যেতে হয় কাজের সন্ধানে। শিলাইদহ ঘাট থেকে নৌকায় কিছু পথ পার হয়েই নামতে হয় বালুময় চরে।

তপ্ত বালুর বিশাল চর পায়ে হেঁটে মাঝে আরেকবার কিছুটা পথ নৌকায় পাড়ি দিতে হয়। এভাবে চার কিলোমিটার নদীপথের প্রায় তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে কোমরপুর ঘাটে এসে ভ্যান বা অটোতে করে পাবনা পৌঁছান তিনি।

শুধু নদী পার হতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যায় হাকিমের। আর এই পথেই দিন শেষে বাড়ি ফেরেন তিনি।

ঐতিহাসিকভাবেই শিলাইদহ-কোমরপুর ঘাট দিয়ে পাবনা ও কুষ্টিয়ার মধ্যে যাতায়াত করে আসছে নদী পাড়ের মানুষ। কালের বিবর্তনে শত বছরের পুরোনো এ নদীপথে যাতায়াত এখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাদের কাছে।

কমেছে পানিপ্রবাহ, পদ্মা যেন মরুভূমি
দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপদাহ। এদিকে পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাবনা ও কুষ্টিয়ার শিলাইদহের মধ্যবর্তী পদ্মা নদীর তিন-চতুর্থাংশ শুকিয়ে গেছে। ছবিটি বৃহস্পতিবার বিকেলে তোলা | ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

সরেজমিনে পদ্মা নদীর কোমরপুর-শিলাইদহ ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় চার কিলোমিটার নদীপথের তিন কিলোমিটারের বেশি পথ এখন ধু ধু বালুচর। কোথাও অল্প অল্প পানির দেখা মিললেও মূল নদীর বেশিরভাগ অংশ পরিণত হয়েছে মরুভূমির মতো বালুময়।

পদ্মার মাঝে কিছুটা পানি থাকায় দুই দফায় নৌকায় পাড়ি জমাতে হচ্ছে নদীর অপর প্রান্তে।

পাবনা থেকে শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে বেড়াতে যাওয়া জুবায়ের হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে আয়োজিত মেলা দেখার জন্য নদী পথে শিলাইদহ যেতে নদীর বিশাল চর পাড়ি দেওয়ার সময় মনে হয়েছে যেন মরুভূমির পথ দিয়ে চলেছি।'

শিলাইদহ ঘাটের নৌকার মাঝি মানিক হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বছরের পর বছর পদ্মা নদীতে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। শুষ্ক মৌসুমে নদী শুকিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কষ্টের ব্যাপার হলো, এ বছর নদীতে এত বিশাল চর পড়েছে যা আগে চোখে পড়েনি।'

নদীর চার ভাগের মধ্যে তিন ভাগের বেশি অংশ ধু ধু বালুচর। নদীর যে অংশটুকুতে পানি আছে সেখানেও পানির গভীরতা না থাকায় নৌকা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

মানিক বলেন, 'বর্ষার পানি চলে যাওয়ার পর নভেম্বর থেকেই নদী শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ডিসেম্বর থেকে নদী ছোট হয়ে বালুচর বাড়তে থাকে। বছরের ছয় মাসের বেশি সময় পদ্মা নদীর বিশাল বালুচরের মাঝে চলাচল দুর্বিষহ হয়ে পরে নদী পাড়ের মানুষের কাছে।'

নৌকার মাঝি মানিক বলেন, 'চলাচলের দুর্ভোগের কারণে এ নৌ-পথে যাত্রী কমে গেছে।'

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কসবা গ্রামের কুলফি আইসক্রিম বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গরমের সময় কুলফির চাহিদা বাড়ায় প্রতিদিন নদীর বিশাল দুর্গম চর পাড় হয়ে পাবনা বাজারে কুলফি বিক্রি করতে যাই। জীবিকার তাগিদে দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই বালুময় চরের মধ্যে দিয়ে চলতে হয়।'

এ বিষয়ে জানতে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর শুষ্ক মৌসুমে উজান থেকে পানি কম পাওয়ায় পদ্মায় পানিপ্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ফলে নদীর বিশাল এলাকা শুকিয়ে বালুচরে পরিণত হয়েছে।'

পদ্মা নদীর এই মরুময় অবস্থার জন্য ফারাক্কার প্রভাবকেই দায়ী মনে করছেন নদী বাঁচাও আন্দোলন পাবনার সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শহীদ।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফারাক্কার প্রভাবে উজান থেকে চাহিদামতো পানি না পাওয়ায় পদ্মা নদী শুকিয়ে মরুময় হয়ে পড়ছে।'

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন মনে করছেন, বর্ষায় নদী আগের অবস্থা ফিরে পাবে। তিনি বলেন, 'বর্ষায় পানি এলে নদীর চর তলিয়ে যাবে, পুরো নদী পানিতে পরিপূর্ণ হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Early US intel assessment suggests strikes on Iran did not destroy nuclear sites: CNN

Israeli Prime Minister Benjamin Netanyahu said Israel had agreed to Trump's ceasefire proposal

2d ago