পদ্মাসেতু থেকে ঝাঁপ দিয়ে ‘নিখোঁজ’ রিকশাচালক ৩ মাস পর থানায় হাজির
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উল্টোপথে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে অবৈধভাবে পদ্মা সেতুতে উঠেছিলেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক শরীফুল ইসলাম। পরে সেতুর নিরাপত্তাকর্মীদের ভয়ে রিকশা সেতুতে রেখেই নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হন তিনি।
গত ১৯ জুন রাতের ওই ঘটনার ৩ মাস ১০ দিন পর আজ রোববার দুপুরে পদ্মা উত্তর থানায় হাজির হন তিনি। মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) সুমন দেব দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শরীফুলের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট গ্রামে। পদ্মায় ঝাঁপ দেওয়ার পর কয়েকদিন তাকে উদ্ধারে নৌ-পুলিশ অভিযান চালালেও সে সময় খোঁজ মেলেনি তার।
জানতে চাইলে শরীফুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পদ্মায় ঝাঁপ দেওয়ার পর রাতভর নদীতে ভেসেছিলাম। নদীতে অনেক ঢেউ ছিল, কূল-কিনারা খুঁজে পাইনি। নিজের মতো করে সাঁতার কেটে ভেসেছিলাম। সকালে দূরে পাড়ে গিয়ে উঠি।'
'পরে বাসে উঠে বাড়ি যাই। বাড়ি গিয়ে ঘটনা জানালেও পরিবারের কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনি। সবাই বলছিল আমি অটোরিকশা চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছি,' বলেন তিনি।
শরীফুল আরও জানান, তিনি ঢাকার হাজারীবাগে রিকশা চালাতেন। ঘটনার রাতে পারিবারিক কলহের জেরে বাসা থেকে বের হন। উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা থেকে বাগেরহাটে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া।
তিনি বলেন, 'মুন্সিগঞ্জের মাওয়া দিয়ে রিকশা চালিয়ে পদ্মা সেতুতে উঠে পড়ি। একপর্যায়ে একটি গাড়ির সঙ্গে হালকা ধাক্কা লাগে। নিরাপত্তাকর্মীরা তখন আমাকে ধাওয়া করে। তারা গুলি করে দিতে পারে এই ভয়ে সেতুতে রিকশা রেখেই ঝাঁপ দেই নদীতে।'
থানায় কেন এলেন, জানতে চাইলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জানতে পারি যে আমার রিকশাটি থানায় আছে। এজন্য পদ্মা সেতু উত্তর থানায় এসেছি। বাড়ির লোকজন মনে করেছে যে আমি রিকশা বিক্রি করে দিয়েছি। রিকশাটি কিস্তি দিয়ে কিনেছিলাম।'
থানায় উপস্থিত শরীফুলের শ্বশুর মোহাম্মদ দাউদ মোল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা আমাদের বললেও আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ, পদ্মা নদীতে পড়ে কেউ জীবিত ফিরতে পারে বলে আমাদের ধারণা ছিল না। থানায় এসে দেখলাম তার রিকশা এখানে। এখন বিশ্বাস হচ্ছে।'
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) সুমন দেব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উল্টোপথে রিকশা চালিয়ে সেতু থেকে লাফ দেওয়া শরীফুলের সন্ধান পাওয়া গেছে। যাচাই-বাছাই করে শনাক্ত করা হয়েছে তিনিই সেতু থেকে ঝাঁপ দেওয়া শরীফুল।'
ওই ঘটনায় মাদারীপুরের শিবচর থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছিল উল্লেখ করেন তিনি।
আজ থানায় আসার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে শরীফুলকে রিকশা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে পদ্মা সেতু উত্তর থানার সহকারী উপপরিদর্শক শিউলি।
Comments