‘বলবেন ইভিএম বুঝি না, আসেন আমার ভোট দিয়া যান’ ভোটারদের ইউপি চেয়ারম্যানের পরামর্শ
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে ভোটারদের বুথে গিয়ে এজেন্টদের ডেকে ভোট দিতে সহায়তা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চন্দ্রপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান।
উপজেলা নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান উজ্জলের পক্ষে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপুকেও হুমকি দেন।
সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে গতকাল শনিবার রাতে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইউপি চেয়ারম্যান সালামের বক্তব্যের ৪ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছে।
ভিডিওতে আব্দুস সালামকে ভোটারদের উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়, 'ভোট হবে ইভিএমে। পরিষ্কার কথা ভাই দলে ঢুকে কেউ চালাকি করবেন না। আপনারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন, বুথ থাকুক। বলবেন এইয়া বুঝি না। ইভিএমে কখনো ভোট দেই নাই। আপনি আসেন আমার ভোট দিয়া যান। এই কথা আপনি ভেতরে বইসা বলবেন। আমার এজেন্ট শুনব। আমি ভোট দেব ঘোড়া মার্কায়, ভোট দেব তালা মার্কায়, ভোট দেব ফুটবল মার্কায়। পারবেন? যে এইডা বলতে না পারবেন সে সন্দেহের তালিকায়। যে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে না যাইবেন, সেও সন্দেহের তালিকায়।'
চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপুকে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়, '৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ওকে (দিপু) শূন্য ভোট দিতে হইব। ও ভোট দিতেও যেন আইতে না পারে। এই ব্যবস্থা করতে পারবেন?'
'আর দিপু যদি আমাদের চন্দ্রপুর ঢোকে। ওরা যদি চন্দ্রপুরে ভোট চাইতে আসে, ওগো দৌড়াইতে পারুম না? দৌড়াইতে পারবেন না? কালকে দিপুর বউ ভোট চাইতে আইছিল, অগো দৌড়াইয়া দিছে। আজ থেকে ওরা যাতে চন্দ্রপুরে ভোট চাইতে না আইতে পারে। পারবেন? কোনো হুমকি-ধমকি মারবেন না। সামনা-সামনি মারবেন। স্পষ্ট কথা, দুই কুল রক্ষা কইরা চলবেন না। তলে-তলে খাতির রাইখেন না। ওদের সাথে কারা ভোট চাইতে যান তা খবর পাই। তলে তলে খাতির রাখলে দিপুর মাইরও খাইবেন, আমাদের মাইরও খাইবেন,' বলেন ইউপি চেয়ারম্যান সালাম।
এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুস সালাম খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্বাচনী সভায় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা বলেছি। ইভিএমএ কীভাবে ভোট দিতে হবে, সে বিষয়ে ধারণা দিয়েছি।'
হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কাউকে কোনো হুমকি দেইনি। আর দিপু নিজেই আমার বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা বলতাছে। দিপুই বরং আমাকে হুমকি দিচ্ছেন। আমার নামে যেসব ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে সেগুলো এডিট করা।'
এই ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান উজ্জল, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তালা প্রতীকের সাখাওয়াত হোসেন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ফুটবল প্রতীকের সামিনা ইয়াসমিনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান উজ্জল বলেন, 'আমি ওই সভার ভিডিওর ব্যাপারে কিছু জানি না। আর আমার সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, এমন কিছু বলবেন না বা এমন কোন কাজ করবেন না যাতে আমাদের সম্মানহানি হয়। অন্য প্রার্থীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেই আমাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে হবে।'
যোগাযোগ করা হলে চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন দিপু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয় সংসদ সদস্যর ইঙ্গিতে তার লোকজন আমাকে নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে, প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। আমি রিটার্নিং অফিসার ও থানায় কয়েকবার অভিযোগ দিয়েছি। প্রতিকার পাচ্ছি না, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।'
জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইনউদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার সময় ভোটারদের ও কোনো প্রার্থীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আমরা পাইনি। কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, 'অভিযোগের সত্যতা পেলে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ এনে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাচন আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
Comments