নারায়ণগঞ্জ

‘একটা গাছও রাখা সম্ভব না’ বললেন বিআইডব্লিউটিএর প্রকল্প পরিচালক

গাছ না কেটে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সংস্কৃতিকর্মী ও পরিবেশবাদীরা বলেন, গাছ কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে।
বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে গাছ কাটা প্রসঙ্গে অংশীদারদের নিয়ে ‘পরামর্শমূলক সভায়’ কথা বলেন ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল ওয়াটারওয়ে ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট-১’ এর প্রকল্প পরিচালক বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আইয়ুব আলী। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জ শহরে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৮১টি গাছ কাটার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানকার ৪৩টি গাছ কাটা হয়েছে। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত প্রতিবেশগতভাবে সংকটপূর্ণ এলাকা শীতলক্ষ্যা পাড়ে গাছ কাটা নিয়ে স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী ও পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদ জানালে 'একটা গাছও রাখা সম্ভব না' বলে জানিয়েছেন এ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) বিআইডব্লিউটিএ'র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আইয়ুব আলী।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে গাছ কাটা প্রসঙ্গে অংশীদারদের নিয়ে এক 'পরামর্শমূলক সভায়' তিনি এ কথা বলেন।

তবে, গাছ না কেটে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সভায় উপস্থিত সংস্কৃতিকর্মী ও পরিবেশবাদীরা বলেন, গাছ কাটার বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন চলবে।

সভায় বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, শীতলক্ষ্যা পাড়ের গাছ রক্ষায় নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সদস্য তরিকুল সুজন, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

তবে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের কোনো প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত ছিলেন না। তাদের চিঠি দেওয়া হলেও, কেউ আসেননি বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা।

সভায় প্রকল্প পরিচালক আইয়ুব আলী জানান, 'বাংলাদেশ রিজিওনাল ওয়াটারওয়ে ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট-১' এর আওতায় শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের ভবনের পাশে ২৯০ মিটার জায়গা জুড়ে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। 

সেখানে নতুন চারতলা টার্মিনাল ভবন ও পার্কিং প্লেস নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পের অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক।

তিনি বলেন, 'প্রকল্পের স্বার্থে ৮১টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য বন ও পরিবেশ বিভাগ থেকে নিয়ম মেনে ছাড়পত্রও পেয়েছি। গাছ কাটার কারণে স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী ও পরিবেশ নিয়ে কনসার্ন লোকজন প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ কারণে প্রকল্পের কাজ করা যাচ্ছে না। যেহেতু এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করছে, তাই তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি পরামর্শমূলক সভা আয়োজন করা হয়েছে।'

সভায় গাছ কাটা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা গাছ না কেটে প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানালে প্রকল্প পরিচালক বলেন, 'একটা গাছও রাখা সম্ভব না। প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে হলে গাছগুলো কাটতে হবে। বিকল্প উপায় আমাদের হাতে নেই। থাকলে তেমনটাই করা হতো।'

এ সময় সংস্কৃতিকর্মী ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, 'কয়েকটা গাছ কাটার পর যখন আন্দোলন চলছিল তখন আপনারা কেউ কোনো পাত্তা দেননি। এখন বিশ্বব্যাংকের কথায় গাছ কাটার পর জনআপত্তি নিষ্পত্তির জন্য সভা ডেকেছেন।'

তরিকুল সুজন বলেন, 'আমরা কোনো প্রকল্পে বাধা দেইনি। আমাদের দাবি ছিল গাছগুলোকে রক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়নের। উন্নত অনেক দেশে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ চাইলে গাছগুলো না কেটে নকশা পরিবর্তন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে পারব। চাইলে পুরোনো ভবনটিকে ভেঙেও নতুন ভবন করা যেত। আপনারা সে পথে হাঁটেননি, যা দুঃখজনক।'

গাছ কাটার বিরুদ্ধে আগামীতেও আন্দোলন চলবে জানিয়ে ভবানী শংকর রায় বলেন, 'শীতলক্ষ্যাপাড়ে এখনো যেসব গাছ রয়েছে তা রক্ষার দায়িত্ব শুধু আমাদের নয়, বিআইডব্লিউটিএরও। ওই গাছগুলো কাটতে গেলে আমরা আবারও বাধা দেব।'

শীতলক্ষ্যাপাড়ে অন্তত ৫০০ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা আছে জানিয়ে বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আইয়ুব বলেন, 'বর্ষা মৌসুমে আপনাদের পরামর্শ অনুযায়ী স্থান নির্বাচন করে গাছগুলো লাগানো হবে। প্রয়োজনে একটার জায়গায় আমরা ১০টা গাছ লাগাব।'

গাছ লাগানো প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল হোসেন বলেন, 'গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক পরিবেশ বিবেচনায় রেখে গাছ লাগাতে হবে। অধিকাংশক্ষেত্রে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হাইব্রিড গাছের চারা কিনে আনে, যা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খায় না। তাছাড়া, গাছ লাগানোর পর সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দিকেও নজর দিতে হবে।'

একদিকে বিআইডব্লিউটিএ'র কর্মকর্তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে 'গাছ কাটার বিকল্প' না থাকার সিদ্ধান্ত এবং পরিবেশবাদীদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতার মধ্য দিয়েই শেষ হয় সভা।

প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।

উল্লেখ্য, গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে শীতলক্ষ্যা পাড়ের গাছ কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন স্থানীয়রা। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে মানববন্ধন, সমাবেশ, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

Comments