গরমে স্বস্তি মাটির ঘরে

গ্রামে মাটির বাড়ি। স্টার ফাইল ছবি

চলমান তাপদাহে যখন মানুষ কংক্রিটে আচ্ছাদিত শহরে একটু স্বস্তি খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন দিনাজপুরসহ আশপাশের জেলার গ্রামাঞ্চলে মাটির ঘরে থাকা লোকজন অনেকটাই আরামে আছেন।

বাইরে তীব্র গরম থাকলেও মাটির ঘরের ভেতরটা তুলনামূলক ঠান্ডা থাকে। এমনকি মাটির ঘরে ফ্যান ছাড়া থকতেও তেমন অস্বস্তি হয় না।

দিনাজপুর সদর উপজেলার নশিপুর গ্রামের একটি মাটির ঘরের বাসিন্দা রবি মার্ডি জানান, দিনে খানিকটা গরম হলেও রাতে তাদের ঘরে তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়। তাই তীব্র তাপপ্রবাহ ও ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটেও তারা অন্যদের চেয়ে ভালো আছেন।

দিনাজপুর পৌরসভা এলাকার মির্জাপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বপ্না মার্ডি জানান, ৩৯ বছর আগে দুই শতক জমির ওপর তাদের চার কক্ষের মাটির বাড়ি তৈরি করা হয়।

তিনি বলেন, 'গ্রীষ্ম বা শীত যাই হোক না কেন, এসব ঘরে যেকোনো আবহাওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা যায়।'

এক সময় গ্রামাঞ্চলে ধনী-দরিদ্র সবার কাছেই জনপ্রিয় ছিল মাটির বাড়ি। এখন মানুষ ইটের তৈরি বাড়ির দিকে ঝুঁকে পড়ায় দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব এই বাড়ি। এখন শুধু দরিদ্রদের মাটির বাড়িতে থাকতে দেখা যায়।

দিনাজপুরের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষজন মনে করেন, মাটির ঘর তাদের রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের অংশ। তবে ২০১৭ সালে বন্যায় মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তারাও ঝুঁকে পড়েছেন আধা-পাকা ইটের বাড়ির দিকে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ইঁদুর ও উইপোকার আক্রমণ, কাঁচামাল না পাওয়া, অভিজ্ঞ শ্রমিক না পাওয়াসহ নানা কারণে মাটির ঘরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে জানান মির্জাপুর গ্রামের স্বপ্না মার্ডি।

তিনি বলেন, 'এখন আমাদের গ্রামে মাটির ঘর আছে মাত্র তিনটি। অথচ দুই দশক আগে এই সংখ্যা ছিল ২০ থেকে ২৫টি।'

দিনাজপুরের বিরল, ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ, কাহারোল ও বীরগঞ্জ উপজেলায় এখনও কিছু মাটির বাড়ি দেখা যায়। এসব বাড়িতে টিনের ছাউনি ব্যবহার করা হয়। আগের ঘরগুলোতে টিনের কোনো ব্যবহার ছিল না। আগে ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করা হতো খড়। তবে স্থায়িত্ব কম হওয়ায় পরে টিন জনপ্রিয় হয়।

'খড় দিয়ে চালা তৈরি করা হলে মাটির তৈরি ঘর সম্পূর্ণ ঠান্ডা থাকবে। কিন্তু আজকাল মানুষ এটা ব্যবহার করছে না। কারণ এর পানি ভেতরে ঢুকে যায়', বলছিলেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার নিকোলাস সরেন।

একই উপজেলার তরপনঘাট এলাকার জহরুল ইসলাম বলেন, 'গ্রামের মাটির ঘরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে প্রতি বছর। মূলত স্থায়িত্বের সমস্যার জন্য। এখন মানুষ ইটের ঘরের দিকে ঝুঁকছে।

'তবে মাটির ঘরে স্বস্তি আছে', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Four reform commission chiefs submit reports to Yunus

They submitted the reports to Yunus at the chief adviser's office in Dhaka's Tejgaon around 11:30am

2h ago